শিশু সাজিদের জানাজায় হাজারো মানুষের ঢল, দাফন সম্পন্ন

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১:১৩ অপরাহ্ন, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোরে গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে মৃত্যু হওয়া দুই বছরের শিশু সাজিদকে শেষ বিদায় জানাতে শুক্রবার সকাল থেকেই শোকে ডুবেছে পুরো কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রাম। সকাল সাড়ে ১০টায় নেককিড়ি কবরস্থানসংলগ্ন মাঠে জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

মসজিদের মাইকে সকাল থেকে বারবার ঘোষণা ভেসে আসে— কোয়েলহাট পূর্বপাড়া নিবাসী রাকিব উদ্দীনের শিশু সন্তান সাজিদ মারা গেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই থমকে যায় গ্রামের স্বাভাবিক কার্যক্রম। মাঠে কেউ কাজে যাননি, বেশিরভাগ দোকানপাটও বন্ধ ছিল। পুরুষেরা পাঞ্জাবি ও টুপি পরে দলে দলে ছুটে যান সাজিদের বাড়ির দিকে—একবার শেষবারের মতো দেখতে সেই নিষ্পাপ মুখটি, যেখানে প্রতিদিন হাসি ছিল, অথচ আজ নিস্তব্ধতা।

আরও পড়ুন: ভৈরবে নিজ বাড়ির গেইটের নৌকার ডিজাইন অপসারণ করলেন আওয়ামী নেতা

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাজিদের মরদেহ গ্রামে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়ে পুরো পরিবার। এর আগে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ৪০ ফুট মাটি খনন করে ৩২ ঘণ্টা প্রচেষ্টার পর রাত ৯টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জানাজার মাঠে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে। গ্রামের প্রবীণ থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া ছেলেরা—সবার চোখেই ছিল অশ্রু। সাদা কাপড়ে মোড়ানো সাজিদের ছোট্ট দেহ যখন মাঠে আনা হলো, চারদিকে কান্নার রোল পড়ে যায়। মা ছুটে যেতে চাইলে স্বজনরা তাকে ধরে রাখেন, কিন্তু কারও পক্ষে তার কান্না থামানো সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন: তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে নরসিংদীতে বিএনপির আনন্দ মিছিল

জানাজার নামাজ পড়ান কাজী মাওলানা মিজানুর রহমান। জানাজা শেষে হাজারো মানুষ হাত তুলে সাজিদের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারকে ধৈর্য ধরার শক্তি দেওয়ার জন্য দোয়া করেন।

জানাজা শেষে যখন ছোট্ট কফিনটি কবরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন চারদিকের বাতাস যেন থমকে যায়। শুধু শোনা যাচ্ছিল স্বজন আর গ্রামবাসীর হাহাকার। একটি শিশুর জানাজায় পুরো গ্রামের এমন সমবেত উপস্থিতি আগে কখনো দেখেননি স্থানীয়রা।

বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খেলতে গিয়ে গভীর নলকূপের অরক্ষিত গর্তে পড়ে যায় সাজিদ। সেই গর্তে এক বছর আগে বোরিং করা হলেও পানির সন্ধান না পাওয়ায় এটি খোলা অবস্থায় পড়ে ছিল। সেই অবহেলাই কেড়ে নিল এক ছোট্ট প্রাণ—যার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ পুরো কোয়েলহাট পূর্বপাড়া।