পাঁচ দিনের রিমান্ডে মেজর সাদিকের স্ত্রীর চাঞ্চল্যকর তথ্য
গেরিলা হামলা করে আরেকটি ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে চেয়েছিল

সারা দেশ থেকে বাছাই করা ডেডিকেটেড ক্যাডেট, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীদের সশস্ত্র গেরিলা ও সর্বহারা স্টাইলে গোপন রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি সশস্ত্র সামরিক শাখা তৈরি করতে চাচ্ছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। দেশের বাইরে কয়েকটি দেশে বসে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। বসুন্ধরার কনভেনশন সেন্টারে এ ধরনেরই একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল ৮ জুলাই।
গ্রেপ্তারকৃত সেনাবাহিনীর মেজর সাদেকুল হক ও গোয়েন্দা হেফাজতে রিমান্ডে থাকা তার স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। জাপানের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের বিশ্লেষণে সবাই হতবাক। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পতন ঘটাতে দেশে আরেকটি ১/১১ তৈরির প্রেক্ষাপট তৈরি করতে রাজধানীসহ সারাদেশে গুপ্ত হামলা ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় চোরা হামলার কর্মসূচি নিয়েছিল তারা।
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নিবার্চন: সিইসি
হঠাৎ করে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং-এ অনুরূপ হামলা বা নাশকতা তৈরি করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করাই ছিল তাদের পরিকল্পনা। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রথমে শম্পা ও সোহেল রানা নামে দুজন প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটরকে আটক করে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে সেনাবাহিনীর মেজর সাদেক ও তার স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে আটক করা হয়।
সুমাইয়া জাফরিনের পিতা সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর জেনারেল ও পিজিআরের অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। পারিবারিক সূত্রেই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন তারা। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশেই তারা এ কর্মসূচিতে যোগদান করেছেন। গোয়েন্দারা তাদের নিকট থেকে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করেছে। এজন্যই তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন হজযাত্রীরা
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার তালিবুর রহমান জানান, তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত ২৮ জনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই কাণ্ডে অর্থযোগানদাতা ও প্রশিক্ষিত খেলোয়াড়দের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সুমাইয়া জাফরিনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন আদালতে দাবি করেছেন, আগে থেকেই সেখানে সব আয়োজন করা ছিল। তিনি এবং তার স্বামী কিছু সময়ের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন মাত্র।
বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট) দুপুরে রিমান্ড শুনানি চলাকালে বিচারককে জাফরিন বলেন, "আগে থেকেই ওটা অ্যারেঞ্জ করা ছিল। সেখানে ইনভাইটেশন পেয়ে আমি ও আমার হাজবেন্ড কিছু সময়ের জন্য গিয়েছিলাম।"
তিনি বলেন, "এএসপির পরিচয়ে অন্য কেউ জায়গাটা ভাড়া করেছিল। সেটা আমার ওপর চাপানো হচ্ছে। দয়া করে আমাকে রিমান্ডের মতো ডিসিশন দেবেন না। কিছু জানার থাকলে এমনিতেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। আমি উত্তর দেব। আমি নিজে এটা করিনি। তাই অনুরোধ, আমাকে রিমান্ড দেবেন না।"
পরে শুনানি শেষে ভাটারা থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় জাফরিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এর আগে সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, "সুমাইয়া জাফরিনকে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।"
এই রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের ঘটনায় জাফরিনের কী ভূমিকা ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
সম্প্রতি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কাছে একটি কনভেনশন সেন্টারে আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে গোপন প্রশিক্ষণ চালানোর অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মেজর সাদিককে সেনাবাহিনীর হেফাজতে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সেনা কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ রয়েছে, সুমাইয়া জাফরিনও স্বামীর সঙ্গে ওই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তাকে খুঁজছিল পুলিশ। জাফরিন স্বীকার করেছেন, তিনি স্বামীর সাথে ওই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সুমাইয়া জাফরিনকে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় পুলিশের এসপি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল।