ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করিয়েছিলেন টিউলিপ

২০১৬ সালের ৯ আগস্ট জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলির ছেলে ব্যারিস্টার আরমানকে তার নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরপর থেকে তার আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। পরে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হলে দীর্ঘ আট বছর পর বাড়ি ফেরেন তিনি। বুধবার (৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে ব্যারিস্টার আরমানের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে গুম হওয়ার পর আরমানের ব্যাপারে ২০১৭ সালে শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপকে প্রশ্ন করেছিলেন এক ব্রিটিশ সাংবাদিক। টিউলিপ যেহেতু ব্রিটেনের নাগরিক ও তখন এমপি ছিলেন। তাই ওই সাংবাদিকের ধারণা ছিল যে, এ বিষয়ে শেখ হাসিনার কাছে একটি ফোন করলে আরমান হয়ত মুক্তি পেতে পারেন।
বাংলাদেশে পাসপোর্ট বাতিল, ভারতে ভিসার মেয়াদ বাড়ল শেখ হাসিনারবাংলাদেশে পাসপোর্ট বাতিল, ভারতে ভিসার মেয়াদ বাড়ল শেখ হাসিনার তবে আরমানের বিষয়ে চ্যানেল-৪ এর ব্রিটিশ ওই সাংবাদিকের প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হন টিউলিপ। তিনি পরবর্তীতে তার ক্ষমতা ও প্রশাসনকে দিয়ে আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করান বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: আটকে আছে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার
মীর আহমাদ বিন কাসেম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন যে, ‘চ্যানেল-৪ প্রতিবেদনটি প্রচার করার কয়েক ঘণ্টা আগে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আমার বাড়িতে যায়। আমার স্ত্রীকে চুপ থাকতে বলে। বাইরের দেশের কার কার সঙ্গে আমার স্ত্রীর যোগাযোগ আছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করে। তাকে এমনভাবে হেনস্তা করা হচ্ছিল যেন কোনো সন্ত্রাসীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ইস্যুতে টিউলিপকে মুখোমুখি প্রশ্ন করাতে শেখ পরিবারে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। যার কারণে বাংলাদেশের প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন আচরণ করা হয়েছিল।‘
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে যে, ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর শনিবার সকালে টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে গিয়েছিলেন চ্যানেল-৪ এর সাংবাদিক। ব্যারিস্টার আরমান সম্পর্কে জানিয়ে টিউলিপকে ওই সাংবাদিক বলেছিলেন, ‘আপনার একটি ফোন কল অনেক পার্থক্য গড়ে দিতে পারে’।
আরও পড়ুন: কানাডায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন সিইসি
তবে ওই সাংবাদিকের প্রশ্নে বেজায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন টিউলিপ। ওই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয়ে উল্টো জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ‘আরমান কী তার সংসদীয় আসনের কেউ? তিনি কী ব্রিটিশ’? জবাবে সাংবাদিক বলেন, ’আরমান বাংলাদেশি। তার পরিবার আপনার কাছে একাধিকবার অনুরোধ করেছে কিছু করার জন্য।’
আরও বাড়ছে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট খরচআরও বাড়ছে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট খরচ
তখন টিউলিপ বলেন, আপনি কী জানেন আমি ব্রিটিশ এমপি এবং আমার জন্ম হয়েছে লন্ডনে।’ চ্যানেল-৪ এর সাংবাদিক বলেন, ’কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আপনার গভীর সম্পর্ক আছে। আপনি নিজেই বলেছেন আপনি আওয়ামী সরকারের মুখপাত্র। আপনার খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’ ওই মুহূর্তে টিউলিপ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ’আপনি কী বলতে চান আমি বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ? আমি ব্রিটিশ এমপি। আমাকে বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ বলার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। এটি বলে তিনি চলে যেতে থাকেন। তখন ওই সাংবাদিক বলতে থাকেন, ’আপনি আরমানের ব্যাপারে একটি ফোন দিতে পারবেন না? কেন পারবেন না।’
টিউলিপের সাথে চ্যানেল-৪ এর ওই সাংবাদিকের এই কথোপকথনের তিন দিন পরে ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রতিবেদনটি সম্প্রচার করা হয়েছিল।
কাসেমের তথ্যমতে, ওই দিনই সেই প্রতিবেদন প্রচার হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে র্যাবের সদস্যরা তার পরিবারের বাড়িটি ঘিরে ফেলে। প্রায় এক ডজনখানেক সশস্ত্র লোক বাড়িতে প্রবেশ করে এবং কাসেমের স্ত্রীকে বিদেশে কার কার সাথে যোগাযোগ রয়েছে তার তথ্য জানতে চায়।
তাকে এমনভাবে হেনস্তা করা হচ্ছিল যেন কোনো সন্ত্রাসীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।” বলে জানান মীর আহমাদ বিন কাসেম।
তারেক রহমানকে সাথে নিয়েই দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়াতারেক রহমানকে সাথে নিয়েই দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া
ব্যারিস্টার আরমান লন্ডনে পড়ালেখা করেছেন। ২০১৬ সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তার বাবার বিচার চলাকালে তিনি তার আইনজীবীর ভূমিকা পালন করছিলেন। ঠিক তখনই তাকে গুম করা হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হলে দীর্ঘ আট বছর পর বাড়ি ফেরেন তিনি। ওই সময় দেখা যায়, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী আরমান রুগ্ন হয়ে গেছেন। তাকে চেনাও যাচ্ছিল না।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার দল লেবার পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু কেউই কোনো কথা বলেননি। তবে টিউলিপের এক সহযোগী বলেছেন, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ব্যারিস্টার আরমানের বিষয়টি নিয়ে ফরেন অফিসে পত্র পাঠিয়েছিলেন তিনি।