আসন্ন নির্বাচনে আনসার বাহিনীর পূর্ণ প্রস্তুতি: দায়িত্বে ৬ লাখ সদস্য
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (আনসার-ভিডিপি) পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়েছে, যেখানে ৬ লাখ আনসার সদস্য ভোটকেন্দ্রগুলোতে ‘প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) আনসার ও ভিডিপির সদরদপ্তরে বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ এই প্রস্তুতির কথা জানান। বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডিজি সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, এবারের নির্বাচনে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা দিতে এবং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে আনসার বাহিনী প্রথমবারের মতো ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম চালু করছে।
আরও পড়ুন: সিভিল এভিয়েশন একাডেমিতে আইকাও (ICAO) অডিট সম্পন্ন
তিনি বলেন, ‘এবার ভোট কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত আনসার সদস্যদের পাঠানো হচ্ছে। তারা সদরদপ্তরের সঙ্গে ডিজিটাল সিস্টেমে যুক্ত থাকবে। ফলে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা থাকবে।’
এই ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিটি সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর, কিউআর কোড এবং কর্মতথ্য সফটওয়্যারে সংরক্ষিত থাকবে। ফলে দায়িত্ব পালনের দক্ষতা, অবস্থান ও আচরণ রিয়েল টাইমে ট্র্যাক করা সম্ভব হবে। মহাপরিচালক বলেন, নির্বাচনের দিন আনসার বাহিনী জনগণের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক হয়ে কাজ করবে। নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: নতুন অধ্যাদেশে দায়মুক্তি চায় পুলিশ
গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে আনসার সদস্যদের মৌলিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে লিডারশিপ ট্রেনিং, অ্যাডভান্স ট্রেনিং এবং ইয়ুথ লিডারশিপ ট্রেনিং অন্তর্ভুক্ত। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দুই বা তিনদিনের রিফ্রেশার ট্রেনিং দেওয়া হবে, যেখানে আচরণবিধি, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং যোগাযোগের কৌশল শেখানো হবে।
নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে এবং পেশাগত ভূমিকায় একনিষ্ঠ সদস্যদের নির্বাচন করার জন্য পুরোনো সদস্যদের তথ্য ফিল্টারিং করা হবে। বাহিনীতে তরুণ ও কর্মক্ষম সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ থেকে ২৫ বছর করা হয়েছে। বর্তমানে বাহিনীতে নারী সদস্যের সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ এবং নারী-পুরুষকে সমানভাবে নেতৃত্বে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একজন পুরুষ ও একজন নারী প্রশিক্ষক রাখা হয়েছে।
মেজর জেনারেল সাজ্জাদ মাহমুদ আরও জানান, এবার নির্বাচনী সশস্ত্র ও নিরস্ত্র উভয় ধরনের আনসার সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন এবং তাদের জন্য নতুন ইউনিফর্ম, জ্যাকেট ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে। ডিজি বলেন, এখন থেকে আনসার বাহিনী ব্যক্তিনির্ভর নয় বরং সিস্টেম নির্ভর হবে। তিনি আনসার বাহিনীর বৃহত্তর ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, বাহিনীটি শুধু নির্বাচনের সময়ই নয়, বরং সারাবছরই উন্নয়ন, দুর্যোগ মোকাবিলা ও সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রমে ভূমিকা রাখছে।
বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ আনসার সদস্যের মধ্যে ৫৯ লাখই স্বেচ্ছাসেবক। তাদের জীবনমান উন্নয়নে ‘সঞ্জীবন প্রকল্প’ চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সদস্যরা দলভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ (যেমন ড্রাইভিং, নার্সিং, ফ্রিল্যান্সিং) সহায়তা পাচ্ছেন।
সূত্র: বাসস





