মব জাস্টিস জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে: দ্রুত বন্ধের দাবি

Abid Rayhan Jaki
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১:৫৭ অপরাহ্ন, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ৯:২৭ পূর্বাহ্ন, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়ার পর এমন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন দুই তরুণ৷ দুটিরই ঘটনাস্থল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’জনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ  ও নিন্দার ঝড় বইছে। তীব্র জনরোষে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এসব ঘটনার মধ্যে কখনও বিগত সরকারের কর্মী-সমর্থক সন্দেহে কখনো বা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আবার কখনো চুরির সন্দেহে এসব গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে যেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক আখ্যায়িত করে বিশিষ্ট জনেরা বলেছেন, মব ট্রায়াল বা গণপিটুনির যে ধারা শুরু হয়েছে, তা দ্রুত বন্ধ করতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ বাহিনী সক্রিয় হতে না পারে, ততক্ষণ এ অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করার কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

সম্প্রতি কোথাও কোথাও গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যার নৃশংস ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের 'মব জাস্টিস' কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। ‘কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ পুলিশ বদ্ধপরিকর।’ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এসব তথ্য জানান।

আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী প্রধানের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই: আইএসপিআর

তিনি বলেন, কেউ অন্যায় করলে বা অপরাধী হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিচারের বিধান রয়েছে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। কোনো ব্যক্তি অন্যায় এবং অপরাধ করলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে, কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, মব জাস্টিস বা গণপিটুনির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স দেশের সব সচেতন নাগরিকের সহযোগিতা কামনা করছে। বাংলাদেশ পুলিশ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে একই রাতে দুটি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ইসমাঈল হোসেন সম্রাট গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না৷ এর ভিডিও ফুটেজ আছে৷ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় একজন কথিত সমন্বয়কও জড়িত৷ সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে৷”

আরও পড়ুন: দুর্নীতির তদন্তে সাবেক গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের ব্যাংক হিসাব তলব

এ দুই ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি হতভম্ব। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে মনে হচ্ছে, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের জায়গাটা হারিয়ে গেছে। শুধু পিটিয়ে মারা নয়, ঢাবির ঘটনার পেছনের ঘটনা শোনা গেছে, তাঁর পরিবারকে ফোন করে অর্থ দাবি করা হয়েছে। তাহলে জিনিসটা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে?

তিনি আরও বলেন, দেশে অনেক হামলা-মামলার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এটা কী ধরনের ঘটনা? এই ঘটনায় সাধারণ ছাত্ররা যে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদে নেমেছে, এটাই প্রত্যাশিত। ছাত্ররা শুধু নয়, জনগণও নামবে– এটা এ দেশে হতে দেওয়া যায় না।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সরকারের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য কোনো অশুভ চক্র মাঠে নেমেছে কিনা, সেটাও তাঁর সন্দেহ হচ্ছে। যাতে সরকার এসব কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। অনতিবিলম্বে এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, গণপিটুনি বা মব ট্রায়াল যেটা শুরু হয়েছে, এটাকে সমর্থন করার কোনো সুযোগ নেই। এই ঘটনা যাতে আর একটিও না ঘটে, সেই ব্যবস্থা সরকারের নেওয়া উচিত। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করা, এর কোনো বিকল্প নেই। নূর খান বলেন, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জনগণের মধ্যে, ছাত্রদের মধ্যে বোধশক্তি জাগ্রত করা দরকার। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করা। এর কোনো বিকল্প নেই।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, আইন হাতে তোলার মতো এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন উন্মত্ততা কেন ঘটবে, যেখানে শিক্ষিত লোকজন বসবাস করেন। যারা এই ঘটনায় জড়িত, দ্রুত তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে হবে। তদন্ত যেন দীর্ঘসূত্রতায় আটকে না থাকে, এটা নিশ্চিত করা দরকার।

তিনি আরও বলেন, কেউ ভিন্ন দল ও মতের বিশ্বাসী হলেই তাকে দলবদ্ধভাবে আক্রমণ করা সমীচীন নয়। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাকে আইনের কাছে সোপর্দ করতে হবে। যদি এমন নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটতে থাকে, তাহলে দেশে যে পরিবর্তন হলো, তা অর্থহীন হয়ে যাবে। আইন যারা হাতে তুলে নিয়েছে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এর পেছনে কারও উস্কানি রয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে বের করতে হবে।