বিএডিসি সেচ প্রকল্পের সুফল
নাটোরে এবার ধানের বাম্পার ফলন

নাটোরে কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) সেচ প্রকল্প। শুষ্ক মৌসুমে অল্প খরচে সেচ সুবিধা পাওয়ায় কৃষকরা এক ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করেছেন।
নিরবচ্ছিন্ন সেচ সুবিধা পাওয়ায় এবছর বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। পানির প্রাপ্যতা ও সময়মতো সেচ সরবরাহের ফলে ধানের শীষ ভালো হয়েছে এবং রোগবালাই তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এ বছর ধানের ভালো ফলন ও বেশি দাম পাওয়ার আশায় খুশি ধান চাষিরা। বিঘা প্রতি ২৪ থেকে ২৫ মণ ধানের ফলন হবার কথা জানান চাষিরা।
আরও পড়ুন: নাসিরনগরে আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এতদিন কৃষকদের ধানের জমি চাহিদা মোতাবেক পানি না পাবার কারণে ভালো ফলন ফলানো সম্ভব হয়নি৷ তবে এ বছর থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পানি পাবে কৃষকরা। চাহিদা মত পানি পাওয়ায় বাম্পার ফলন হবে বোরো ধানে। এছাড়া বাজারে প্রতিমণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে। যা বিগত বছরের চেয়ে বেশি।
জেলার দিলালপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আগে পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় ধানের উৎপাদন অনেক কম ছিল। বিগত বছরে যেখানে ৫/৬ মণ ধান হয়েছিল, এবার সেখানে ২৪/২৫ মণ ধান হবে।
আরও পড়ুন: সাভারে পাচারকালে পিকআপসহ সাড়ে ৬ লাখ টাকার টিসিবি’র পণ্য জব্দ, আটক-১
আরেক কৃষক আব্দুল বারী জানান, আগে যখন ব্যক্তিগত ডিপ টিউবওয়েল বা অন্যকোন উপায়ে সেচ দিতে হতো, তখন খরচ অনেক বেশি পড়তো। এবার বিএডিসির প্রকল্পে অল্প খরচে ভালোভাবে ধান চাষ করতে পেরেছি। অকেজো ১৪ টি গভীর নলকূপ চালুসহ সেচ সুবিধা আরো বাড়ানো হলে কৃষকরা আরো উপকৃত হবে।
উপজেলা কৃষি অফিস ও বিএডিসি অফিস জানায়, লালপুর উপজেলায় বিএডিসি ও বরেদ্র বহুমুখী উন্নয়ন কতৃপক্ষের ২৭ টি ও ব্যক্তি মালিকানায় ১৯৫ টি বিদ্যুত চালিত পাম্পের মাধ্যমে জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। এতে এ বছর বোরো ধানের লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে বোর ধান চাষের লক্ষমাত্রা থাকলেও ১ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে বোর ধানের চাষ হয়েছে। এ থেকে ৬ হাজার ৩৩০ মেক্ট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
ধান ব্যবসায়ী আ. মতিন মৃধা বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর শুরুতেই কৃষক তার ধানের সঠিক দাম পাচ্ছে, আমরা মিনিকেট ধান কিনছি এক হাজার পাঁচশ টাকা করে এবং আব্দুল গুটি ও কাটারিভোগ সব গুলো ধানের দাম এবার একটু বেশি হয়তো আরও দাম বাড়তে পারে বলে ধারনা করছি।
লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, সেচ সুবিধার পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েছেন। ফলে সঠিক সময়ে সার ও কীটনাশক প্রয়োগসহ আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির ব্যবহার কৃষকদের ফলন বাড়াতে সহায়তা করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ ‘বাংলাবাজার পত্রিকা’কে জানান, “আশেপাশের জেলা থেকে প্রচুর পরিমান ধানকাটা শ্রমিক সিংড়ার প্রতিটি গ্রামে আসতেছে তাছাড়াও কমবাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়েও কৃষক তার জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলছে। চলতি মৌসুমে সিংড়া উপজেলায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের ফলন বেশি এবং তেমন কোনো পোকা মাকড়ের প্রভাব পড়েনি৷ কৃষি জমিতে আমাদের কর্মরত ফিল্ড অফিসারগন সবাই কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছেন৷ এ বছর দাম ভালো হওয়ায় কৃষক লাভের মুখ দেখবে বলে আশা করছি৷ এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ শতাংশ ধান ইতিমধ্য কর্তন শেষ হয়েছে৷ আশা করছি আর কিছুদিনের মধ্যে বাঁকি ধান কর্তন শেষ হবে।”