সাইফুজ্জামান-রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ আবেদন করেছে দুদক

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারি করার আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সিনিয়র চট্টগ্রাম মহানগর স্পেশাল জজ (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুর রহমানের আদালতে এ আবেদন করা হয়।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারি করার আবেদন আজ (বৃহস্পতিবার) করা হয়েছে। আদালত আবেদনটি ২১ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য ধার্য করেছেন।”
আরও পড়ুন: টয়লেট পরিচালনা প্রশিক্ষণে বিদেশ যাচ্ছেন ৩ কর্মকর্তা
প্রায় ১২৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রী এবং ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামানসহ অর্ধশত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলার তদন্ত চলমান। আদালত ইতোমধ্যেই সাইফুজ্জামান ও রুকমিলার নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া ৫ মার্চের এক আদেশে তাদের ৩৯টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে, যেখানে ৫ কোটি ২৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা জমা রয়েছে।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সাইফুজ্জামানের ১০২ কোটি টাকার শেয়ার ও ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দের নির্দেশও দিয়েছেন। ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর সাবেক মন্ত্রী ও তার স্ত্রী দেশের বাইরে যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশও পান।
আরও পড়ুন: ৩৯ পরিদর্শককে সহকারী পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি
অন্যদিকে, কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে কাগজে প্রতিষ্ঠানের নামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ঢাকার কারওয়ান বাজার শাখা থেকে ২১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে দুদক সাইফুজ্জামান, তার স্ত্রী এবং ব্যাংকের এমডিসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলাটি ১৬ সেপ্টেম্বর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দায়ের করা হয়।
তদন্তে দেখা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাচারের মাধ্যমে সাইফুজ্জামান ২২৬টি ফ্ল্যাট এবং বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। সিআইডি প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের প্রমাণ পেয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে সাইফুজ্জামান ও রুকমিলা জামানসহ অজ্ঞাতনামা ৫-৭ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ইউনাইটেড ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এবং আরামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তিনবারের সভাপতিও ছিলেন তিনি।
সিআইডি জানায়, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল বারশা, থানিয়া, জাবাল আলি, বারশা সাউথ, ওয়ার্ল্ড আইল্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় ২২৬টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন সাইফুজ্জামান। এসব ফ্ল্যাটের বাজারমূল্য প্রায় ৩১১ কোটি টাকা। পাশাপাশি রুকমিলা জামানের নামে দুবাইয়ের দুটি সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিদেশে কোম্পানি নিবন্ধন, সম্পত্তি ক্রয় এবং ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। বিষয়টি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।