আটক অর্ধশত
পুলিশী বাধায় বরিশালে শিক্ষার্থীদের 'মার্চ ফর জাস্টিস' আন্দোলন পন্ড

দেশব্যাপী কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় বরিশালেও মার্চ ফর জাস্টিস আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ৩১ জুলাই বুধবার সকাল এগারোটায় বরিশালের অশ্বিনী কুমার টাউনহলের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে যাওয়ার চেষ্টা করতেই পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে পরেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। পরে ঘুরপথে কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটা অংশ বাসদ নেত্রী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে জেলা দায়রা জজ আদালতের প্রবেশপথ আটকে সড়কে বসে পরেন। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নারী হবার কারণে পুলিশের নারী লাঠিয়াল বাহিনী এসে তাদের উপর এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ ও টানাহেঁচড়া করে কয়েকজনকে প্রীজনভ্যানে তুলে নেয়া হয়। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন এবং প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীকে আটক করার দাবি করা হয়েছে।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোটা আন্দোলনকারীদের বিশৃংখলা ঠেকাতে মৃদু লাঠিচার্জ করা হয়েছে ও কয়েকজন আটক হয়েছে ।
আরও পড়ুন: চাঁদাবাজি নয়, নেপথ্যে নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণ কাহিনী
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত মৌসুমী বলেন, আজ বুধবার বেলা ১১ টার দিকে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ভাবে ‘মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচী’ নিয়ে বরিশাল আদালত প্রাঙ্গনে যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। এ সময় পুলিশের ধাওয়ার মুখে তারা প্রথমে অশ্বিনী কুমার টাউনহলের সামনে এসে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ সেখানেও তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে লাঠিচার্জ করে তাদেরকে সেখান থেকে হটিয়ে দেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে কোটা আন্দোলনকারীরা কাকলীর মোড় এলাকা হয়ে আদালতের সম্মুখে অবস্থান নেয়। পুলিশকে তারা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে এটা তাদের শান্তিপূর্ন কর্মসূচী। এখানে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। তাদেরকে কর্মসূচী পালনের সুযোগ দিতে বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ তাদের কোন ধরনের অনুরোধ না শুনে মহিলা পুলিশ দিয়ে বেদম লাঠিপেটা করে। এতে তাদের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। অর্ধশত শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার দাবি করেন এ শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন: আশুলিয়ায় বকেয়া বেতনের দাবিতে দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ
আন্দোলনের সাথে একাত্মত্তা প্রকাশ করা বাসদ এর জেলা সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী বলেন, কোটা আন্দোলনের একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করছিল। কিন্তু পুলিশ সেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে বেদড়ক লাঠিচার্জ করায় শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এমনকি সেখান থেকে অর্ধশত শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অনতিবিলম্বে শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেয়ার দাবি জানান।
এসময় ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট অং চং মারমার সাথে যোগাযোগ করে তাকে এই আন্দোলনে বাধা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, কারফিউ চলাকালীন কোনো আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা যায় না। তাই বাধা দেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষক বিপ্লব দাস বলেন, আমাদের সন্তানের ডাকে ‘মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচী’তে অংশ আমরা শিক্ষকরাও অংশ নিয়েছি। কিন্তু সেখানেও পুলিশের লাঠিচার্জে বিপুল সংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে এ ধরনের আচরন কোন সময় আমাদের কাম্য নয় বলে জানান তিনি ।
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) তানভির আরাফাত বলেন, কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করে। এমনকি গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। এ বিশৃংখলা ঠেকাতে মৃদ্যু লাঠিচার্জ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পরবর্তীতে কোটা আন্দোলনে আটককৃতদের মধ্যে অনুর্ধ ১৮ বয়সের শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে কি ব্যবস্থা জানতে চাইলে বরিশালের পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে যাদের বয়স ১৮ বছরের নীচে তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করে ছেড়ে দেয়া হবে।
এসময় পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, পুলিশী অনুসন্ধান ও তল্লাশীতে সাধারণ মানুষের ভয়ের কিছু নেই। আমরা শুধু সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে যাদেরকে সম্পৃক্ত ও দোষী মনে করছি তাদেরকেই ধরা হচ্ছে। দোষী প্রমাণিত না হলে তাকে সসম্মানে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান জিহাদুল কবির।