লালশাক চাষে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য

Sadek Ali
মো. মাসুদ রানা, কুমিল্লা
প্রকাশিত: ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ৯:৪৫ অপরাহ্ন, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

কুমিল্লার গোমতী নদীর বিস্তীর্ণ বালুচরে এখন সবুজের ছোঁয়া। কোথাও মুলা, কোথাও আলু, কোথাও আবার লাল শাকের লালচে আভা। চরের বাতাসে মিশে আছে সবুজের ঘ্রাণ আর কৃষকদের পরিশ্রমের ঘাম। 

এই চরে ফসল ফলিয়ে ভাগ্য বদল করছেন স্থানীয় কৃষকেরা। তাঁদের একজন রফিক মিয়া । প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি গোমতীর বিস্তীর্ণ বালুরচরে লাল শাক চাষ করেন। এবার শীতের আগাম সবজি হিসেবে মুলা চাষের পাশাপাশি ৪০ শতাংশ জমিতে লালশাক চাষ করেছেন । জমি তৈরি, বীজ, সেচ ও সার মিলে তার মোট খরচ হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে পাইকাররা তাঁর ক্ষেত দেখে ৯৫ হাজার টাকায় লাল শাকের বায়না করে গেছেন। ৭-৮ দিন পর তারা শ্রমিক নিয়ে এসে ক্ষেত থেকে শাক তুলে নিয়ে যাবেন বাজারে। 

আরও পড়ুন: কুমিল্লায় করলা চাষে বাম্পার ফলন, কৃষকদের মুখে হাসি

গত সোমবার  বিকালে কুমিল্লা সদর উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের আমতলী গ্রামের গোমতীর চরের গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা সারিবদ্ধভাবে জমি থেকে মুলা তুলে মাঠে বিছিয়ে রাখছেন। বিছিয়ে রাখা সাদা মুলায় যেন ঝলমল করছে সূর্যের আলো। পাশে কয়েকজন নারী শ্রমিক নিরানি দিচ্ছেন লাল শাকের জমিতে। কেউ কেউ গোল আলু চাষের জন্য মাটি তৈরি করছেন। মাটির গন্ধে ভরে গেছে পুরো চরাঞ্চল। সব মিলিয়ে গোমতীর চর এখন কর্মব্যস্ত এক কৃষিক্ষেত্র।

প্রায় ১৬ বছর ধরে গোমতীর চরে কৃষকের সঙ্গে কাজ করের রংপুর ও ঠাকুরগাও জেলার জসিম উদ্দিন ও বিল্লাল হোসেন বলেন, এই চর আমাদের বাড়ি-ঘর হয়ে গেছে। এই চরে জমি প্রস্তত থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত স্থানীয় কৃষকের সঙ্গে কাজ করি। একে এক দিন একে এক কৃষকের কাজ করি। এ ১৬ বছরে অনেক কৃষককে দেখেছি তারা এই চরে ফসল চাষ করে কোটিপতি হয়েছেন। গোমতীর চরের মাটি উর্বর, এখানে যে বীজ ফেলা হয় তা থেকেই ফসল হয়। এখন চরের একাংশে লাল শাক চাষ হয়েছে। ২/৩ দিন পর আগাছা পরিষ্কার করলে ১০/১২ দিনের মধ্যে পাইকারের ফসল তুলতে মাঠে আসবেন।  

আরও পড়ুন: আগাম সবজি চাষে চরাঞ্চলে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা

কৃষক শাহ আলম বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্ষেতের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। লাল শাকে নিরানি দিতে হয় প্রায় তিন দফায়, এতে শাকের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং পাতা বড় ও রঙ গাঢ় হয়। দুই মাসের মধ্যেই লালশাক পরিপক্ক হয়ে যায়। লাল শাক তুলে বাজারে নেওয়ার ঝামেলা নেই, জমি থেকেই পাইকারের এসে ফসল তুলে ট্রাকে ভরে বাজারে নিয়ে যায়। দুই মাসে ৩৫ শতাংশ লালশাক জমিতে ১০/১২ হাজার টাকা খরচ হবে। ৭/৮ দিন পর পাইকার এসে ক্ষেত থেকেই লালশাক তুলে নিয়ে যাবে। এবার শুধু লালশাকে খরচ বাদে ৯০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। লাল শাকের তোলার পর জমি তৈরী করে গোলআলু ও মিষ্টি কুমড়া লাগাবো। শীতকাল জুড়ে এ অঞ্চলের কৃষকেরা মুলা, লাল শাক, আলু, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি ও ধনে পাতাসহ নানা শীতকালীন ফসল ফলিয়ে ভালো আয় করেন। 

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, গোমতীর চর এখন অনেক কৃষকের জীবিকার মূল ভরসা। গোমতীর চরের মাটি উর্বর এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় চরে প্রচুর লালশাকের আবাদ হয়েছে। চরের অধিকাংশ কৃষকই অভিজ্ঞ। তাঁরা জানেন কোন সৃজনে কোন ফসল ভালো হয়। শীতের আগাম চাষ হিসেবে এই চরে লাল শাকের পাশাপাশি নানা জাতের সবজি চাষ হয়েছে। আমি নিজেই চরের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছি। আরও কিভাবে ভালো ফসল উৎপাদন করা যায় সে পরামর্শ দিয়েছি। কৃষকেরা যদি আধুনিক কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তাহলে এই চর একদিন জেলার অন্যতম সবজি উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠবে।