কারাগারকে স্বচ্ছ মানবিক প্রতিষ্ঠান করা হচ্ছে আইজি প্রিজন্স

সাত মাসে ১২ জনকে চাকরিচ্যুত, ৮৪ জনকে বরখাস্ত কারা অধিদপ্তরে

Any Akter
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২:৩৬ অপরাহ্ন, ১০ মার্চ ২০২৫ | আপডেট: ৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন বলেছেন কারা অধিদপ্তর গত সাত মাসে  নানা অনিয়ম, অর্থ লেনদেনসহ অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে  ১২ জনকে চাকরিচ্যুত, ৬জনকে বাধ্যতামূলক অবসর, ৮৪ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।  পাশাপাশি একই সময়ে  ২৭০জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদানসহ ২৬০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে।  সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে পুরান ঢাকার বকশিবাজারস্থ কারা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন ।

তিনি বলেন আর্থিক লেনদেন ব্যতীত কারাগারে বন্দিদের তাদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী খাবারসহ অন্যান্য সুবিধাদি নিশ্চিতের জন্য জেল সুপার এবং ডিআইজিদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।৷   নিয়ম ভঙ্গকারী কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের কোনরূপ ছাড় দেওয়া হচ্ছেনা এবং নিয়ম ভঙ্গকারীদের অতি দ্রুততার সাথে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে। তারই ফল স্বরূপ সাত মাসে ১২ জনকে ডাকুরিচ্যুত, ৬ জনকে বাধ্যতামূলক অবসর, ৮৪ জনকে সাময়িক বরখাস্ত, ২৭০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান, বিভাগীয় মামলা দায়ের ২৬০ জনের বিরুদ্ধে, ২৯ জনকে কৈফিয়ত তলব, ২১ জনকে চূড়ান্ত সতর্ক, ৩৯ জনকে তাৎক্ষনিক বদলী এবং ১০২ জনকে প্রশাসনিক কারণে বিভাগের বাইরে বদলী করা হয়েছে। কারা সদর দপ্তর নিশ্চিত করছে যে, বর্তমান প্রশাসন যেকোন ধরণের অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না।

আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী প্রধানের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই: আইএসপিআর

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সকল কারাগারকে স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতামূলক হিসেবে গড়ে তুলার লক্ষ্যে বর্তমান প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। "রাখিবো নিরাপদ দেখাবো আলোর পথ" এই মূল মন্ত্রকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জেল ডিপার্টমেন্টকে একটি মানবিক সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলার জন্য ইতোমধ্যেই নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং আরো বেশ কিছু পদেক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন। 

বন্দি ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নের নানা কার্যক্রমের ফিরিস্তি তুলে ধরে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নানামূখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- . দেশব্যাপী বন্দি সংক্রান্ত যে কোন তথ্য সংগ্রহের জন্য হটলাইন চালু করণ,  বন্দিদের সাক্ষাতকারে ভোগান্তি কমানোর জন্য ডিজিটাল ভিজিটর ম্যানেজমেন্ট চালুকরণ, 

আরও পড়ুন: দুর্নীতির তদন্তে সাবেক গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের ব্যাংক হিসাব তলব

আভ্যন্তরীণ বন্দি ব্যবস্থাপনা সহজীকরণের লক্ষ্যে comprehensive বন্দি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার চালুকরণ। যাতে, পিসি ক্যাশ, টেলিফোন কথোপকথন, ক্যান্টিন ম্যানেজমেন্ট এবং বন্দিদের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়াদী অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং ধাপে ধাপে তা আর এফ আইডির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালনকারী কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বডিক্যাম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করণ, ৬৯টি কারাগারকে নিজস্ব ফাইবার নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটির আওতায় আনায়ন যা কারা ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা জোরদারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশের কারাগারসমূহে ধারণক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত বন্দির অবস্থান একটি সার্বক্ষনিক সমস্যা উল্লেখ করে সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন বলেন, এ ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ (যা মেট্রোপলিটন কারাগার হিসেবে পরিচিত) চালু করা হয়েছে এবং কেরাণীগঞ্জে আরকটি বিশেষ কারাগার চালুর উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।  এছাড়া রংপুর, রাজশাহীসহ বেশ কয়েকটি পুরনো কারাগার সম্পসারনের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দিদের নিরাপদ উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। 

তিনি আরো বলেন,  কারা অধিদপ্তর দ্যর্থহীন কণ্ঠে জানাতে চায়, কারাগারের আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনাসহ অনিয়ম দুর্নীতি দূর করার জন্য কারা সদর দপ্তর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কারাগারকে মাদক এবং মোবাইল মুক্ত করার জন্য গত ৩ মাসে শুধুমাত্র কেরাণীগঞ্জ কারাগারেই ২৭৫টি ঝটিকা তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং ফলস্বরূপ কারা অভ্যন্তর হতে বিপুল পরিমান নগদ অর্থসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছোট বাটন ফোন এবং মাদক উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের তৎপরতায় কারাগারে মাদক প্রবেশ করানোর বেশ কয়েকটি উদ্যোগও ব্যর্থ করে দেয়া সম্ভব হয়েছে। ক্যান্টিন দ্রব্যসামগ্রীর মান এবং মূল্য নিয়ন্ত্রনে কঠোর নজরদারী করা হচ্ছে।  এতো নজরদারির পরও কারা অধিদপ্তর মনে করে অনেক ক্ষেত্রে আরো উন্নতির অবকাশ রয়েছে। বিশেষ করে গত ১৫/১৬ বছরের অনিয়ম দূর্নীতিতে অভ্যস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনা সহজ নয়, কিন্তু তা চলমান রয়েছে এবং আমরা আশবাদী অদূর ভবিষ্যতে এর সুফল কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কারাগারের সেবা প্রত্যাশীরা উপভোগ করবে। একটি মহল দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে দাবি করে কারা মহাপরিদর্শক বলেন,  দীর্ঘ ১৫ বছরের অনৈতিক সুবিধাভোগীদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দ্রুত সংস্কার/পরিবর্তন করা বড় একটি চ্যালেঞ্জ। তথাপিও কারা বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান তিনি।