কাশিমপুর কারাগারে বসে ২ জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা, সব কারাগারে বিশেষ সতর্কতা জারি

ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে যে দুজন জঙ্গিকে ছিনতাই করা হয় তার পরিকল্পনা করা হয়েছিল কাশিমপুর কারাগারের ভেতর থেকে। বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নিশ্চিত করেছে। পুলিশ ধারণা করছে, ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ১৮ থেকে ২০ জন অংশ নিয়েছিল। কিছুদিন আগেও স্বজন সেজে তারা পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের সঙ্গে দেখা করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সব কটি কারাগারে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে জামিন নিয়ে পলাতক জঙ্গিদের সন্ধানে মাঠে নেমেছে পুলিশের একাধিক ইউনিট। তাদের ধরতে পুলিশের ইউনিটগুলো রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। এমনকি ইন্টারপোলেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ছিনতাইকালে ব্যবহৃত পিপার স্প্রে কেবলমাত্র পুলিশ বাহিনীর কাছে থাকে। কিন্তু এটি কীভাবে জঙ্গিদের হাতে গেল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দুর্ধর্ষ ধাক্কামারা চক্রের দুই নারী সদস্য গ্রেফতার
তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানায়, দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা আগেই জানানো হয় কারাগারে আটক শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান ও সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবসহ চারজনকে। গত সপ্তাহের শুরুতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে তাদের সঙ্গে দেখা করে এই পরিকল্পনার কথা জানান জঙ্গিদের দুই স্বজন। তাদের খোঁজা হচ্ছে। পাশাপাশি ঘটনার সময় তাদের কি করণীয় থাকবে তারও নির্দেশনা দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী, রবিবার দুপুরে আদালতে অপারেশন চলে। জঙ্গিদের লক্ষ্য ছিল চারজনকে ছিনিয়ে নেওয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ইমরান ও সাকিবকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়। শাহিন আলম ওরফে কামাল ও শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিনকে ছিনিয়ে নিতে ব্যার্থ হয়। ছিনিয়ে নেওয়ার মিশনে তিন ভাগে ভাগ হয়ে অন্তত ২০ জন সদস্য অংশ নেয়। ঘটনার পর তারা জনসাধাণের সঙ্গে মিশে যায় বলে তদন্ত তদারক সূত্রে জানা গেছে।
কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২-এর ডেপুটি জেল সুপার আলী আফজাল বলেন, ‘আমাদের কারাগারে সব সময় নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে। তবে রবিবারের ঘটনার পর নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে আরটি চেকপোস্টে পাঁচ-ছয়জন দায়িত্বে থাকলেও এখন ১০ জন নিয়োজিত করা হয়েছে। কারাগারে আসামি পাঠানোর ক্ষেত্রেও বিশেষ নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। রবিবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাত সদস্যকে ঢাকায় নেওয়া হয়। ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় তাদের শুনানির দিন ধার্য ছিল।’
আরও পড়ুন: গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা: আরও দুইজন গ্রেপ্তার, মোট গ্রেপ্তার ৭
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে জঙ্গির সংখ্যা প্রায় সাত হাজারের বেশি। জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গিদের অনেকেই আবার উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে। আবার কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জামিনে থাকা জঙ্গিদের নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা দিচ্ছে না। এ জন্য আমরা তাদের ধরতে পুলিশের সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের ধরতে অনেকটা ইন্টারপোলের মতোই রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।’