জাকসু নির্বাচন
ভাঙা হাত নিয়েই প্রচারণা চালাচ্ছেন ছাত্রদলের আবিদুর

জুলাইয়ের উত্তাল আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের নির্যাতনে হাত ভাঙে এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে মাথায় স্পিন্টার বিদ্ধ হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা মো. আবিদুর রহমানের। কিন্তু তারপরও দমে যাননি। শিক্ষার্থীদের অধিকার ও ন্যায্যতার দাবিতে নিজের ওপর ঘটে যাওয়া নিপীড়নের প্রতীক হয়ে তিনি এখন লড়ছেন আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগে ৫২তম ব্যাচের (২০২২-২৩ সেশন) মেধাবী শিক্ষার্থী।
সংস্কৃতি অঙ্গনের এক পরিচিত মুখ আবিদুর ছেলেবেলা থেকেই গান, নাটক ও পল্লী গানের মাধ্যমে নিজেকে বিকশিত করেছেন। মঞ্চে তার প্রাণবন্ত উপস্থিতি আর গানে মুগ্ধ করা কণ্ঠস্বর সবসময়ই দর্শক-শ্রোতাদের মন জয় করে এসেছে। সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে তার এই দীর্ঘ পথচলা তাকে একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আরও পড়ুন: মাহিন সরকারের প্রার্থিতা প্রত্যাহার ইস্যুতে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন ভিপি প্রার্থী জামাল উদ্দিন খালিদ
জাবি ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলে ‘সাংস্কৃতিক সম্পাদক’ পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আবিদুর। জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মিছিলে অংশ নেওয়ার অপরাধে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে নির্মমভাবে মারধর করে তার হাত ভেঙে দেয়। এতেও দমে যাননি তিনি, ভাঙা হাত নিয়েই আবার মিছিলে ফেরেন, যেখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে তার মাথায় স্পিন্টার বিদ্ধ হয়।
আবিদুর বলেন, ‘আমার মাথায় এখনও দুইটি স্পিন্টার রয়েছে। অপারেশন করে পাঁচটি স্পিন্টার বের করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্যতা আদায়ের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলাম, এ আন্দোলন শেষ হয় নি। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের মাধ্যমে এ আন্দোলন চলমান থাকবে।’
আরও পড়ুন: জিয়াউর রহমান হলের সংস্কার ও সমস্যা সমাধানে ১০ দফা দাবি রিয়াদ-রেজাউল পরিষদের
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ১৫ জুলাই রাতে ভিসির বাসভবনে ছাত্রলীগের হামলায় ডান হাতের হাড় ভেঙে যায় আবিদের। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার কথা থাকলেও পরের দিন ১৬ জুলাই ডান হাত বাধা অবস্থায় আন্দোলনের প্রথম সারিতে তাকে দেখা যায়। এরপর ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের যখন সংঘর্ষ হয়, সে সময় পুলিশের গুলিতে মাথায় স্পিন্টারের আঘাতে মারাত্মক আহত হয়ে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।
এদিকে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা আবিদুরের প্রতি অভূতপূর্ব সহানুভূতি ও সমর্থন দেখাচ্ছেন। তার এই লড়াইকে কেবল একটি পদের জন্য নয়, বরং জুলুমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রতিবাদের প্রতিফলন হিসেবে দেখছে তার সহপাঠীরা। আবিদের এই অদম্য স্পৃহা এবং সাহসিকতা অনেককেই মুগ্ধ করেছে, যার ফলে অনেকে মনে করছেন, ১১ সেপ্টেম্বরের জাকসু নির্বাচনে তিনি একটি নতুন ইতিহাস গড়বেন।