অভিযানের নামে ঘুষ বাণিজ্য

ঘুষের টাকা জব্দে মাদক কর্মকর্তার অফিস সিলগালা

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার পত্রিকা রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৮:৪৫ অপরাহ্ন, ০৯ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ৩:৪২ অপরাহ্ন, ১০ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

মাদকবিরোধী অভিযানের নামে টঙ্গীতে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ও চেক নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক গোয়েন্দা মারফিয়া আফরোজ এর বিরুদ্ধে। বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তার অফিস কক্ষটি সিলগালা করে রেখেছে। খবর পেয়ে অভিযুক্ত গোয়েন্দা কর্মকর্তা আফরিন অসুস্থতা দেখিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও অন্যান্য সূত্র জানায়, গত ২২ জুন সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় ঢাকা বিভাগীয় সহকারী পরিচালক গোয়েন্দা মারফিয়া আফরোজের নেতৃত্বে টঙ্গী থানার ৭৩/৪ দক্ষিণপাড়া জুয়েল হুসাইন বাসার তৃতীয় তলার উত্তর পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া রমিজ উদ্দিনের বসত ঘরে তল্লাশি চালানো হয়।

আরও পড়ুন: ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাতিলের দাবিতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মানববন্ধন

টঙ্গী পশ্চিম থানার মামলার এজাহারে বাদী সরকারি পরিচালক মারফিয়া উল্লেখ করেন, সেখানে অভিযানের সময় তিনটি প্যাকেট থেকে ১৫ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল উদ্ধার করা হয়। আসামি রমিজ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে টঙ্গী থানায় সোপর্দ করা হয়। রমিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ট্যাবলেট সংরক্ষণ, বহন এবং বিক্রির অভিযোগ আনা হয়। উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য ও অন্যান্য মালামাল জব্দ করে অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনার পরপরই আসামি পক্ষ ও পরিবারের সদস্যরা মামলার এজাহার দেখে অভিযোগ করেন যে অভিযানের সময় উদ্ধারকৃত মালামালের অনেক কিছুই এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি।

আরও পড়ুন: ফের ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম রবি শিক্ষার্থীদের

সহকারী পরিচালক উদ্ধারকৃত চেক ও অন্যান্য মালামাল আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নিজ জিম্মায় অফিসে জমা রেখেছেন। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বরাবরে ভুক্তভোগী ও টিমের অন্যান্য সদস্যরা অভিযোগ দিলে, তাৎক্ষণিকভাবে সহকারী পরিচালক গোয়েন্দার অফিস কক্ষটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গিয়ে সিলগালা করেন।

বুধবার বিকালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন অতিরিক্ত ডিআইজি বশির আহমদের নেতৃত্বে সিনিয়র কর্মকর্তারা তল্লাশি চালান। অফিস কক্ষটির তল্লাশির পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আবার সিলগালা করে রাখা হয়। এ সময় অতিরিক্ত পরিচালক গোয়েন্দা বদর উদ্দিন, অতিরিক্ত পরিচালক ঢাকা বিভাগ, উপ-পরিচালক গোয়েন্দা খুরশিদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে পরিচালক (অপারেশন) অতিরিক্ত ডিআইজি বশির আহমদের সাথে কথা বললে তিনি বাংলাবাজার পত্রিকাকে জানান, “বিষয়টি আমরা এখনই কিছু বলছি না। আপনাদের প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে আপনারা লিখুন।” তিনি ঘটনাটি পরে বিস্তারিত জানাবেন বলেও জানান।

এদিকে অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া সহকারী পরিচালক গোয়েন্দা মারফিয়া আফরোজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে উদ্ধার করা একটি কোটি টাকার মোটা অংকের চেক ও বিপুলসংখ্যক মালামাল থাকার পরও তা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানার পরেই সহকারী পরিচালকের অফিস কক্ষ সিলগালার খবর পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান মারফিয়া আফরোজ। তবে একটি সূত্র জানায়, অসুস্থতার কথা বলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সহকারী পরিচালক।

টঙ্গীর ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া অন্যান্য কর্মকর্তারা হলেন পরিদর্শক সাহরিয়া শারমিন, উপ-পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ জান্নাতুল ফেরদাউস, সহকারী উপ-পরিদর্শক আতাবুল হক, সিপাহী সোহেল রানা, সাইমুম হাসান গান ও লুৎফর রহমান।

প্রসঙ্গত, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে কর্মকর্তাদের মাদকবিরোধী অভিযানের নামে লুটপাট ও আত্মসাতের ঘটনা সম্প্রতি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। গত দুই দিন আগেও টাঙ্গাইলে অভিযানের নামে লুটপাটের ঘটনায় তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।