আন্দোলনরত ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ বিএনপি-জামায়াতের হাতে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Abid Rayhan Jaki
ইউসুফ আলী প্রধান নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ৫:৫১ অপরাহ্ন, ২৭ জুলাই ২০২৪ | আপডেট: ১২:৩৩ অপরাহ্ন, ২৭ জুলাই ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ বিএনপি-জামায়াতের হাতে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। 

তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম ছাত্ররা সরকারের উদ্যোগ ও উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবেন, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তারা সেটি করেননি। তাদের কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গিদের হাতে। যারা দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এদের আক্রোশই ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগের প্রতি। দুইজন সাংবাদিককে হত্যা ও একজন নারী সাংবাদিককে নাজেহাল করেছে তারা। এরা মানুষের শত্রু, জনগণের ও দেশের শত্রু। 

আরও পড়ুন: অসহায় পরিবারের দুই শিশুকে চিকিৎসা সহায়তা ও অটোরিকশা দিলেন তারেক রহমান

শনিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতকারীদের নাশকতা-সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। 

নারায়ণগঞ্জে নজিরবিহীন তাণ্ডবের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে একটি ভবনে আগুন দিয়ে তিন শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তারা। শিমরাইলে মা হাসপাতালেও আগুন দেয় তারা। সেখান থেকে নবজাতক ও গর্ভবতী মায়েদের অনেক কষ্টে উদ্ধার করা হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। পিবিআই অফিস, পাসপোর্ট অফিস, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, ২ নম্বর রেলগেটে পুলিশ বক্স, সিটি কর্পোরেশন ভবন, যুব উন্নয়ন অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। মদনপুরে ছয় পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, থানায় হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছে। 

আরও পড়ুন: তিন দিনের সফর শেষে কুয়ালালামপুর থেকে দেশে ফিরছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. ইউনূস

তিনি বলেন, ওরা পদ্মা সেতুর গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও প্ল্যান সেতু ভবনে হামলা করে পুড়িয়ে দিয়েছে৷ ত্রাণ ভবন বিনষ্ট করেছে তারা। যে বিটিভি বাংলাদেশের সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আর্কাইভে সংরক্ষণ করে, সেই বিটিভি ভবনও পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। আমাদের স্বপ্নের ও গর্বের মেট্রোরেলও ওদের অগ্নিসংযোগে এখন বন্ধ। 

শিক্ষার্থীদের দাবি প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ছাত্র আন্দোলনের নেতা‌রা নতুন ‌যে ৮ দফা দাবি দিয়েছিলেন সে প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন এগুলোর মধ্যে যৌ‌ক্তিক দাবিগুলো ক্রমান্বয়ে মেনে নেবেন। কিন্তু সেই সুযোগ শিক্ষার্থীরা দেননি।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারী তিনজ‌নকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তারা নিজেদের ওপরে হামলার শঙ্কা পরিবারকে জানিয়েছিলেন। কারা তাদের আক্রমণ করতে চায় সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনীয় ব‌্যবস্থা নেওয়া হবে। 

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে যে পুলিশ, তাদের ওপর নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। আমাদের দেশপ্রেমিক বিজিবিদের ওপরও হামলা করা হয়েছে। আমাদের র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি যখন একত্রে পারছিল না তখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছি। খুব শিগগিরই আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাব। আমি আগেই বলেছি, ছাত্রদের মিসগাইড করে যে ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে, অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, আমাদের ছাত্রলীগের অনেকেই শাহাদাত বরণ করেছে। তিনজন পুলিশ মারা গেছেন। একজন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। বর্তমানে এক‌টি মহল সোশ্যাল মি‌ডিয়ার মাধ‌্যমে গুজব ছ‌ড়িয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রা‌ন্তি ছড়াচ্ছে। এইসব গুজব থেকে দেশকে রক্ষা করা সাংবাদিকদের দায়িত্ব। 

সহিংসতায় প্রাণহানির কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। তিনজন পুলিশ ও একজন আনসার সদস্য শাহাদাত বরণ করেছেন। এক পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে মেরে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছিল ওরা। গাজীপুরের সাবেক জনপ্রিয় মেয়রের পিএসকেও ওরা হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছিল। এমনকি নরসিংদী জেলখানায় ওরা হামলা করে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের বের করে এনেছে, অস্ত্রও লুট করেছে। সেই অস্ত্র ওরা এখন পুলিশের বিপক্ষে ব্যবহার করতে চায়, জঙ্গিদের দ্বারা আবারও দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। গণমাধ্যমের ব্যক্তিরা, আপনারা ওদের বীভৎসতা, নির্মমতা বেশি করে প্রচার করুন। আমাদের পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশপ্রেমিক। তারা এসবে ভয় পায় না।

এদিন মন্ত্রী দুষ্কৃতকারীদের হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত পিবিআই কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, সিটি কর্পোরেশন ভবন, শিল্প পুলিশ কার্যালয়সহ আরও বেশ কিছু স্থাপনা পরিদর্শন করেন। 

এ সময় নারায়ণগঞ্জ-৪ (সিদ্ধিরগঞ্জ-ফতুল্লা) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নুরুল ইসলাম, র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল হাই প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।