জুলাই আন্দোলনে হামলাকারী ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তা সুকেশ কুমার বহাল তবিয়তে!

কক্সবাজারের উখিয়ায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির রিফুজি স্টাডিজ ইউনিটের (আরএসইউ) প্রজেক্ট অফিসার সুকেশ কুমার সরকার জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলার মামলার আসামি হয়েও এখনও দায়িত্বে আছেন। অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে অন্য পদে পদায়ন করা হলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সম্প্রতি ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ চলাকালীন সাংবাদিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা দেখা যায়, যার একটি ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়াল ভাইরাল হয়েছে৷ যা কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। জুলাই ও আগস্টে নিরীহ ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় ৫ আগস্টের পর দায়ের হওয়া জিআর ১৫৪/২৫ নং মামলায় সুকেশ কুমার সরকারের নাম আসামি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। মামলার এজাহার সুত্রে জানা যাই ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে সুকেশ কুমার সরকার হামলার ঘটনায় অংশ নেয়ার৷
আরও পড়ুন: নাজিরপুরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ার অফিসে তিনি এখনও কর্মরত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ছুটি কাটাচ্ছেন। তার সহকর্মীরা জানান, অফিসে তার উপস্থিতি নিশ্চিত হলেও কার্যক্রমে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন না কিছুদিন। উখিয়ায় (CPJ) ব্রাক ইউনিভার্সিটি (আর এস ইউ) দায়িত্বপ্রাপ্ত সহযোগী পরিচালক মোফাকখারুল ইসলাম (তৌফিক)'র কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রথমে তাকে অব্যাহতি দেয়ার কথা। কিন্তু অনুসন্ধানে উঠে আসে পরে অন্য পদে পদায়ন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পিরোজপুর জেলা বিএনপির নতুন কমিটিকে জামায়াতের শুভেচ্ছা
সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে স্বেচ্ছাসেবক রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ চলাকালীন উপস্থিত ছিলেন সুকেশ কুমার সরকার। তবে কর্মকর্তারা কোনও ব্যাখ্যা না দিয়ে দ্রুত চলে যান। ১৩ আগস্ট ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সাংবাদিকদের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়েছে, যা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। সুকেশ কুমার সরকারের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তদন্ত চলছে আমার বিরুদ্ধে৷ আমি একমাস ধরে অফিসে নেই৷ প্রতিবেদককে হুমকি দিয়ে তিনি জানান আপনার বাড়ির আশে পাশের জনপ্রতিনিধিরা আমার লোক৷ প্রতিবেদক'র কাছে আসা সুকেম কুমার সরকারের নিজস্ব ফেইসবুক আইডি থেকে শেয়ার করা একটি পোস্টে দেখা যায়, আমি কিছু বলতে চাই আমার এলাকার কিছু মানুষের উদ্দেশ্যে৷ আমার যখন ভাল মন্দ বুঝার বয়স হয় তখন থেকেই আমি জাতির জনকের আদর্শে বড় হতে থাকি৷ কেননা আমরা একদিকে জাতিগতভাবে হিন্দু৷ তার পর আবার আওয়ামীলীগ পরিবারের৷ সে কারনে আমরা আওয়ামীলীগের ডাল হিসবে তৈরী হতে থাকি৷ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে উপ-নির্বাহী পরিচালক শাহরিয়ার সাদাতের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি৷
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দীন গণমাধ্যমকে জানান, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি নামে এ এনজিওটির বিরুদ্ধে নানান বিষয় ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি৷ স্থানীয়দের চাকরিচ্যুতসহ নানান অভিযোগ যেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়৷ কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান'র কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, তথ্য আর মামলার কাগজ দেন৷ যাচাই বাচাই করে ব্যবস্থা নেব৷ অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা শামসুদ্দৌজা নয়ন'র কাছে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ দিয়ে জানান, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে লিখিত জানাব এবং তদন্তপূর্বক তদন্ত সংস্থারা যেন ব্যবস্থা নেয় তা লিখিত জানাব৷
স্থানীয় ও সাংবাদিক সূত্রে অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তার অব্যাহতি এবং পদায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নীতিমালা অমান্য করা হয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পের বাইরে প্রশিক্ষণ পরিচালনা এবং কর্মকর্তাদের আচরণ কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও নীতি মেনে চলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