বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে বড় ধাক্কা, সুবিধা পাবে ভারত: রয়টার্স

Any Akter
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:৪৩ অপরাহ্ন, ০৪ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১২:৫১ অপরাহ্ন, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবারের (৩ এপ্রিল) ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন, যা এশিয়ার এই স্বল্পোন্নত দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাতকে কঠিন সংকটে ফেলতে পারে। 

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প দেশের মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি জোগান দেয় ও প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। এ ছাড়া দেশের জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ এ শিল্প থেকে আসে। 

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে সিইসি

সকালে এ ঘোষণা শুনে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার শাহিদুল্লাহ আজিম বলেন, আমরা জানতাম যে কিছু একটা আসছে, কিন্তু এত বড় ধাক্কা আসবে তা কল্পনাও করিনি। এটি আমাদের ব্যবসার জন্য ও হাজার হাজার শ্রমিকের জন্য ভয়ংকর খবর।

শাহিদুল্লাহ আজিমের প্রতিষ্ঠান উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতাদের জন্য পোশাক সরবরাহ করে। তিনি জানান, এ নতুন শুল্কের কারণে বিদেশি ক্রেতারা বিকল্প বাজারের দিকে ঝুঁকতে পারে, যা বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে দুর্বল করবে।

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক দুপুরে, তফসিল ঘোষণা যেকোনো সময়

বাংলাদেশের বাজার ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের এ শুল্কনীতির প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই বাংলাদেশের পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন। বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) একজন প্রতিনিধি বলেছেন, আমরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি ও তারা বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশকে এখন কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার আগে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা বাড়ানো। সেই সঙ্গে বিকল্প বাজার খোঁজা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি বাড়ানোর কৌশল নিতে হবে। আবার রপ্তানিকারকদের জন্য সরকারকে বিশেষ সহায়তা প্রদান করতে হবে, যাতে তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নেতারা বলছেন, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার, ব্যবসায়ী ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় প্রয়োজন।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি ও আশা করছি যে আলোচনা এ শুল্ক ইস্যু সমাধানে সহায়ক হবে।

পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইভিন্স গ্রুপের প্রধান আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, গত বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকেই মার্কিন ক্রেতারা ভারতকে বিকল্প হিসেবে দেখছিল। এখন নতুন শুল্কের কারণে এ প্রবণতা আরও বাড়বে।

ভারতীয় পোশাক রপ্তানির ওপর ট্রাম্পের শুল্ক হার ২৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের তুলনায় কম। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৩০টি পোশাক ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে ভারতমুখী হওয়ার পরিকল্পনা করছে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির মাত্র ৬-৭ শতাংশ আসে ভারত থেকে, যা বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের তুলনায় কম। তবে নতুন পরিস্থিতিতে ভারত এই বাজারে আরও বড় অংশ দখল করতে পারে।