দেশের গরুতেই মিটবে চাহিদা, দেশীয় পশুতে কোরবানি

Sanchoy Biswas
মো. মামুন হাসান
প্রকাশিত: ৩:১৯ অপরাহ্ন, ০৫ জুন ২০২৫ | আপডেট: ৮:২৭ পূর্বাহ্ন, ০৭ জুন ২০২৫
মো. মামুন হাসান: সিনিয়র তথ্য অফিসার (তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ছবিঃ সংগৃহীত
মো. মামুন হাসান: সিনিয়র তথ্য অফিসার (তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ছবিঃ সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল আজহা সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একটি অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসবের প্রধান ও অন্যতম অনুষঙ্গ গবাদিপশু কোরবানি। কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য সারাদেশে গবাদিপশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ এবং পশুর অবাধ পরিবহণ নিশ্চিতকরণ প্রয়োজন। এছাড়া নিরোগ ও স্বাস্থ্যবান পশুর ক্রয়-বিক্রয় এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশু কোরবানি অপরিহার্য। সকলের জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ নিশ্চিতকরণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগে প্রাণিস্বাস্থ্য সেবা প্রদান, প্রাণীর উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে প্রাণিজ আমিষের চাহিদাপূরণে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।

সামনে ঈদুল আজহা, কোরবানির পশুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের পছন্দের শীর্ষে থাকে গরু। গরু নিয়েই যত হৈহুল্লোড় শুরু হয়। গরুর পরই কোরবানির তালিকায় থাকে ছাগল। গরু ও ছাগলের পাশাপাশি ভেড়া, মহিষ কোরবানির তালিকায় থাকে। তবে গরুর চাহিদা হলো সবার শীর্ষে। চাহিদা ও প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মনে করে এবার দেশীয় পশু দিয়েই মিটবে কোরবানির শতভাগ চাহিদা। তাই কোরবানির জন্য বাইরের দেশ থেকে পশু আমদানির  প্রয়োজন পড়বে না। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং  প্রাণিসম্পদ  অধিদপ্তর দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা নিরূপণ করেছে। এ বছরে কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্টকৃত গবাদিপশুর মধ্যে ৫৬ লক্ষ ২ হাজার ৯০৫ টি গরু-মহিষ, ৬৮ লক্ষ ৩৮ হাজার ৯২০ টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২ টি অন্যান্য প্রজাতিসহ সর্বমোট ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩৩৭ টি গবাদিপশুর প্রাপ্যতা আশা করা যাচ্ছে। 

আরও পড়ুন: গণ আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে হতাশার মুখোমুখি

প্রাণিসম্পদের জেলা ও  বিভাগীয় অফিসের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে  প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে বর্তমানে দেশে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৫৪৪ টি খামার রয়েছে। আমদানি বন্ধ থাকায় সারা দেশে প্রচুর গবাদিপশুর খামার গড়ে উঠেছে। ছোট মাঝারি-বড় সব ধরনের উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে দেশের এ খাতে। এর ফলে গবাদিপশুর উৎপাদন বিগত কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। অধিদপ্তর আরো বলছে ঢাকা বিভাগে কোরবানিযোগ্য পরাদিপশুর চাহিদা রয়েছে ২২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮৫ টি আর প্রাপ্যতা রয়েছে ১৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৭ টি; এবিভাগে ঘাটতি ৮ লাখ ৬৫ হাজার ১১৮টি গবাদিপশু। চট্টগ্রাম বিভাগে চাহিদা রয়েছে ১৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬০৯ টি আর প্রাপ্যতা রয়েছে ১৯ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪ টি; এবিভাগে উদ্বৃত্ত ২৭ হাজার ৪৬৫ টি গবাদিপশু। রাজশাহী বিভাগে চাহিদা রয়েছে ২৬ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮৩ টি আর প্রাপ্যতা রয়েছে ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯ টি; এবিভাগে উদ্বৃত্ত ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৬৬ টি গবাদিপশু। খুলনা বিভাগে চাহিদা রয়েছে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮৯ টি আর প্রাপ্যতা রয়েছে ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭৮ টি; এবিভাগে উদ্বৃত্ত ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৮৮৯ টি পবাদিপশু। বরিশাল বিভাগে চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৫২টি আর প্রাপ্যতা রয়েছে ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৮ টি ; এবিভাগে উদ্বৃত্ত ৬৫ হাজার ২৯৬ টি পবাদিপশু। সিলেট বিভাগে চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৭৭টি আর প্রাপ্যতা রয়েছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৫১৫ টি; এবিভাগে উদ্বৃত্ত ৩৭ হাজার ৩৮ টি গবাদিপশু। রংপুর বিভাগে চাহিদা রয়েছে ১৪ লাখ ১২ হাজার ১৪৬টি আর প্রাপ্যতা রয়েছে ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৪১৩ টি ; এবিভাগে উদ্বৃত্ত ৫ লাখ ৬৮ হাজার ২৬৭ টি গবাদিপশু। ময়মনসিংহ বিভাগে চাহিদা রয়েছে ৪ লাখ ১৫ হাজার ২৬১টি আর প্রাপ্যতা রয়েছে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ২৯৩ টি; এবিভাগে উদ্বৃত্ত ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩২ টি গবাদিপশু। তাই দেখা যাচ্ছে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা ২০২৫ এ কোরবানি গবাদিপশুর চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৮২ হাজার ২৮২ টি গবাদিপশু আর প্রাপ্যতা রয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫৭ টি গবাদিপশু। সার্বিক চিত্র থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মনে করে চাহিদার তুলনায় এবছর কোরবানিতে প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫ টি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।  

