দেশে ১ কোটি ৭০ লাখ নারী অপুষ্টিতে ভুগছেন: আইসিডিডিআর,বি

Shakil
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১০:০৫ অপরাহ্ন, ১৬ অগাস্ট ২০২২ | আপডেট: ৭:১২ পূর্বাহ্ন, ০৫ নভেম্বর ২০২২

দেশে ১৫-৪৯ বছর বয়সী ৩ কোটি ৮০ লাখ বিবাহিত নারীর মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ নারী অপুষ্টিতে ভুগছেন। এ সংখ্যা এই বয়সী মোট নারীর ৪৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ৫০ লাখ নারীর ওজন প্রয়োজনের তুলনায় কম এবং ১ কোটি ২০ লাখ নারীর ওজন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। এই উভয় শ্রেণি নারীই অপুষ্টির শিকার।

মঙ্গলবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশি প্রজননক্ষম নারীদের অপুষ্টি একটি দ্বৈত স্বাস্থ্য সমস্যা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। আইসিডিডিআরবি, যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি এবং ডেটা ফর ইমপ্যাক্ট- যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবি গবেষক মহিউদ্দিন হাওলাদার।

আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

অনুষ্ঠানে গবেষকেরা জানান, দেশের নারীদের পুষ্টি পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আগে ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীর উচ্চতা তুলনায় ওজন অনেক কম দেখা যেত। কিন্তু গত ১০ বছরের ব্যবধানে কম ওজন ও বেশি ওজন- উভয় শ্রেণি নারী পাওয়া গেছে। অর্থাৎ দেশে নারীদের ক্ষেত্রে অপুষ্টি দ্বৈত হার অনেক বেড়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের ৪৬ শতাংশ প্রজননক্ষম নারী স্থূলকায় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মূল প্রবন্ধে ২০০৭-২০১৭ সালের জনমিতি, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশে বিবাহিত নারীদের মধ্যে ওজন স্বল্পতাজনিত অপুষ্টি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

আরও পড়ুন: আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে বিদেশ যেতে দেয়া হয়নি

২০০৭ সালে ছিল ৩০ শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালে তা কমে ১২ শতাংশে দাঁড়ায়। অন্যদিকে ২০০৭ সালে ওই বয়সী ১২ শতাংশ নারী ছিলেন স্থূল। ২০১৭-১৮ সালে তা বেড়ে হয় ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে সার্বিকভাবে পুষ্টি পরিস্থিতির কিছুটা হলেও অবনতি হয়েছে। অন্যদিকে নারীদের মধ্যে সুপুষ্টির হার আগের মতোই আছে- ২০০৭ সালে ছিল ৫৮ শতাংশ এবং ২০১৭-১৮ সালে ৫৬ শতাংশ হয়েছে।  

প্রবন্ধে আরো বলা হয়, প্রজননক্ষম নারীদের মধ্যে ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। কারণ বাংলাদেশে বছরে আনুমানিক ৩৪ লাখ শিশুর জন্ম হয়। এর মধ্যে আনুমানিক ৯ লাখ শিশুর জন্ম হয় স্থূলকায় নারীর গর্ভ থেকে এবং ৫ লাখ শিশুর জন্ম হয় কম ওজনের নারীর গর্ভ থেকে।

প্রবন্ধের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বলেন, বর্তমান এ অপুষ্টির অবস্থা চলতে থাকলে, দেশে গর্ভধারণ এবং শিশুর জন্ম- দুটিই স্থূলকায় নারীর গর্ভ থেকে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এ দুই ধরনের অপুষ্টি মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। কম ওজনের গর্ভবতী নারীর রক্তশূন্যতা, প্রসবপূর্ব বা প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ, অকালে ঝিল্লি ফেটে যাওয়ার প্রবণতা বেশি হয়ে থাকে। অন্যদিকে মা যদি স্থূলকায় হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে প্রসবকালীন বিভিন্ন জটিলতা- যেমন গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস, গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, সিজারিয়ান শিশুর জন্ম বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা যায়। যেমন- শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করানোর হার কম হওয়া, বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়কালও কমে যাওয়ার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। এই সবগুলো কারণই নবজাতকের বেঁচে থাকার, বেড়ে ওঠার এবং বড় হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক নীতিতে, পরিকল্পনায় বা প্রকল্পে কম ওজন বিষয়ক অপুষ্টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। স্থূলতার সমস্যার দিকে নজর দেওয়ার সময় এসেছে।

ইউএসএআইডি-র সিনিয়র রিসার্চ ড. কান্তা জামিল বলেন, প্রজননক্ষম বয়সের বিবাহিত নারীদের মধ্যে কম ওজন থেকে অতিরিক্ত ওজনের ক্রসওভারটি ২০১২ সালের দিকে শুরু হয়েছিল এবং ২০১৭-১৮ বিডিএইচএস-এ এই ব্যবধানটি আরও দৃশ্যমান হয়। এখন আমাদের অবশ্যই পরবর্তী কর্মসূচির পরিকল্পনা করতে হবে এবং এই নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনে নীতিগুলো সংশোধন করতে হবে।

নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাইকা সিরাজ বলেন, অতিরিক্ত ওজনের বা স্থূলতা প্রভাব একটি দূরবর্তী সমস্যা নয়, যা শুধু বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ক্ষতি করবে। এটি আমাদের মা এবং শিশুদের প্রভাবিত করছে এবং একটি আন্তঃপ্রজন্ম চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। পুষ্টি একটি অত্যন্ত জটিল বিষয়, যার জন্য বহু খাতের সমন্বয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। তাই আমাদের এর ওপর যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে এবং সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।

নারীদের অপুষ্টি থেকে রক্ষা করতে বিশেষজ্ঞরা ৫টি চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

সেগুলো হলো-

১. কৈশোর থেকেই অপুষ্টির উভয় দিক সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং এ বিষয়ে কথা আলোচনা করতে হবে।

২. প্রসবকালীন বিভিন্ন যত্নের প্রবর্তন করতে হবে।

৩. সঠিক ও সুরক্ষিতভাবে নবজাতক ও কম বয়সী শিশুদের খাওয়ানোর উদ্যোগকে জোরদার করতে হবে।

৪. প্রক্রিয়াজাত খাবারের বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৫. স্কুল ও কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।   

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আইসিডিডিআর,বি-র ম্যাটার্নাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ ডিভিশনের (এমসিএইচডি) সিনিয়র ডিরেক্টর ড. শামস্ এল আরেফিন, ডেটা ফর ইমপ্যাক্টের কান্ট্রি লিড ড. মিজানুর রহমান প্রমুখ।