সড়ক অবরোধে যানজট বৃদ্ধি, ডিএমপির দুঃখ প্রকাশ

যমুনা অভিমুখে লংমার্চ, ইবতেদায়ি শিক্ষকদের বাধা দিয়েছে পুলিশ

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৭:১১ অপরাহ্ন, ০২ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৭:১১ অপরাহ্ন, ০২ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয়করণের দাবিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি ‘যমুনা অভিমুখে লংমার্চ’ শুরু করতে গিয়ে পুলিশি বাধায় প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তায় বসে পড়েছেন শত-শত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা। এতে রাস্তায়ই বসে পড়েন শত শত শিক্ষক। ফলে পল্টন থেকে কদম ফোয়ারা অভিমুখী সড়কটি বন্ধ হয়ে যায়। এদিন সড়ক অবরোধে যানজট বৃদ্ধির কারণে দুঃখ প্রকাশ করেছে ডিএমপি। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ চিত্র দেখা যায়। 

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শত শত শিক্ষকরা এ সময় ব্যানার, পোস্টার নিয়ে ‘এমন কোনো দেশ নাই চাকরি আছে বেতন নাই’ ‘ইবতেদায়ি শিক্ষক, হয়েছে কেন ভিক্ষুক?’, ‘অবহেলার ৪০ বছর, মানুষ বাঁচে কত বছর’, নাই’, ‘বাড়ি না, রাস্তা? রাস্তা, রাস্তা’, ‘বৈষম্য নিপাত যাক, জাতীয়করণ মুক্ত পাক’, ‘এক দফা এক দাবি, জাতীয়করণ করতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় অসংখ্য পুলিশ সদস্যকে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়। লং মার্চ শুরু করার আগে সমাবেশে একাত্ম জানাতে বক্তব্য রাখেন জামায়তে ইসলামীর নেতাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। এর আগে টানা ২১ দিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন ইবতেদায়ি শিক্ষকরা। দাবির প্রেক্ষিতে কোনো সাড়া না পেয়ে তারা লংমার্চের ঘোষণা দেন।

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা ফ্যাসিবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ: ডাকসু

শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরে দেশের লাখ লাখ ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষককে অবহেলা করছে। তারা দাবি জানান, আজকের মধ্যেই জাতীয়করণের ঘোষণা না এলে আন্দোলন আরও তীব্র করা হবে। তারা জানান, তাদের একমাত্র দাবি—স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোর জাতীয়করণ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না। এদিন জামায়াতে ইসলামী, নাগরিক ঐক্য ও গণ অধিকার পরিষদসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা জাতীয় প্রেসক্লাবে এসে শিক্ষকদের আন্দোলনে সংহতি জানান।

ইবতেদায়ি শিক্ষকদের রাস্তায় অবস্থানে যানজট-ভোগান্তি: জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় বসে পড়ায় ওই সড়কে যানজট তৈরি হয়েছে। দেখা দিয়েছে জনভোগান্তি। অনেকে রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলনের জন্য ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। রোববার দুপুর ২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে লংমার্চ শুরু করলে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের বাধা দেয় পুলিশ। এতে রাস্তায়ই বসে পড়েন শত শত শিক্ষক। ফলে পল্টন থেকে কদম ফোয়ারা অভিমুখী সড়কটি বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা রাস্তায়ই জোহরের নামাজ আদায় করেন। তাদের অবস্থানের কারণে প্রেসক্লাব থেকে পল্টন হয়ে কদম ফোয়ারা অভিমুখী সড়কে অনেক গাড়ি আটকে থাকে, ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। মিরপুরগামী বিআরটিসি বাসের যাত্রী দুলাল বলেন, এদেশের আন্দোলন আর শেষ হবে না। আন্দোলন হলেই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া একটা ট্র্যাডিশন হয়ে গেছে। এতে করে হাজার হাজার মানুষ যে ভোগান্তি হয় সেটা তাদের ভ্রুক্ষেপ নাই। কবে যে এর থেকে মুক্তি পাব, আল্লাহপাক ভালো জানেন।  আরেক যাত্রী তাসলিমা হক বলেন, রাজধানী ঢাকা এখন জ্যাম আর আন্দোলনের শহর হিসেবে পরিণত হয়েছে। আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকের যত ভোগান্তি পোহাতে হয়। যাত্রাবাড়ী থেকে পল্টন আসতে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা।এখন আবার আন্দোলনের কারণে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। আমাদের কথা আসলে কেউ ভাবে না। 

আরও পড়ুন: পুনরায় সক্রিয় করা হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল কমিটি

প্রেসক্লাব এলাকায় দায়িত্বরত এক পুলিশ পরিদর্শক বলেন, আমরা শিক্ষদের বারবার বোঝাচ্ছি রাস্তা ছেড়ে দিতে। এতে করে যাত্রীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু তারা আমাদের কথা মানছেন না। আমরা চেষ্টা করছি গাড়িগুলোকে ডাইভার্ট করে অন্য দিক দিয়ে বের করে দেওয়ার। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এই কর্মসূচিতে আসা শিক্ষকদের হাতে বিভিন্ন রকমের প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন দেখা যায়। তারা ‘এমন কোনো দেশ নাই, চাকরি আছে বেতন নাই’ ‘ইবতেদায়ি শিক্ষক, হয়েছে কেন ভিক্ষুক?’, ‘অবহেলার ৪০ বছর, মানুষ বাঁচে কত বছর’, ‘বাড়ি না, রাস্তা? রাস্তা, রাস্তা’, ‘বৈষম্য নিপাত যাক, জাতীয়করণ মুক্ত পাক’, ‘এক দফা এক দাবি, জাতীয়করণ করতে হবে’-ইত্যাদি লেখা স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষকদের আন্দোলনের সময় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়।

সড়ক অবরোধে যানজট বৃদ্ধি, ডিএমপির দুঃখ প্রকাশ: শত বাধা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও রাজধানী ঢাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে যানজট বেড়ে যাওয়ার কারণে যে জনভোগান্তি তৈরি হয়েছে, সেজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে ডিএমপি। এদিন ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে আজ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি সংগঠন ও গোষ্ঠী একযোগে কর্মসূচি আরম্ভ করে। এতে করে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় রাজধানীর কোথাও কোথাও ব্যাপক জনভোগান্তি ও তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এমপিওভুক্তির দাবিতে ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোট, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়সমূহের স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তকরণ, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তকরণের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে বেশ কয়েকটি সংগঠন অবস্থান করছে। এছাড়া চাকুরীপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট ও ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নন-ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চলছে। যার ফলে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। শত বাধা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে যানজট বেড়ে যাওয়ার কারণে যে জনভোগান্তি তৈরি হয়েছে সেজন্য ডিএমপি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

প্রসঙ্গত, সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণে সরকারের ঘোষণা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে ২১ দিনের মতো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রতিহিংসার কারণে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বিভিন্ন অজুহাতে চাকরি জাতীয়করণের কাজ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সব ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ধাপে ধাপে জাতীয়করণ ঘোষণার ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় পুনরায় আন্দোলনে নামেন ইবতেদায়ি শিক্ষকরা।