ভরাট করা জায়গা কতটুকু অনিরাপদ

ভূমিকম্পে ঢাকার কোন কোন এলাকা নিরাপদ

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৯:০৭ অপরাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৯:০৯ অপরাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

মধুপুর ফল্টে ৬.৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার প্রায় ৪০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে এবং মৃত্যুর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়াতে পারে—সম্প্রতি এমন সতর্কতা দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ তথ্য প্রকাশের পর ঢাকাবাসীর মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন—এই শহরে আদৌ কোনো নিরাপদ এলাকা কি রয়েছে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার ভূতাত্ত্বিক গঠন তুলনামূলক ভালো হলেও শহরের অবকাঠামো, ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম, ভরাট জমির ওপর উচ্চ ভবন এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব রাজধানীকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলেছে।

আরও পড়ুন: সিও ক্লোজড, বাবুর্চি সুইপারসহ কক্সবাজার র‌্যাবে গণবদলি

কোন এলাকাগুলো তুলনামূলক নিরাপদ?

ভূতত্ত্ববিদ সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানান, ঢাকার উত্তরের বড় অংশে রয়েছে মধুপুরের শক্ত লাল মাটি। শুধুমাত্র ভূতাত্ত্বিক দিক বিবেচনায় রমনা, মগবাজার, নিউ মার্কেট, লালমাটিয়া, খিলগাঁও, মতিঝিল, ধানমন্ডি, লালবাগ, মিরপুর, গুলশান, তেজগাঁও—এলাকাগুলো তুলনামূলক স্থিতিশীল।

আরও পড়ুন: আমিরাতে বন্দি বাকি ২৪ বাংলাদেশি অচিরেই মুক্তি পাচ্ছেন

তবে শুধু মাটি শক্ত হওয়াই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না।

নিরাপদ মাটির ওপরেও কেন ঝুঁকির ভবন?

জরিপে দেখা গেছে— পুরোনো ভবনগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ দুর্বল, দুই–তলার অনুমোদন নিয়ে সাত তলা নির্মাণ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, বিল্ডিং কোড অমান্য।

রাজউকের তথ্য মতে, ঢাকার ৯০% ভবনেই বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন রয়েছে। সম্প্রতি ৩০০ ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি।

ভরাট জমিতে নির্মাণ মানেই কি অনিরাপদ?

বসুন্ধরা, আফতাবনগরসহ ঢাকার পূর্ব-পশ্চিমের অনেক এলাকা জলাশয় ভরাট করে তৈরি। এসব এলাকায় গ্রাউন্ড ইম্প্রুভমেন্ট টেকনিক ছাড়া বহুতল ভবন নির্মাণ করলে ভবন তীব্র কম্পনে সহজেই ধসে পড়তে পারে।

বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, পাইল (Pile) দিলেই সব ঠিক নয়—মাটি প্রস্তুত না থাকলে ভবন দুলে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

পুরান ঢাকা কি সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ?

পুরান ঢাকার প্রধান সমস্যা—অত্যন্ত সরু রাস্তা। এতে উদ্ধারকাজ কঠিন হয়। তবে অনেক পুরোনো ভবন শত বছরেও অটল রয়েছে, যা দেখায়—গুণগত নির্মাণই মূল বিষয়।

ঢাকাকে ঘিরে পাঁচটি বড় ফল্ট লাইন

বাংলাদেশে রয়েছে পাঁচটি পরিচিত ভূমিকম্প-সৃষ্টিকারী ফল্ট—প্লেট বাউন্ডারি–১ (মিয়ানমার–নোয়াখালী অঞ্চল), প্লেট বাউন্ডারি–২ (নরসিংদী), প্লেট বাউন্ডারি–৩ (সিলেট অঞ্চল), ডাউকি ফল্ট

মধুপুর ফল্ট

এ ছাড়া রয়েছে দুটি ব্লাইন্ড ফল্ট—একটি ময়মনসিংহে, অন্যটি রংপুরে—যা বেশি বিপজ্জনক, কারণ এগুলো শনাক্ত করা কঠিন এবং সতর্কবার্তা দেয় না।

ঢাকাকে কি নতুন করে নিরাপদ করা সম্ভব?

স্থপতি ইকবাল হাবিব মনে করেন, রেট্রোফিকেশন, ভবনের ব্যবহার পরিবর্তন, সংস্কার, এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে ঢাকার কিছু অংশকে নিরাপদ করা সম্ভব।

তবে এর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে—ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রেড জোন, সংস্কারযোগ্য ইয়েলো জোন, এবং নিরাপদ ভবন গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন—ভবনগুলো এত ঘনভাবে পাশাপাশি থাকার কারণে একটি ভবন হেলে পড়লে পাশেরটিও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।