মাঠে সাড়া নেই, উধাও ঝটিকা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাঁড়াশির পাশাপাশি চলছে ছাত্রজনতার প্রতিরোধ

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৪:১৬ অপরাহ্ন, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ চোরাগোপ্তা ভাবে প্রকাশ্যে ঝটিকা মিছিল করে আবারো রাজনৈতিক মাঠে ফেরার চেষ্টায় সাড়া নেই মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ যুবলীগের কিছু নেতা কর্মী মুখে কালো কাপড় মাথায় হেলমেট পরে প্রকাশ্যে দু এক মিনিট ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান ওর ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে উধাও হয়ে গেছে। 

নেতাকর্মীদের ঢাকায় এনে হঠাৎ করে বড় শোডাউনের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধদের দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন মাঠে নেমেছে। 

আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন আবারও মাঠে নামার জন্য কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক দূর প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সারা দেশের নেতাকর্মীদের ঢাকায় একত্রিত করার নির্দেশনা দেয়। গোয়েন্দা সংস্থা গুলি এ ধরনের খবর পেয়ে মাঠ পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তা প্রতিরোধে কতিপয় নির্দেশনা দিয়ে তৎপর করে তোলে। 

সূত্র জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ দিল্লি থেকে মাঠ পর্যায়ে গ্রুপ ভিত্তিক অঙ্গ সংগঠনের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। দলীয় কর্মসূচি এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জানানো হয়। ঢাকাসহ সারা দেশে ঝটিকা মিছিল করে ঢাকায় শোডাউন করার কর্মসূচি ছিল তাদের। এ জন্য ঢাকায় গত দুই সপ্তাহ ধরে ঝটিকা মিছিল শুরু করে। মানুষ বের হওয়ার আগেই নির্জন স্থান দেখে আগে থেকেই রেডি করা মাইক্রোবাস দিয়ে ১০-১৫ জন এসে একটি ব্যানার নিয়ে ঝটিকা মিছিল করে দুই এক মিনিটের মধ্যে ই ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। দুই একটি মিছিল একটু বড় হলেও সারাদেশে চোরা গুপ্তায় বিচ্ছিন্ন মিছিল করতে থাকে। 

আরও পড়ুন: আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে বিদেশ যেতে দেয়া হয়নি

বিষয়টি সরকারের  নজরে আশায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ শুরু করে। ঝটিকা মিছিলের ভিডিও ফুটেজ দেখে দেখে যাত্রা শুরু করে। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে মিছিলের প্রস্তুতির সময় ছাত্রজনতা তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। অভিযানের মুখে ভেঙ্গে যায় তাদের সামাজিক নেটওয়ার্ক ও স্থানীয় সহানুভূতি। 

ঢাকা মহানগর পুলিশ মুখপাত্র পুলিশ কমিশনার তালেবুর রহমান জানান, ঝটিকা মিছিলের বিষয়ে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে। ভিডিও দেখে দেখে মিছিল কারীদের গ্রেপ্তার চলছে। ঝটিকা মিছিলের পরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মুরাদ ও ঢাকা মহানগরের পাঁচ বারের এমপি মনু সহ শতাধিক নিষিদ্ধ দলের নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চলছে সর্বত্র। প্রেস বিজ্ঞপ্তি

রাজধানীতে পৃথক অভিযান পরিচালনা করে গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর গাড়ি পোড়ানো মামলার এজাহারনামীয় আসামিসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের আরও পাঁচ নেতাকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- ১। শুকতাইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও শুকতাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মো. আবেদ আলী শেখ (৫২) ২।  রমনা ও হাতিরঝিল থানা মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মমতাজ পারভিন শিমু ( ৪২ )  ৩।  ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি এবং মহানগর উত্তর যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ জাকির হোসেন সাগর (৪৩) ৪। মিরপুর থানা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এম আর বাদল (৫০) ও ৫। উত্তরা থানা আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী মনিরুল ইসলাম (৩৮)।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল ২০২৫) রাত আনুমানিক ০৮:৩০ ঘটিকায় ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. আবেদ আলী শেখকে এবং একই তারিখ রাত আনুমানিক ০৯:০০ ঘটিকায় বাংলামোটর এলাকা হতে মমতাজ পারভিন শিমুকে গ্রেফতার করে ডিবি-ওয়ারী বিভাগের পৃথক টিম। উল্লেখ্য গ্রেপ্তারকৃত মো. আবেদ আলী শেখ গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর গাড়ী পোড়ানো মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল ২০২৫) দিবাগত রাত আনুমানিক ১২:০৫ ঘটিকায় রাজধানীর বনানী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোহাম্মদ জাকির হোসেন সাগরকে গ্রেফতার করে ডিবি-সাইবার বিভাগের একটি টিম। গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেন সম্প্রতি গুলশান এলাকায় ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলো মর্মে স্বীকার করেছে। এছাড়া সে ২০১৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় রুজুকৃত মামলার এজাহারনামীয় আসামি।

ডিবি সূত্রে আরও জানা যায়, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ খ্রি. রাত আনুমানিক ০১:৪৫ ঘটিকায় মিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এম আর বাদলকে গ্রেফতার করে ডিবি-মিরপুর বিভাগের একটি দল। একই দিন রাজধানীতে অভিযান পরিচালনা করে মনিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে ডিএমপি ডিবির পৃথক টিম। সে গত ১৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে উত্তরা বিমানবন্দর এলাকায় আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিল মর্মে স্বীকার করেছে। রাজধানী সহ সারা দেশে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। গ্রেফতারের পাশাপাশি মিছিলের প্রস্তুতি সময় ফরিদপুর খুলনা কাপাসিয়া চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার হাতে বেশ কিছু নেতা কর্মী আটক ও গণধোলাইয়ের পর পুলিশের হস্তান্তর করেছে।   পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ ৪২ জনকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলি পুলিশ আটক করেছে. তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে।

ঢাকা মহানগর এলাকায় নিষিদ্ধ সংগঠনের ঝটিকা মিছিল প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও তাদের সমভাবাপন্ন বিভিন্ন সংগঠন সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের গতিবিধি অনুসরণ করে তারা কোন নির্দিষ্ট এলাকায় গাড়ী থেকে নেমে দু'এক মিনিট মিছিল করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে এসব মিছিলের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়। এসব দুর্বৃত্তদের তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও পরবর্তীতে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অনেককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন ও বেআইনি এসব সংগঠনের অপতৎপরতা রোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে। সর্বসাধারণকে এসব সংগঠনের বিচ্ছিন্ন অপতৎপরতা সম্পর্কে অহেতুক আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।