রিমান্ডে দেওয়া তথ্য যাচাইয়ে জাফরিনকে নেওয়া হবে টিএফআই সেলে
জঙ্গি স্টাইলে কাট-আউট পদ্ধতিতে গেরিলা বাহিনী তৈরির চেষ্টা

বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়ার ঘটনায় আটক মেজর সাদেকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন গোয়েন্দাদের কাছে সহজে সকল তথ্য প্রকাশ করেছে। ভাটারা থানার সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা পাঁচ দিনের রিমান্ডে ডিবি হেফাজতে গোয়েন্দাদের কাছে তাদের দীর্ঘ ছয় মাসের গেরিলা বাহিনী তৈরির উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম নিয়ে বলেছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখল এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে গেরিলা হামলা করে দেশে অস্থিরতা তৈরির মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো। রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী এসব কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্যগুলো যাচাইয়ের জন্য সুমাইয়াকে শীঘ্রই টিএফআই সেন্টারে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে শুধু ঢাকার বসুন্ধরায় নয়, ঢাকার অন্তত ৪টি সেন্টার ও বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মীদের জঙ্গি-সর্বহারা স্টাইলে রাজনৈতিক ও গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তবে সুমাইয়া জাফরিন এগুলোর অনেক তথ্য জানে না বলে অস্বীকার করছে। জঙ্গি ও সর্বহারা স্টাইলে কাট-আউট পদ্ধতিতে গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক ইউনিট থেকে দশজন করে ডেডিকেটেড কর্মী বাছাই করা হচ্ছে। এই ১০ জন জানে না অন্য টিমের ১০ জন কারা। সারাদেশে এভাবেই অশিক্ষিত গেরিলা টিম করে দেশব্যাপী একযোগে নাশকতা করাই উদ্দেশ্য বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি
এদিকে ফেসবুকে ‘ODIB-M-1701 (অপারেশন ঢাকা ব্লকেড)’ নামে একটি গোপন গ্রুপ খুলে সেখানে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত ইউনিলিভার বাংলাদেশের টঙ্গী এরিয়া ম্যানেজার ও মেজর সাদেকের স্ত্রী সুমাইয়া তাহমিদ জাফরিন। গ্রুপটির অন্যতম অ্যাডমিনও তিনি। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তথ্য সংগ্রহ, গোপন কোড তৈরি এবং অনলাইন মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে সদস্যদের সমন্বয়ের কাজ করতেন। এমনকি রাজধানীর পথে ঘুরে বেড়ানো টোকাইদেরও সংগ্রহ করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের পরিকল্পনা হয় ওই গ্রুপের মাধ্যমে।
রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টার ছাড়াও বিভিন্ন রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট ও আবাসিক ফ্ল্যাটে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন সুমাইয়া ও তার স্বামী। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত আরও বেশকিছু নাম উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বড় চ্যালেঞ্জ: সিইসি
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে মামলায় সুমাইয়াকে ৫ দিনের রিমান্ডের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
‘শাহবাগ দখলের পরিকল্পনা’
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ৮ জুলাই রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০ থেকে ৪০০ জন অংশ নেন। তারা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।
বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তারা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন।
এ ঘটনায় ১৩ জুলাই ভাটারা থানার এসআই জ্যোতির্ময় মণ্ডল সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। সুমাইয়াকে গত বুধবার গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সুমাইয়া ইউনিলিভার বাংলাদেশে টেরিটরি ম্যানেজার হিসেবে টঙ্গীর গাজীপুর শাখায় কর্মরত।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুমাইয়া ও তার স্বামী মেজর সাদেকুল হক পূর্বাচলে সি-সেল নামে রিসোর্টে, কাঁটাবনে রেস্টুরেন্টে এবং মিরপুর ডিওএইচএসে একাধিকবার রাষ্ট্রবিরোধী গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। এছাড়া উত্তরায় ১২ নম্বর সেক্টর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বিপরীতে প্রিয়াংকা সিটির দুই নম্বর গেট-সংলগ্ন সুমাইয়ার একটি ফ্ল্যাটে একাধিকবার গোপন বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল— কীভাবে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডকে গতিশীল ও সমর্থকদের উৎসাহিত করা যায় এবং দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা যায়। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বৈঠকগুলোতে বিস্তর আলোচনা হয়। প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যেও কয়েকবার একত্রিত হয়েছিলেন তারা।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, সুমাইয়াকে বুধবার মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের ঘটনায় সুমাইয়ার কী ধরনের ভূমিকা ছিল, তার সঙ্গে আরও কারা ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, সুমাইয়ার বিষয়ে বিধিবিধান মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ সুমাইয়ার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।