ইরানকে হঠাৎ কড়া হুঁশিয়ারি মোসাদপ্রধানের, নতুন যুদ্ধের আশঙ্কা

Sadek Ali
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০৭ পূর্বাহ্ন, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১০:১৬ পূর্বাহ্ন, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

চলতি বছরের মাঝামাঝিতে স্বল্পমেয়াদি ১২ দিনের যুদ্ধের পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে নতুন করে গভীর উদ্বেগে পড়েছে ইসরায়েল। যেকোনো মূল্যে ইরানের পারমাণবিক অগ্রগতি থামাতে সক্রিয় তৎপরতা চালাচ্ছে দেশটি। এরই ধারাবাহিকতায় ইরানের শাসকগোষ্ঠীর উদ্দেশে কঠোর বার্তা দিয়েছেন ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া।

টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) জেরুজালেমে মোসাদ এজেন্টদের এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বার্নিয়া বলেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির আকাঙ্ক্ষা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পে যে বড় ধরনের ক্ষতি করা হয়েছে, সেটি যেন আর কখনো সচল হতে না পারে—এই দায়িত্ব মোসাদের কাঁধেই রয়েছে।

আরও পড়ুন: ভেনেজুয়েলার তেলকে নিজেদের সম্পদ দাবি যুক্তরাষ্ট্রের

আগামী বছরের জুনে দায়িত্ব ছাড়তে যাওয়া এই গোয়েন্দাপ্রধান যুদ্ধের শুরুতে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার প্রশংসা করেন। তার বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, ওই অভিযানের মধ্য দিয়েই ইরানে ইসরায়েলি গোয়েন্দা তৎপরতার গভীরতা স্পষ্ট হয়েছে। বার্নিয়ার ভাষায়, “আয়াতুল্লাহদের শাসনব্যবস্থা হঠাৎ বুঝতে পেরেছে যে ইরান পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে এবং আমরা ভেতরে গভীরভাবে প্রবেশ করেছি।”

কূটনৈতিক সমাধান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ইরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আবারও বিভ্রান্ত করে ত্রুটিপূর্ণ কোনো নতুন পারমাণবিক চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও এমন কোনো চুক্তি কার্যকর হতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

আরও পড়ুন: শিশু নিরাপত্তায় নতুন উদ্যোগ: গ্র্যান্ড মসজিদে চালু হলো পরিচয় ব্রেসলেট

মোসাদপ্রধানের এই বক্তব্যের পর ইরান-ইসরায়েল সংঘাত আবারও বড় আকার নেওয়ার আশঙ্কা জোরালো হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে গেলে তা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধেও রূপ নিতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে সংসদ সদস্যদের ব্রিফ করেছেন। হিব্রু ভাষার দৈনিক মারিভ জানায়, বৈঠকে জানানো হয়েছে—ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন জোরদার করেছে এবং আগের হামলা সক্ষমতা পুনর্গঠন করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই একযোগে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইসরায়েলের ওপর বড় আঘাত হানতে পারে তেহরান।

গত এক মাসে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতেও এই উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা বেড়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উভয় দেশই সামরিক সক্ষমতা দ্রুত বাড়াচ্ছে, প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে সরাসরি সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি (জেসিপিওএ) চলতি বছরের অক্টোবরে বাতিল হয়ে যাওয়ায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে আলোচনার পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

ইরান দাবি করেছে, তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত ধ্বংস করেছে। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের ধারণা, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও আশঙ্কা বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের নতুন হামলা প্রশ্ন ‘হবে কি না’ নয়, বরং ‘কবে হবে’ সেটাই বড় প্রশ্ন।

আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তার সূত্র অনুযায়ী ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনরাত চালু রয়েছে। নতুন সংঘাত শুরু হলে ইরান একযোগে দুই হাজার পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পরিকল্পনা করছে বলে তিনি সতর্ক করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মৌলিক কারণগুলো অমীমাংসিত থাকায় উত্তেজনা এখন কাঠামোগত রূপ নিয়েছে, যেখানে সংঘাত প্রায় অনিবার্য হয়ে উঠছে।