বাজেট অস্বচ্ছ ও বাস্তবায়ন অনুপযোগী: এনডিপি

আগামী ২০২৩-২৪ সালের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য একটি অস্বচ্ছ, দুর্নীতি প্রবন ও প্রতারণার এবং বাস্তবায়ন অনুপযোগী অযোগ্য বাজেট বলে আখ্যায়িত করেছে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)।
শুক্রবার (২ জুন) এনডিপি সভাপতি কে এম আবু তাহের ও মহাসচিব আবদুল্লাহ-আল-হারুন (সোহেল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে একক দলের মাতবরি থাকবে না: নুর
বিজ্ঞপ্তিতে এনডিপি সভাপতি ও মহাসচিব বলেন, আওয়ামী সরকার ঘোষিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যে জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা এই সরকারের নাই। ২০২৩-২৪ অর্থ বৎসরের বাজেট ব্যয় ৭,৬১,৭৮৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা পূর্ববতী বৎসর ছিল ৬৬০,৫০৭ কোটি টাকা বা এই বাজেট পূর্ববর্তী বৎসরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১০১,২৫৮ কোটি টাকা বেশি। গত বাজেটে লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েও সরকার ঋণের উপর নির্ভরশীল হয়ে জাতির সামনে একটি বাস্তবতা বিবর্জিত বাজেট পেশ করেছেন।
‘‘৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার উপস্থাপিত বাজেটে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা রাজস্ব খাত থেকে জোগান দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যা বাস্তবায়ন করা হবে অসম্ভব। আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকার বেশি, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।’’
আরও পড়ুন: শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে
‘‘সরকার নিজেদের উন্নয়নের গল্প সাধারণ মানুষকে বিশ্বাস করানোর জন্য প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে বিশ্বের জন্য উন্নয়নের রোল মডেল করেছেন, এই মিথ্যা প্রচারণা উদ্দেশ্যে এবং বিদেশের কাছে বিশ্বাস যোগ্য করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো নিয়মিত বিভ্রান্তিকর, অবান্তর ও বাস্তবতা বিবর্জিত রিপোর্ট প্রকাশ করে যাচ্ছেন। আমাদের বৈদেশিক আয় নিম্নমুখী তাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও নিম্নমুখী তবুও সরকার নিজেদের আর্থিক শক্তি প্রকাশের জন্য অন্যের অ্যাকাউন্টে থাকা ডলারও নিজের রিজার্ভে দেখিয়ে সুখের ডেকুর তুলছেন। ডলারের সংকটে কাঁচা মাল আমদানি করতে না পারায় দেশীয় শিল্প বন্ধের উপক্রম, আমদানীকৃত কয়লা ও এলএনজি'র অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ প্রায় আর জ্বালানির অভাবে ১০০% দেশীয় কাঁচা মালের শিল্পও বন্ধের পথে!’’
‘‘২০২৩-২৪ অর্থ বৎসরের রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেটি বাস্তবসম্মত নয় তা উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতা বহির্ভূত। ফলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন একেবারে অসম্ভব। আগামী অর্থ বৎসরে আমদানি শুল্ক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬,০১৫ কোটি টাকা অথচ গত অর্থ বছরে আমদানি শুল্ক বাবত আয় হয়েছে ৪৩,৯৯৪ কোটি টাকা কিন্তু এই অর্থ বৎসরে ডলার সংকটের কারণে আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা ইতিবাচক নয়। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, রাজস্ব আদায়-এর কোনোটিই বাস্তবায়নযোগ্য মনে হচ্ছে না।’’
‘‘আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফ’র শর্ত পূরণ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী এবার কঠোর হয়েছেন নিম্ন থেকে উচ্চ-সবস্তরের মানুষের ওপর। অর্থ সংগ্রহের দিকে দিয়েছেন বেশি নজর। যে কারণে পদে পদে ফেলছেন ভ্যাট ও করের জাল। এতে মানুষের দুর্দশা ও দুর্ভোগ বাড়বে, প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এই সরকার যদি দুর্নীতি দমনে আন্তরিক হতেন তবে বাংলাদেশের জন্য আইএমএফ এর ঋণ প্রয়োজন হতো না। সরকার আয় বাড়াতে নজর দিয়েছে ভ্যাট, আমদানি শুল্ক, সম্পূরক ও সুনির্দিষ্ট শুল্কের ওপর। ক্ষেত্র বিশেষ নতুন ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার মানকে নিম্নমুখী করবে।
অন্যদিকে শূন্য আয় (করযোগ্য সীমার নিচে বার্ষিক আয়) দেখিয়ে আগে রিটার্ন জমা দেওয়া গেলেও আগামী দিনে স্লিপ (প্রাপ্তিস্বীকারপত্র) পেতে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। যা নিম্ন আয়ের মানুষের উপর বর্ধিত বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।’’
‘‘নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’ যাত্রার প্রত্যাশা রেখে ভোটের আগে রেকর্ড ঘাটতির যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তার ১৭ শতাংশের বেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অথবা টাকা ছাপিয়ে ঘাটতি জোগাড় করতে হবে। যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ করে এখন ঢাকা শহরের রাস্তার সিগনাল বাতিই জ্বালানো যাচ্ছে না, সেখানে স্মার্ট বাংলাদেশ মানুষের সঙ্গে একটি স্মার্ট প্রতারণা।’’
‘‘আওমী লীগ শাসন আমলের অন্য সকল বাজেটের ন্যায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটও গরিবদের আরো গরীব করবে। কারণ সকল ধরনের ভ্যাট-টাক্সে দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ জনসংখ্যার মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তরাই অর্থনৈতিক চাপে পড়ে যার ফলস্বরূপ গত ১৫ বৎসরে তারাই সঞ্চয়হারা হয়েছে। উন্নয়ন বাজেটের অধিকাংশই দুর্নীতিবাজদের পকেটে যাচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম জনগণের পকেট থেকে টাকা নিয়ে নিস্ব করার জন্য সরকারের একটা ফাঁদ।’’