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশীয় পশুতেই এবারের কোরবানির যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছে। যে কারণে পশু আমদানি প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। পশু অনুপ্রবেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। আর এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে পশু উৎপাদন বেড়েছে। সব মিলিয়ে এবারের কোরবানির অর্থনীতি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়াবে বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীর: আলাদা পরিচয় থেকে জাতীয় মূলধারায়

এবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মোট ১১টি হাট ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ১টি ছাট সহ সর্বমোট হাটের সংখ্যা-২০টি। সিটি কর্পোরেশনসহ সারাদেশে সম্ভাব্য মোট হাটের সংখ্যা ৫ হাজার ৬০০টি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে দেশে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের সম্ভাব্য সংখ্যা ২ হাজার টি। প্রতিটি হাটে একটি করে টিম দায়িত্ব পালন করবে। বড় বাজারের ক্ষেত্রে একাধিক টিম দায়িত্ব পালন করবে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গবাদিপশুর অবৈধ অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ আছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। কোরবানির ঈদে বাজার যেন কেউ অস্থিতিশীল করতে না পারে, চাঁদাবাজির কারণে পশুর দাম যেন না বাড়ে সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। 

খামারি ও ক্রেতাসাধারণের জন্য অধিদপ্তর নানাবিধ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে পশুকে খামার থেকে হাটে/হাট থেকে বাড়িতে নেয়ার জন্য বাহন ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। এছাড়া খাদ্যগ্রহণ, মলমূত্র ত্যাগ ও চলাফেরা স্বাভাবিক কিনা দেখে পশু ক্রয়-বিক্রয়; পশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিষ্কার পানি ও স্বাভাবিক খাদ্য; শশুকে জোর করে কোন কিছুই না খাওয়ানো ; নির্দিষ্ট স্থানে জবাই করা এবং জবাই স্থান দ্রুত পরিষ্কারের ওপর জোর দিয়েছে। সতর্কতার সাথে চামড়া ছাড়াতে হবে মনে রাখতে হবে- চামড়া দেশের সম্পদ।

সরকার কোরবানি ২০২৫ উদ্‌যাপন উপলক্ষে জরুরি প্রয়োজনে হটলাইন চালু করেছে। পুলিশ কন্ট্রোল রুম হটলাইন (০১৬২০০০১২২২, ০১৬২০০০১২৬০), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম হটলাইন (১৬০৫৮), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জরুরি সেবা (০১৭১৪৬৭৬৬০০) চালু আছে।

সুস্থ গবাদি পশু চেনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, সাধারণভাবে চাঞ্চল্যকর থাকবে ও জাবর কাটবে; নাকের চারপাশে কালো/লাল অংশ ভেজা ভেজা ও চকচকে এবং বিন্দু ঘাম থাকবে; কান খাড়া থাকবে এবং লেজ নড়া চড়া করবে; দৈহিক তাপমাত্রা স্বাভাবিক (১০১-১০২ ফারেনহাইট) থাকবে; আঙুল দিয়ে ২০-৩০ সেকেন্ড চাপ দিয়ে ধরে থাকলে সুস্থ পশুর চামড়ায় কোনগর্ত সৃষ্টি হবেনা।

