গ্রিসে চাকরির নামে লিবিয়ায় মানবপাচার, সিআইডির অভিযানে গ্রেফতার ১

Any Akter
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১:৫৪ অপরাহ্ন, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১:৫৬ অপরাহ্ন, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গ্রিসে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় পাচার, শারীরিক নির্যাতন এবং দেশে বসে মুক্তিপণ আদায়ের সঙ্গে জড়িত মানব পাচার চক্রের সক্রিয় এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃতের নাম মোহাম্মদ নজির হোসেন (৫৫)।

গত ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সিআইডিতে তদন্তাধীন দুটি পৃথক মামলা রয়েছে।

আরও পড়ুন: বসুন্ধরা চেয়ারম্যানসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলা

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানার মামলা নং–০৬ (তারিখ: ০৪/১২/২০২৫) অনুযায়ী, চক্রের গ্রীস প্রবাসী সদস্য শরীফ উদ্দিন (৩৬) ২০২৪ সালে দেশে এসে দুই যুবককে গ্রিসে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করেন। জনপ্রতি ১৫ লাখ টাকার চুক্তির অংশ হিসেবে তিনি শুরুতে পাসপোর্ট ও ২ লাখ টাকা নেন।

এই বছরের জুলাই মাসে দুই যুবককে বাংলাদেশ–দুবাই–মিশর হয়ে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছে তারা মাফিয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া, শারীরিক নির্যাতন এবং মুক্তিপণ আদায় করতে থাকে চক্রটি। দেশে বসে নজির হোসেন ও তার সহযোগীরা ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং ১৬ লাখ টাকা আদায় করেন।

আরও পড়ুন: যে কারণে মা মেয়েকে লোমহর্ষক কায়দায় খুন করে গৃহকর্মী

টাকা পাওয়ার পরও তাদের মুক্তি দেওয়া হয়নি; বরং লিবিয়ার পুলিশে তুলে দেওয়া হয়। ৪৫ দিন কারাবন্দী থাকার পর ২৯ আগস্ট ২০২৫ তারিখে তারা IOM-এর সহায়তায় দেশে ফেরেন।

ডিএমপি’র ডেমরা থানার আরেক মামলায়ও নজিরের সম্পৃক্ততা পেয়েছে সিআইডি। সেখানে দেখা যায়—গ্রিসে চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নেন। জুলাই মাসে নজির বিমানবন্দরে পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকিট সরবরাহ করেন।

ভুক্তভোগী লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পুনরায় আটক ও নির্যাতনের শিকার হন, এবং নজিরের সহযোগীরা পরিবারের কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। টাকার পর তাকে মরুভূমিতে ফেলে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে পুলিশে হস্তান্তর করে। ১৯ দিন কারাভোগের পর IOM-এর সহায়তায় তিনি দেশে ফেরেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নজির স্বীকার করেছেন যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে মোট ১৯ জনকে পাচার করেছেন। তাদের কাছ থেকে চক্রটি ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি প্রতারণামূলকভাবে আদায় করেছে। এর মধ্যে ৯ জন IOM-এর সহায়তায় দেশে ফিরলেও বাকি ভুক্তভোগীরা এখনো লিবিয়ার বিভিন্ন মাফিয়ার বন্দিদশায় আছেন।

গ্রেফতারকৃত নজির বিমানবন্দর থানার ২০২১ সালের ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারায় দায়ের হওয়া এক মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি বলেও জানা গেছে।

সিআইডির মানব পাচার ইউনিট বর্তমানে দুই মামলার তদন্ত পরিচালনা করছে। নজির দুই মামলাতেই সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে বলে সিআইডি জানিয়েছে। তাকে আদালতে সোপর্দ ও রিমান্ড আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।