ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ, লীগ নেত্রীর আড়ালে নিয়োগ বাণিজ্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদীয়মান ছাত্রনেতা মো. আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসরের সাথে সম্পৃক্তরা প্রমাণহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সুনাম ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রনেতা। এ ঘটনায় তিনি প্রতিকার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের কাছে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেছেন।
আহসান হাবীব জানিয়েছেন, গত ২৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে চবি কর্মচারী মোহাম্মদ ইমরান হোসেনের সঙ্গে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের অগ্রণী ব্যাংক চবি শাখার একটি তিন লাখ টাকার চেক লেনদেন (চেক নম্বর SBD 4171863, A/C No. 0200002047585) নিয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলে সাবিনা ইয়াসমিন, তার ভাই মাসুদ রানা ও পিতা আবদুল মান্নান। অভিযোগপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দাখিল করে ও গণমাধ্যমেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: রাতের মধ্যে ছাত্রদলের কমিটি স্থগিত না হলে কঠোর পদক্ষেপ: উমামা ফাতেমা
তবে ভুক্তভোগী ছাত্রদল নেতা আহসান হাবীব দাবি করেছেন, “এই অভিযোগের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং অভিযোগকারীরা কোনো ধরনের প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।” তিনি অভিযোগ করেন, “এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আমার সামাজিক মর্যাদা ও ছাত্রদলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার একটি গভীর ষড়যন্ত্র।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, অভিযোগ পূর্ববর্তী ২৩ জুলাই রাতে নিজেকে ‘বাংলাদেশ মোমেন্টস’ এর সাংবাদিক ও চবিসাস সদস্য পরিচয় দিয়ে সারওয়ার মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি তাকে সরাসরি ফোন না দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কল করে হুমকি দেন যে, তার বিরুদ্ধে মান্নান ও ইমরানের নিয়োগ বাণিজ্যের আর্থিক লেনদেনের ঘটনায় একটি অভিযোগ করা হবে। এ সময় ঐ ব্যক্তি তাকে তার সাথে আর্থিক লেনদেন করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাঁর সাথে জড়িত না থাকার কারণে তিনি এই অনৈতিক প্রস্তাব অস্বীকার করেন। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পরদিনই সাবিনা ইয়াসমিন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেন।
আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ‘প্রক্সি’ জালিয়াতি: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আটক ৩
তথ্যসূত্র জানায়, সাবিনা ইয়াসমিন, তার ভাই মাসুদ রানা ও পিতা আবদুল মান্নান এলাকায় চিহ্নিত আওয়ামী দোসর হিসেবে পরিচিত; যারা দীর্ঘদিন ধরে চবিতে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত। আবদুল মান্নান চবিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী দোসরদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে নির্বাচন আমলে চবির আরেক কর্মচারী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী দোসর মোহাম্মদ ইমরান হোসেনের সাথে মিলে ব্যাপক নিয়োগ বাণিজ্য পরিচালনা করেন এবং সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর শাখা থেকে মালামাল চুরির দায়ে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সরজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দাপুটে নেত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে চবি ছাত্রলীগের নেতা রুবেল-টিপু সহ প্রভাবশালী অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থের বিনিময়ে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়োগপ্রার্থীদের সংগ্রহ করতেন এবং তার বাবার সাথে এই নিয়োগ বাণিজ্য পরিচালনা করতেন।
অন্যদিকে, মাসুদ রানা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিচিত নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সঙ্গবদ্ধ ধর্ষণ করার মতো নিকৃষ্ট অপরাধে সে জেল খেটেছে এবং বর্তমানে জামিনে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মাদক ব্যবসা ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তার নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ৫ আগস্টের পূর্বে সে বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সদস্যদের উপর হামলাও চালিয়েছে, বিশেষ করে ছাত্রদলের কর্মীরা তার দ্বারা সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তার দ্বারা ছিনতাই ও হামলার শিকার হয়েছেন। ২০২৫ সালের জুলাই বিপ্লবের সময়ও তার অবস্থান ছিল দৃঢ়।
ইতিপূর্বে চবিতে নিয়োগ বাণিজ্যের মূল হৃষ্টপুষ্ট এই আওয়ামী দোসর পরিবার মোহাম্মদ ইমরান হোসেনের সঙ্গে সঙ্ঘবদ্ধভাবে নিয়োগ বাণিজ্যে যুক্ত ছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি আলোচিত ঘটনা।
সাবিনা ইয়াসমিনের সাক্ষ্য প্রমাণহীন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে কেবল একপাক্ষিকভাবে অভিযোগকে গণমাধ্যমে প্রচার করে ক্ষতিপূরণমূলক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে দাবী করছেন ছাত্রদলের একাধিক নেতৃত্ব।
সাবিনা ইয়াসমিনের অভিযোগের সত্যতা ও প্রমাণ যাচাই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. নুরুল হামিদ কানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনে যোগাযোগে আসেননি। একইভাবে সাবিনার সঙ্গেও একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সফল হয়নি।
এ বিষয়ে আহসান হাবী বলেন, “আমি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে তারা আমার এবং সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার লক্ষ্যেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই মিথ্যা অভিযোগ ছড়িয়ে দিয়েছেন। আমি চাই সত্য উদঘাটিত হোক এবং যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে সম্মানহানি করেছে, তাদের বিচার হোক। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত আমি দাবি করছি।”