সংঘর্ষের পর বন্ধ খেয়াঘাট ভোগান্তিতে যাত্রীরা

Sadek Ali
আশিকুর রহমান, নরসিংদী
প্রকাশিত: ২:৪৯ অপরাহ্ন, ১২ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২:৪৯ অপরাহ্ন, ১২ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নরসিংদীর চরদিঘলদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের মেঘনার তীরবর্তী মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা শতবছরে ঐহিত্যবাহী "রসুলপুর-জিতরামপুর-শান্তিপুর" খেয়াঘাট। আর এই খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন নরসিংদী সদর উপজেলার দূর্গম চরাঞ্চল চরদিঘলদী ইউনিয়ন এবং পাশ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছরামপুরা উপজেলার বেশকয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ সহ বিভিন্ন গন্তব্যে সহজে যাতায়াত করে থাকেন। বিশেষ করে এই খেয়াঘাট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছরামপুর ও চরদিঘলদীর সাথে নরসিংদী সদরকে করে তুলেছে এক সেতুবন্ধন। কিন্তু  অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় খেয়াঘাটটি। এতে বিপাকে পড়েন নিয়মিত দুই পারের কয়েকহাজার যাত্রী। 

সরজমিনে গিয়ে দেখ যায়, জিতরামপুর ও টিটিরচর গ্রামের বাসিন্দারা আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। ঝগড়া শেষ হলেও আহতদের ক্ষত এখনও পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। উভয়পক্ষের আহতরা ক্ষত নিয়ে কেও বিছানায় আবার কেও বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনই একজন আহতের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। ভাড়া ৪ টাকার স্থলে অতিরিক্ত ২০ টাকা আদায় করছে। এটা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য ছিল। তাদেরকে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা এর বিচার চাই। অপরদিকে খেয়া পারাপার বন্ধ ও দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাকে পুঁজি করে শান্তিপুর গ্রামের কয়েকজন মাঝি ডিঙি নৌকা নিয়ে যাত্রী পারাপার করছেন। তারা পারাপারে জনপ্রতি ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা সরকারিভাবে ডাক আনি নাই। যাদের প্রয়োজন তারাই বেশি টাকা দিয়ে নদী পার হচ্ছেন। এদিকে দুই গ্রুপের সংঘাত শেষ হলেও এলাকাজুড়ে আতংক বিরাজ করছে। যেকোন সময় আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটনা ঘটে পারে বলে অনেকে আশংকা করছেন।

আরও পড়ুন: গাজীপুর-৬ আসন বহাল রাখার দাবিতে টঙ্গীতে সড়ক অবরোধ

স্থানীয় ও জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন/২৬ পর্যন্ত শর্ত অনুযায়ী "রসুলপুর-জিতরামপুর-শান্তিপুর" খেয়াঘাটের খেয়া পারাপারে জন্য  জনপ্রতি ৪ টাকা নির্ধারণে ইজারা পান স্থানীয় রসুলপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম (সেন্টু)। পরে তিনি ওই খেয়াঘাটটি চরদিঘলদী ইউনিয়নের জিতরামপুর গ্রামের বাসিন্দা চাঁনমিয়ার নিকট মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। চাঁনমিয়া ফাঁড়ি ইজারাদার হয়ে যাত্রী পারাপারে ৪ টাকার স্থলে অতিরিক্ত ২০ টাকা আদায় করেন। এনিয়ে যাত্রীদের মাঝে দেখা দেয় অসন্তোষ। ফলে গত মাসে শহিদ মেম্বার সমর্থক ওহাব মিয়া (৭০) এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে চাঁনমিয়া ও তার লোকজনেরা পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে। পরে ওহাব মিয়া রাজধানীর একটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ী ফিরে এলে গত ৪ ও ৮ নভেম্বর দুইদফা উভয়পক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে কমপক্ষে ১৮ জন আহত হয়। এনিয়ে পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রশাসনের টনক নড়ে। পরে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওহাব রাশেদ তাত্ক্ষণিক খেয়াঘাটের ইজারা বাতিল করেন।

জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী নূর-ই-ইলহাম খেয়াঘাটের ইজারা বাতিলের বিষয়ে বলেন, রসুলপুর-জিতরামপুর-শান্তিপুর খেয়াঘাটের ইজারাদার শফিকুল ইসলামকে (সেন্টু) ইজারা বাতিলের বিষয়ে অবগত করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন,  ইজারার শর্ত অনুযায়ী খেয়া পারাপারে জন প্রতি ৪ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তিনি জনপ্রতি ২০ টাকা আদায় করেন এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা পরিষদের তদন্তে তা সত্যতা পাওয়া যায়। যা শর্তের পরিপন্থি। নির্ধারিত মাশুলের চেয়ে অতিরিক্ত হারে মাশুল আদায় করার জন্য তার ইজারা বাতিল করা হয়।

আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টাকে হত্যার হুমকি, ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, জেলা পরিষদ কর্তৃক খেয়া পারাপারের ইজারার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও তারা গত কয়েক মাস ধরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ  দিলেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

জিতরামপুরের মাসুম মিয়া বলেন, বাঞ্ছরামপুর, শান্তিপুর, জিতরামপুর, চরদিঘলদী, টিটিরচর বাসীর নরসিংদীতে যাতায়াতের একমাত্র সহজ পথ হচ্ছে এই খেয়াঘাট। এই পথ দিয়ে প্রতিদিন ছাত্র-ছাত্রী সহ বিভিন্ন পেশার কয়েকশ লোক যাতায়াত করে থাকেন। ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর খেয়াঘাট বন্ধ রয়েছে। একে পুঁজি করে কিছু নৌকার মাঝি যাত্রীদেরকে জিম্মি করে রেখেছেন। 

টিটিচরের বাসিন্দা আক্তার মিয়া বলেন, নদী পারের মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রুত খেয়াঘাটটি পুণরায় চালু করার দাবি জানাচ্ছি।  

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওহাব রাশেদ মুঠোফোনে প্রতিনিধিকে জানান, খেয়া পারাপারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে দু'পক্ষের সংঘর্ষ হয়। আগের ইজারাদার শফিকুল ইসলাম (সেন্টু) অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে তদন্তে সঠিক তথ্য প্রমাণাদি পাওয়ায় জেলা পরিষদ খেয়াঘাটের ইজারা বাতিল করেন। অলরেডি আমরা নতুন ইজারাদার নিয়োগে ওই এলাকায় মাইকিং করেছি। আশাকরি অল্পসময়ের মধ্যে ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, জেলা পরিষদের লোকবল কম হওয়ায় আপাতত সেখানে জেলা পরিষদের মাধ্যমে খেয়া পারাপার সম্ভব হচ্ছে না।