কে হচ্ছেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী

Monzu
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৮:৪০ অপরাহ্ন, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫ | আপডেট: ৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী ( রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত) গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ আজ (৩১ জানুয়ারি) অবসর পূর্ব ছুটিতে গেছেন। চাকরির মেয়াদ সম্প্রসারণ না করায় গত বৃহস্পতিবার ছিল তার শেষ কর্মদিবস। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রধান প্রকৌশলী। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে জেষ্ঠ্যতা অনুযায়ী ৫ জনের তালিকা প্রস্তত করে উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত তিনি কোন সিদ্ধান্ত দেননি।  গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ আওয়ামী পন্থী হওয়ায় তাকে পুরোপুরি প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি কেবল রুটিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আওয়ামীপন্থী হলেও সৎ ও যোগ্য অফিসার হওয়ায় তিনি শান্তিপূর্ণভাবে মেয়াদ শেষ করেছেন। তবে তার মেয়াদে প্রকৌশল অধিদফতর পরিচালনা করছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রশাসন মাহবুবুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী প্রশাসন মোঃ আবু হানিফ মৃধা ও সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী প্রশাসন মোঃ শফিকুল ইসলাম। প্রধান প্রকৌশলী যেহেতু ফ্যাসিবাদী শক্তির সমর্থক ছিলেন এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সকল নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করেছেন তিনজনের এ সিন্ডিকেট। জানা গেছে তারা ১১২ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে পদোন্নতি ছাড়া চলতি দায়িত্বে সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা চলতি দায়িত্বে ৯ম গ্রেডের কর্মকতা হলেও আইন লঙ্ঘন করে তাদের অনেককে ৬ষ্ঠ গ্রেডের প্রকৌশলীর পদে বসিয়েছেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। বিষয়টি নিয়ে এলজিইডিতে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অতীতে কখনও এভাবে আইন লঙ্ঘন করা হয়নি। জানা গেছে এ প্রভাবশালী সিন্ডিকেটটি জেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে জুনিয়র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান প্রকৌশলী বানাতে মাঠে নেমেছেন।

জানা গেছে বেশ কয়েক বছর যাবত জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ক্রমানুসারে পদোন্নতি ও পদায়ন হয়েছে । তবে পটপরিবর্তনের কারণে এবার কী হয় বলা দুরূহ। এ নিয়ে নানামুখী সরব আলোচনা আছে সংশ্লিষ্ট মহলে। কিন্তু আলোচনা যা-ই থাকুক না কেন, দিন শেষে স্থানীয় সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথের পর ক্রমানুসারে আছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ মুজাক্কা জাহের। যত দূর জানা যায়, তিনি অত্যন্ত চৌকশ কর্মকর্তা।  তিনি যদি প্রধান প্রকৌশলী পদে পদায়িত হন, তাহলে তার চাকরির মেয়াদকাল হবে ১০ দিন। সেই হিসাব অনুযায়ী তিনি অবসর-পূর্ব ছুটিতে যাবেন (পিআরএল) ২০২৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। তিনি একমাত্র গ্রেড-২ এর কর্মকর্তা। 

আরও পড়ুন: একটি বিশেষ দল গণতান্ত্রিক চর্চাকে ব্যাহত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে : ডা. রফিক

ক্রমানুসারে এর পরের অবস্থানে আছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকশৌলী কে এম জুলফিকার আলী। তিনি ডানপন্থী বলে পরিচিত থাকায় বিগত আওয়ামী সরকারের সময় ভালো পোস্টিং পাননি। সেজন্য বেশিরভাগ সময় তাকে ঢাকার বাহিরে কাজ করতে হয়েছে।  তিনি পদোন্নতি পেলে তার কার্যাকাল হবে মাত্র ৯ দিন। সে অনুযায়ী তার অবসর-পূর্ব ছুটিতে যাওয়ার কথা ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। তিনিও গ্রেড-২ এর কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব)।

তৃতীয় অবস্থানে আছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী  এনামুল হক। তিনি যদি পদোন্নতি পান, তাহলে তার কার্যকাল হবে প্রায় ৪ মাস। হিসাব অনুযায়ী তিনি অবসর-পূর্ব ছুটিতে যাবেন ২০২৫ সালের ১৯ জুন। তার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের সঙ্গে নানাভাবে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনিক কাজে তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে সব মহলেই প্রশ্ন আছে।

আরও পড়ুন: গুমের শিকার ৭ পরিবারের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করল বিএনপি

চুতর্থ অবস্থানে রয়েছে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ মিয়ার নাম। তিনি যদি পদোন্নতি পান, তাহলে তার কার্যকাল হবে প্রায় ১ বছর। তিনি অবসর-পূর্ব ছুটিতে যাবেন ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট। তিনি একজন দক্ষ ও কর্মঠ কর্মকর্তা। প্রশাসনিক কাজে তার দক্ষতা সর্বজনবিদিত। তিনি তিন বছরের অধিককাল সদর দপ্তরে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) হিসেবে সুনামের সঙ্গে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অধিষ্ঠিত হন।

পঞ্চম অবস্থানে আছেন সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাবেদ করিম। তিনি বিএনপি সমর্থিত হওয়ায় ১/১১ এর সময় নিপীড়ণের শিকার হয়েছিলেন। 

জানা গেছে এখন পর্যন্ত প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ মিয়ার নাম । ক্রম ভেঙে তিনজনকে ডিঙিয়ে শেষমেশ যদি প্রধান প্রকৌশলী হয়েই যান, তাহলে এলজিইডির ইতিহাসে তা হবে নজিরবিহীন। এলজিইডিতে কর্মরত কর্মকতারা চান জেষ্ঠতা অনুযায়ী যেন প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়া হয়।