হাদীর উপর হামলাকারী কারা

সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চিহ্নিতর চেষ্টা করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

Sanchoy Biswas
মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব
প্রকাশিত: ৮:২২ অপরাহ্ন, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৮:৪৭ অপরাহ্ন, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রাজধানী ঢাকায় দিনদুপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদীকে দুর্বৃত্তদের গুলিবর্ষণের ঘটনায় নির্বাচনী পরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। হাদীর উপর গুলি বর্ষণকারী কারা তাদের চিহ্নিত করতে মাঠে নেমেছে সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হাদীর অনুসারী সমর্থকরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নানামুখী স্লোগান দিলেও গোয়েন্দারা এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিকে মাথায় রেখে তদন্ত শুরু করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা তাৎক্ষণিকভাবে সর্বশক্তি দিয়ে হাদীর উপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও এ ঘটনা তীব্র নিন্দা করে দুষ্কৃতিকারীদের বিচারের দাবি করেছেন। গোয়েন্দারা এই ঘটনাটি কোনো সাধারণ নির্বাচনী সংঘাত হিসেবে দেখছেন না।

আরও পড়ুন: ভিডিও ফুটেজ দেখে হাদীর ওপর হামলাকারী দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারে কাজ করছে পুলিশ

পাঁচ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ওসমান হাদীর ভূমিকা বিশেষ করে ইনকিলাব মঞ্চ পলাতক স্বৈরাচারীর বিচার ও তার দোসরদের বিচারে সক্রিয় আন্দোলন পরিচালনা করেছে। আন্দোলনের মাঠ থেকেই হাদীর ইনকিলাব মঞ্চের উত্থান। গত কয়েকদিনে ভারতীয় অন্তত ত্রিশটি নাম্বার থেকে হাদীর মোবাইলে ফোন দিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছিল। তার পরিবার ও পারিবারিক বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিজয়নগর কালবাট রোডে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন প্রচারণার সময় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদী। দুর্বৃত্তরা তাকে কাছে থেকে টার্গেট করে মাথায় একটি গুলি করে পালিয়ে যায়। দুর্বৃত্তদের এ ধরনের টার্গেটেড গুলির ধরন তদন্তে গুরুত্ব পেয়েছে।

আরও পড়ুন: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দুটি জরুরি নির্দেশনা

এরই মধ্যে লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনান সাহেব এই বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। দেশের ভিতরে বিভিন্নভাবে ঢুকে পড়া দুর্বৃত্তদের তুলে ধরা হয়েছে।

স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা গত কয়েক মাসে অন্তত ৮০ জন সুব্রত বায়নের মতো আততায়ীকে দেশের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করিয়েছে। আন্ডারওয়ার্ল্ড, কুষ্টিয়া-মেহেরপুর অঞ্চলের চরমপন্থি গ্রুপ এক হয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নেতা, এলাকার জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের টার্গেট করে হত্যা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যিনি সুব্রত বায়নের হ্যান্ডলার ছিলেন, জামিনে থাকা পিচ্চি হেলাল ও চরমপন্থি গ্রুপ গণমুক্তি ফৌজের প্রধান মুকুল সম্প্রতি টেলিফোন কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে। সুব্রত বায়েন কারাগার থেকে তার মেয়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে পিচ্চি হেলাল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পলাতক মুকুলের সাথে কথা বলেছে। পরবর্তীতে সুব্রত বাইনের মেয়ে সিনথিয়া বিতু নেপালে পলাতক বিডিআর মামলার আসামি লেদার লিটন, পিচ্চি হেলাল, মুকুল, বড় সাঈদ ও দিপুর সাথে যোগাযোগ করেছে।

নির্বাচন বানচাল এবং দেশকে চরম অস্থিতিশীল করতে বিশেষ গোষ্ঠী সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে। একতাবদ্ধ থেকে এদের মোকাবেলা করাই একমাত্র উপায়। প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনান সাহেব তাদের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেছেন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে।

২৪-এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া জনপ্রিয় উসমান হাদীর উপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় অনেকেই আবেগে আপ্লুত। তার সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিলেও গোয়েন্দারা কিছু ভিডিও ফুটেজ ও হাদীর কয়েক দিনের কর্মকাণ্ড যাচাই-বাছাই করছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র, উপ-পুলিশ কমিশনার তালেবুর রহমান এক লিখিত বার্তায় জানান: শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর আনুমানিক ০২.২৫ ঘটিকার সময় রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী কয়েকজন দুর্বৃত্ত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদীকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এই ন্যক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে জড়িতদের সনাক্ত ও গ্রেফতারে আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও স্থানসমূহে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ঘটনার মতো এই ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনাতেও জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে, ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে তা নিকটস্থ থানা অথবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে পুলিশকে অবহিত করার জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখা এবং নগরবাসীর জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করছে।

এদিকে সরকারের এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সূত্র জানায়, তাদের তিনটি টিম দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে ধরতে কাজ করছে। র‌্যাবের মুখপাত্র, মিডিয়া পরিচালক উইন কমান্ডার এ জেড এম ইন্তেকাব চৌধুরী জানান, এটি একটি টার্গেটেড কিলিংয়ের মত বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এতে দেশের নির্বাচন পরিবেশের ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই। র‌্যাবের বিশেষায়িত তিনটি টিম দুর্বৃত্তদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। পুলিশের তদন্তের পাশাপাশি তারা সেডো ও অপারেশন পরিচালনা করছে। আশা করা যায় খুব দ্রুতই দুর্বৃত্তদের আটক করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।