এমভি আবদুল্লাহ

দেশের মাটিতে পা রেখে যা বললেন ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ

Abid Rayhan Jaki
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:১৮ অপরাহ্ন, ১৪ মে ২০২৪ | আপডেট: ৫:৩০ পূর্বাহ্ন, ১৫ মে ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত
দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষার পর, অবশেষে সোমালিয়ান জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ফিরে এসেছেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক। তাদের ফিরে আসার খবরে উচ্ছ্বসিত সারা দেশের মানুষ।

রোববার সকালে, লাইটার জাহাজে করে নাবিকরা বন্দরে পৌঁছালে, তাদের স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন নাবিকদের স্বজন, বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের সিটি মেয়র, কেএসআরএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং সাধারণ মানুষ। নাবিকদের ফিরে আসার মুহূর্ত ছিল আবেগঘন। নাবিকদের মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানরা তাদের প্রিয়জনদের কোলে জড়িয়ে ধরে আনন্দের অশ্রু ঝরিয়েছেন।

এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ প্রথমে মাটিতে পা রাখেন। সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, "সেফটি অব লাইফটাকে প্রাধান্য দিয়েছি আমি। তাইতো সোমালিয়ার দস্যুদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে আজ আমরা এখানে পৌঁছাতে পেরেছি। আমরা ২৩ নাবিকই পৌঁছাতে পেরেছি। আমাদের সরকার কৌশলগতভাবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমিও জীবনে প্রথম এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। মনে ভয় ছিল, কিন্তু বডি ল্যাঙ্গুয়েজ স্বাভাবিক রেখেছি। সবাইকে হ্যান্ডেল করে, যেন আমাদের কোনো ক্রুর কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর রাখি।"
নৌবাহিনী প্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়ে ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ বলেন, আমি বলেছিলাম বিদেশি নৌ-বাহিনী যেন ভায়োলেন্স না করে, যাতে আমাদের নাবিকদের কারও প্রাণ না যায় বা জাহাজের কোনো ক্ষতি যেন না হয়। প্রথমদিন যখন আমরা দস্যু দ্বারা আক্রান্ত হলাম, তখন সেকেন্ড অফিসার ব্রিজে ছিলেন। আমি নিচে নেমে অ্যালার্ট দিচ্ছিলাম। সবকিছু অতি দ্রুত ঘটছে। দস্যুরা স্পিডবোটে এসে জাহাজে উঠে ব্রিজে চলে আসে। এসময় আমি আর সেকেন্ড অফিসার আমাদের হিডেন রুমে যেতে পারিনি।

লোমহর্ষক সে ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে রশিদ বলেন, সেকেন্ড অফিসার আটক হওয়ার পর আমি গিয়ে দেখি একে-৪৭ তাক করে আছে তার দিকে। আমি যেতেই আমার দিকেও একে-৪৭ তাক করে। আমি হাত তুলে সারেন্ডার করে বললাম, আমরা মুসলিম, আমরা বাংলাদেশি। আমরা রোজাদার বলে চিৎকার তুলি। আমি স্ট্রং ছিলাম। আমরা দুর্বল হয়ে পড়িনি।

মৃত্যুর হুমকি ছিল উল্লেখ করে ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ আরও বলেন, এসময় তারা আমাদের সবাইকে ডাকতে বলে। এরপর আমাদের সবাইকে ব্রিজের মধ্যে সারাদিন সারারাত রেখে দেয়। আমাদের নাবিকদের কেউ কেউ কান্নাকাটিও করছিল। আমার মনে ভয় ছিল, কিন্তু বডি ল্যাঙ্গুয়েজ স্বাভাবিক রেখেছি। সবাইকে হ্যান্ডেল করে, যেন আমাদের কোনো ক্রুর কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর রাখি।

উল্লেখ্য, ৩৩ দিনের মাথায় ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়। এরপর জাহাজটি প্রথমে আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে পণ্য খালাস শেষে আরেকটি বন্দর থেকে চুনাপাথর বোঝাই করে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছিল জাহাজটি। এ হিসেবে আমিরাত থেকে ১৩ দিনের মাথায় জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছাল।

কেএসআরএম গ্রুপ জানায়, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ৫৬ হাজার টন পণ্য চুনাপাথর রয়েছে। এতে প্রায় ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজটির ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতার পরিমাপ) বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১২ মিটার। জাহাজটির ড্রাফট বেশি থাকায় কুতুবদিয়ায় প্রথমে কিছু পরিমাণ পণ্য খালাস করে। এরপর পতেঙ্গার কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে বন্দর জলসীমায় আনা হয়। সেখানে বাকি পণ্য খালাস করা হবে। এ জন্য দেশে পৌঁছার পরও নাবিকদের ঘরে ফিরতে একটু সময় লেগেছে।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।