সংসদ নির্বাচনে কাউকে সবুজ সংকেত দেয়া হয়নি: রিজভী

সংসদ নির্বাচনে ‘কাউকেই সবুজ সংকেত দেয়া হয়নি, দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হবে পার্লামেন্টারি বোর্ডে’ বলে জানিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই কথা জানান।
আরও পড়ুন: নিউ ইয়র্কে এনসিপি নেতাকে ডিম নিক্ষেপ, শাহবাগে প্রতিক্রিয়া ও বিক্ষোভের ডাক
তিনি বলেন, ‘‘ কোন নির্বাচনী এলাকায় কোন প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যল বা সবুজ সংকেত দেয়া হয়নি। প্রত্যাশীদের মধ্যে দলীয় নানা কার্যক্রমে যার পারফরমেন্স ভালো তাকেই প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হবে। বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয় তার নিজস্ব গঠনতান্ত্রিক উপায়ে, কোন সবুজ সংকেতের মাধ্যমে নয়।”
‘‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিংবা যে কোনো নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্ব পার্লামেন্টারি বোর্ড পালন করে এবং এ ব্যাপারে বোর্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়। আমাদের পার্লামেন্টারি বোর্ড আপনারা জানেন যে স্ট্যান্ডিং কমিটি যেটা সেটাই পার্লামেন্টারি বোর্ড সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান।সুতরাং তফসিল ঘোষণার পরেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তথা বিএনপির কেন্দ্র থেকে ঘোষণা ব্যতীত এখন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত কোন মন-গড়া সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সারাদেশের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
আরও পড়ুন: আখতার হোসেনের ওপর হামলা, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন সারজিস আলম
রিজভী বলেন, ‘‘সবুজ সংকেত নয় দলের ভারপ্রতি চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান প্রতিটি এলাকায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সুনির্দিষ্ট ও যথাযথ নির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি ভার্চুয়ালি যে সমস্ত এলাকায় কথা বলছেন সেখানেও তার বক্তব্যে তিনি এ কথাটি বলছেন বা ঢাকায় এসে যারা কথা বলছেন যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী হতে চান বা দলের কর্মী যারা আছেন, বিভিন্ন পদে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের প্রত্যেকেই তিনি এই নির্দেশনা দিয়েছেন… আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করবেন…দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার জন্য সকলে আপনারা কাজ করবেন।”
‘‘ কিন্তু এখনই কোন মনোনয়ন দিয়ে দেওয়া হয়নি যেটা আমরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি। তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে… এই সম্ভাব্য হতে পারেন… এই ধরনের বিষয়গুলো আমরা দেখছি।”
‘তারেক রহমানের নির্দেশনা’
রিজভী বলেন, ‘‘ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাগিদ দিচ্ছেন অর্থাৎ বিএনপির নেতাকর্মীদের নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেছেন, আমাদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য ধরে রাখতে হবে, আমাদের প্রত্যেক প্রত্যেককে গণসম্পৃক্ত কাজে সংশ্লিষ্ট থাকতে হবে। জনগণ বিরক্ত হয় এমন কোন কাজে দলের নেতাকর্মীরা কখনোই লিপ্ত থাকবে না, জড়িত থাকবে না। তাহলে অবশ্যই জনগণের রায় ধানের শীষের পক্ষেই আসবে।”
‘‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদেরকে সারাদেশে ডোর টু ডোর গিয়ে আগামী দিনে জনগণের মুক্তির সনদ ৩১ দফা তুলে ধরার পরামর্শ দিচ্ছেন দিয়ে যাচ্ছেন এবং আমাদের নেতাকর্মীরা বা বিভিন্ন ইউনিট জেলা পর্যায় থেকে বা থানা পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রত্যেকে এ ব্যাপারে অত্যন্ত নিবিড় আন্তরিকতায় তারা কাজ করেছেন… অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাটে মানুষকে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করেছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে কেউ জানতে চাইলে একেবারে বিস্তারিতভাবে তাদেরকে জানিয়েছেন, বলছেন ব্যাখ্যাসহ।”
তিনি বলেন, ‘‘ তারেক রহমান মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঐক্য সুদৃঢ় করার এবং আরো জনবান্ধব হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বারবার একটি কথা বলেন যা আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি সেটি হলো জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস্। জনগণ আমাদের সঙ্গে থাকলে কোন প্রোপাগান্ডায় বিএনপি থেকে জনগণকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।”
‘‘ সারাদেশে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি জনাব তারেক রহমানের আহ্বান …জনগণের ভালোবাসায় থাকুন, জনগণকে ভালোবাসায় রাখুন।”
‘বিএনপির বিরুদ্ধে একটি কুচক্রিমহল’
রিজভী বলেন, ‘‘ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাচ্ছে তখন গভীর ষড়যন্ত্রের বীজ বুনতে শুরু করেছে কুচক্রি মহল নানা অপতথ্য প্রচার করে। ইতমধ্যে তারা নানা বয়ান তৈরি করে জনগণ বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য একের পর এক বহুমুখী অশুভ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যারা মিথ্যাচার করে বিএনপিকে নানা তকমা লাগানোর অপচেষ্টা করছে, তারাই কিছু গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে বিএনপির নামে অসত্য সংবাদ পরিবেশন করছে বা করানো হচ্ছে।”
‘‘ জনগণ অবলোকন করছে যে গণহত্যাকারী নিষিদ্ধ সংগঠন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার গোপন মিশনে নেমেছে একটি চক্র। বিনিময়ে তারা পতিতদের সহযোগিতা নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার স্বপ্নে বিভোর। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, যে সম্প্রতি কিছু পত্রপত্রিকা, গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএনপির মনোনয়নের কথিত তালিকা নামধাম প্রকাশ করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি, অসন্তোষ এবং বিশৃঙ্খলা উসকেদার ষড়যন্ত্র করছে। অনুমিত হচ্ছে, বিএনপিতে বিভেদ বিসম্ভার, সৃজনের অশুভ অভিপ্রায় নিয়ে কতিপয় মিডিয়া যথেচ্ছভাবে মিথ্যা অপপ্রচার প্রপাগান্ডায় লিপ্ত হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। উপযুক্ত সময়েই দলের নির্ধারিত যে প্রক্রিয়া যে সিস্টেমে যাচাই বাছাই করে মনোনয়ন দেওয়া হয় সেই যাচাই বাছাই করে যোগ্য ও সর্বোপরি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য জনপ্রিয় ব্যক্তিকেই বেছে নিয়ে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুস সালাম আজাদ, সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি প্রমূখ নেতারা ছিলেন।