কমিউনিটি ভিত্তিক স্বপ্ন কী টিকে থাকবে

টাঙ্গুয়ার হাওরে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প

Sanchoy Biswas
আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: ৬:৪৬ অপরাহ্ন, ২৯ মে ২০২৫ | আপডেট: ৬:০৪ অপরাহ্ন, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিস্তৃত জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। জীববৈচিত্র্যের এক অপূর্ব আধার এই হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে, তেমনি এর জীববৈচিত্র্য ও সম্পদের উপর নির্ভর করে প্রায় ৪০ হাজার স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকা।

এ বাস্তবতায় গত ১৩ মে ঢাকায় 'কমিউনিটি-ভিত্তিক টাঙ্গুয়ার হাওর জলাভূমি ব্যবস্থাপনা' শীর্ষক একটি নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪.০৫ মিলিয়ন ডলার। যা টাকার অঙ্কে দাঁড়ায়  প্রায় ৫০ কোটি টাকা। 

আরও পড়ুন: মাধবপুরে র‍্যাবের অভিযানে ৫৩ কেজি গাঁজাসহ দুই ব্যবসায়ী আটক

প্রকল্পের অর্থায়ন করছে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ)। বাস্তবায়ন করবে পরিবেশ অধিদপ্তর, তত্ত্বাবধানে থাকছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।

প্রকল্পের লক্ষ্য টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাভূমি ও বাস্তুতন্ত্রের টেকসই ব্যবস্থাপনা, বন ও জলজ পরিবেশ পুনরুদ্ধার এবং স্থানীয় জনগণের জন্য পরিবেশবান্ধব জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি করা। যার প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ১,৫০০ হেক্টরের বেশি বন ও জলজ বাসস্থান পুনরুদ্ধার, জীববৈচিত্র্য অভয়ারণ্য স্থাপন, নারী-সহনশীল মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজ সহায়তা, জলাভূমি-ভিত্তিক কৃষি ও মাছচাষ এবং দায়িত্বশীল পর্যটনের প্রসার।

আরও পড়ুন: কলাপাড়ায় অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৮ হাজার মিটার জাল জব্দ, আটক ২৬

যদিও প্রকল্পে 'কমিউনিটি-ভিত্তিক' ব্যবস্থাপনার কথা জোর দিয়ে বলা হচ্ছে কিন্তু মাঠপর্যায়ে স্থানীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার রূপরেখা এখনো অস্পষ্ট।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, ‘প্রতিটি প্রকল্পে স্থানীয়দের কথা বলা হয়, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমাদের জায়গা কোথায়? এই প্রকল্পে বলা হয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওরে ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষ সুবিধাভোগী হবে। কিন্তু এই টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রামই আছে ৪১ টি। তাহলে এটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে। সেজন্য তারা যে রূপরেখা দিয়েছেন কমিউনিটি ভিত্তিক সেটি এখনো অস্পষ্ট।’

এখানে হতাশার কারণও আছে। গত দুই দশকে টাঙ্গুয়ার হাওরে বাস্তবায়িত হয়েছে একাধিক প্রকল্প। কিন্তু অধিকাংশই কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত। সেখানে স্থানীয় বাস্তবতা ও মানুষের জ্ঞান উপেক্ষা করে বাস্তবায়ন হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। 

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো রামসার নীতিমালা বাস্তবায়নের কথা বলে সংরক্ষণ করা হলেও সংরক্ষিতকালে প্রথমে আঘাত করা হয়েছে স্থানীয়দের জীবিকার উপর। তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না করে জীবিকার উপর আঘাত করা হয়েছে। এই সুযোগে প্রশাসন ও বেসরকারি সংগঠনের মাধ্যমে একটি মধ্যস্বত্বভোগী গড়ে ওঠে। যারা সংরক্ষণকারীদের ঘুষ দিয়ে হাওর বিরান করেছে।’

‘নতুন করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হলে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে। হাওরের বিভিন্ন পকেটে নতুন করে জনবসতি গড়ে উঠেছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেও কাজ করতে হবে। কারণ অধিক জনসংখ্যার কারণে হাওরে নানা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে,’ বলেন তিনি।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্য সচিব আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘প্রকল্পে যে লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো যথাযথ কিন্তু বাস্তবায়ন হবে কতটুকু? এই টাঙ্গুয়ার হাওরকে নিয়ে অনেক প্রকল্প এসেছে কাজ করেছে কিন্তু ফলাফল তেমন কিছুই আসেনি। সেজন্য আমি চাইব এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সঠিক মনিটরিং এবং এই কাজের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তারা ও স্থানীয়রা যেন মন থেকে আগ্রহী হতে হবে এবং কাজে স্বচ্ছতা থাকতে হবে, তা না হলে প্রকল্প আসবে টাকাও আসবে কাজের কাজ কিছুই হবে না।’

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘এই প্রকল্প সম্পর্কে আমি তেমন বিস্তারিত কিছু জানি না। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং তাদের এটি নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। শুনেছি তারা সুনামগঞ্জ এবং তাহিরপুরে এই প্রকল্প নিয়ে কর্মশালা করবেন তখন হয়তো বুঝতে পারবো।’