অসুস্থ গবাদি পশু চেনার ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে  হরমোন ইত্যাদি প্রয়োগ করা গরুর মাংসপেশি থেকে শুরু করে শরীরের অন্য অঙ্গগুলো অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়; গরুর শরীরে পানি জমার কারণে বিভিন্ন অংশে চাপ দিলে সেখানে গর্ত হয় দেবে যাবে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় নেবে; অতিরিক্ত ওজন হওয়ায় এসব গরু স্বাভাবিক নাড়াচাড়া ও চলাফেরা করতে পারেনা এবং শান্ত থাকে; বর্ণিত গরু ভীষণ ক্লান্ত থাকে ও ঝিমায়।  অন্যদিকে অসুস্থ গরুর নাক থাকবে শুকনো; ওষুধ খাওয়ানো গরুর ফুসফুসসহ শরীরের অঙ্গগুলো নষ্ট হতে শুরু করায় এগুলোর শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিক থাকে- মনে হচ্ছে হাঁপাচ্ছে; অসুস্থ গরুর মুখ থেকে প্রতিনিয়ত লালা ঝরে আর এসব গরু কিছু খেতে চায় না।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) কর্তৃক উদ্ভাবিত গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে তা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। বিএলআরআই বলছে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মাধ্যমে ৯০-১২০ দিন গরু পালন করা হয় এবং উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে দেশি গরুর দৈনিক ওজন বৃদ্ধি ৫০০-৬০০ গ্রাম এবং উন্নত/সংকর জাতের ক্ষেত্রে ৮০০-১১০০ গ্রাম হয়ে থাকে। আমাদের অনেকের ধারণা গবাদিপশুর মোটাতাজাকরণের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর স্টেরয়েড, অ্যান্টিবায়োটিক ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এখন আর তা দেখা যাচ্ছে না। আর তাই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে খামারিদের প্রশিক্ষণ চলমান আছে এবং জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে। গোখাদ্যে ক্ষতিকর উপকরণ মেশানো প্রতিরোধে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করে যাচ্ছে। কেউ যদি নিষিদ্ধ ক্ষতিকর বা প্রতারণামূলক উপকরণ গোখাদ্যে মেশায় এবং তা মেশানোর প্রমাণ পেলে গোখাদ্য আইন, ২০১৩ এর ৩২ ধারা অনুসারে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ইতোমধ্যে ৫৩ হাজার ২৬৩টি খামার পরিদর্শন করে খামারিদের স্টেরয়েড হরমোনের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লালনপালন বিষয়ে ৮৩ হাজার ৬৫৬ জন খামারিকে প্রশিক্ষণ; ৬ হাজার ৬০০টি উঠান বৈঠক; ২ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৮টি জনসচেতনতামূলক লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে।

কোরবানি পশু পরিবহনে সরকার বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এবার বাসে বা পরিবহনের লকআপে ছাগল ও ভেড়া পরিবহণ না করে সেবিষয়ে সচেতনতাসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। গবাদিপশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ পরিহার করার লক্ষ্যে প্রাণিকল্যাণ আইন ২০১৯ এর ওপর জোর দিয়েছে সরকার। প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ, সদয় আচরণ প্রদর্শন এবং দায়িত্বশীল প্রতিপালনের মাধ্যমে প্রাণিকল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে এবং এর ব্যত্যয় হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

ঈদুল আজহা মানেই চামড়ার মৌসুম। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে এ মৌসুমে গরু ও মহিষের চামড়া থেকে ৭২৯ কোটি টাকা এবং ছাগল ও ভেড়ার চামড়া থেকে ৫৮ কোটি টাকাসহ মোট ৭৮৭ কোটি টাকার সমপরিমাণ আয় এ শিল্প থেকে করা সম্ভব। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি এবং এর ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি দীর্ঘদিন ধরে একটি জটিল সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। এ খাতে শৃঙ্খলা আনতে এবং সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে দেশের অভ্যন্তরে চামড়ার দাম নির্ধারণ ও তা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। কোরবানির চামড়ার বিক্রয়লব্ধ অর্থের মালিক দরিদ্র, এতিম ও মিসকিন। চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প যথাযথ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে কেবল কোরবানিকেন্দ্রিক মৌসুমি ব্যবসা হিসেবে সীমাবদ্ধ না থেকে বছরব্যাপী কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি সম্ভাবনাময় খাতে পরিণত হতে পারে। তাই কোরবানির চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও এর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা শুধু সরকারের নয়, বরং আমাদের সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব।

কোরবানির সময় শুধু ধর্মীয় বিধান পালনই নয়, পরিবেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই করা; রক্ত মল ও অন্যান্য বর্জ্য একত্রে করে গর্তে পুতে ফেলা; জবাইয়ের স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করে ব্লিচিং পাউডার ও চুন ছিটাতে হবে। আর পরিবেশ যেন কোনোভাবেই দূষিত না হয় তা নিশ্চিত করা আমাদেরই দায়িত্ব।

কোরবানির সময় দেশীয় পশুর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া শুধু অর্থনৈতিকভাবেই নয়, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের দিক থেকেও উপকারী। দেশি পশু ব্যবহারে স্থানীয় খামারিরা লাভবান হন, দেশীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হয় এবং অসুস্থ বা অনিরাপদ আমদানিকৃত পশুর ঝুঁকি কমে যায়। তাই দেশের গরু দিয়েই চাহিদা পূরণ করাই সময়োপযোগী ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত। তাই আসুন, দেশি পশুর কোরবানির মাধ্যমে প্রাণিসম্পদের বিশাল এ খাতকে রক্ষা করি ও দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করি। 

মো. মামুন হাসান: সিনিয়র তথ্য অফিসার (তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়