ভারতে কাশির শিরাপ খেয়ে ১১ শিশুর মৃত্যু

সম্প্রতি ভারতের রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে কাশির ওষুধ খেয়ে প্রায় ১১ শিশুর মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। গ্রেফতার করা হয়েছে এক চিকিৎসককে। শিশুমৃত্যুর ঘটনায় যে কাশির ওষুধ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, সাধারনত কাশির ওষুধে ডাইইথিলিন গ্লাইকল (ডিইজি) ও ইথিলিন গ্লাইকল (ইজি) নামে দু’ধরনের রাসায়নিক রয়েছে। এই দুই রাসায়নিক শরীরে ঢুকলে ভয়ানক ক্ষতি করতে পারে বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকেরা।
প্রশ্নের মুখে থাকা কাশির সিরাপটিতে ৪৮.৬% ডাইথাইলিন গ্লাইকোল রয়েছে। এটি একটি বিষাক্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল দ্রাবক যা কখনোই ওষুধে থাকা উচিৎ নয়। এটি সেবনের পর কিডনি ফেল হওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক নয়।এই ভয়াবহ ঘটনা শুধুমাত্র মধ্যপ্রদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পার্শ্ববর্তী রাজ্য রাজস্থানে, স্থানীয়ভাবে তৈরি ডেক্সট্রোমেথোরফান সিরাপ সেবনের পরে দু'জন শিশুর মৃত্যু হয়। কাশি প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত ওই সিরাপ কিন্তু ছোট বাচ্চাদের জন্য একেবারেই নিরাপদ নয়। শিশু মৃত্যুর ঘটনা মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে এবং বিষয়টি নিয়ে সরকারি তদন্ত শুরু হয়।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে যা বললেন ট্রাম্প
বছরের পর বছর ধরে ভারতে তৈরি কাশির সিরাপগুলিতে ডাইথিলিন গ্লাইকোলের উপস্থিতি বহু শিশুর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ গাম্বিয়ায় ৭০জন এবং উজবেকিস্তানে ১৮টি শিশুর মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে ডাইথিলিন গ্লাইকোল যুক্ত ভারতীয় সিরাপগুলির যোগ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত শাসিত কাশ্মীরের জম্মুতে পাঁচ বছরের নিচে কমপক্ষে ১২টি শিশুর মৃত্যুর নেপথ্যে ছিল কাশির সিরাপ। তবে আক্টিভিস্টদের মতে ভুক্তভুগীদের সংখ্যা কিন্তু আরো বেশি।
আরও পড়ুন: গাজায় প্রথম দফায় মুক্তি পেলেন যারা
অতীতে, কোডিনযুক্ত কাশির সিরাপগুলির অপব্যবহারও হয়েছে। কোডিন অল্পমাত্রার ওপিওয়েড (যন্ত্রণার কষ্ট কমাতে ব্যবহার করা হয় ওপিওয়েড যা ব্যবহার করলে আছন্ন লাগে) যা উচ্চ মাত্রায় আবেগ তৈরি করতে পারে। এর প্রতি আসক্তি তৈরি হওয়ারও সম্ভাবনা দেখা যায়। ছোট বাচ্চাদের জন্য এই জাতীয় কাশির সিরাপ দেওয়া উচিৎ নয়।
নিয়ন্ত্রকরা প্রতিবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও দূষিত কাশির সিরাপগুলি বাজারে আবার হাজির হয়, যা প্রমাণ করে যে ওষুধের বাজারের পরিস্থিতি আসলে কী। সমালোচকদের অভিযোগ, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে প্রায়শই অঅনুমোদিত সিরাপগুলি ছোট নির্মাতারা কম খরচে এটি উৎপাদন করে। শুধু তাই নয় এগুলি ওষুধের দোকানে বিক্রিও করা হয়।