দুই মাস পানিবন্দি ৫০ হাজার পরিবার
খনন আর অবৈধ বাঁধ অপসারণই ভুলুয়া নদীর জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান

ভুলুয়া একটি নদীর নাম। এ নদী লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার পূর্বাঞ্চল দিয়ে বয়ে চলেছে। নোয়াখালীতেও রয়েছে বিস্তৃতি। একসময় তীব্র স্রোতের নদীটি অবৈধ বাঁধ, দখল ও দূষণে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীটির অধিকাংশ এলাকা শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ে। কিন্তু বর্ষায় বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। কিন্তু নেই প্রবাহ। এ কারণে দূর্ভোগে পড়তে হয় এ জনপদের কয়েক লাখ মানুষকে। গত ২ মাস ধরে জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার। এ সমস্যা সমাধানে একমাত্র উপায় হিসেবে স্থানীয়দের মতামত- সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে ভুলুয়া নদী খনন আর অবৈধ বাঁধ অপসারণ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভুলুয়া নদীতে তেমন পানি ছিল না। প্রায় ৫০ দিন আগে বৃষ্টি শুরু হয়। এ বৃষ্টি টানা ২০ দিন ছিল। বৃষ্টির কারণে নদীটি পানিতে টইটম্বুর হয়ে পড়ে। অবৈধ বাঁধের কারণে নদীতে পানি প্রবাহ নেই। এতে পানি উপচে পড়ে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। এতে রামগতি-কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা, চরবাদাম ও চরপোড়াগাছা ইউনিয়নসহ নোয়াখালীর আন্ডারচর ও চরমটুয়া ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এসব এলাকার কোথায় কোমর ও কোথাও বুকপরিমাণ পানিতে ডুবে ছিল। পরে নোয়াখালীর বন্যার পানিও যুক্ত হয়েছে। ২ মাস হতে চললেও এখনো অধকাংশ বাড়ি থেকে পানি নামেনি। এর প্রধান কারণ ভুলুয়ায় শত শত অবৈধ বাঁধ, আবার নেই গভীরতা। এতে ভুলুয়া নদীকে খননসহ অবৈধ বাঁধগুলো অপসারণ করতে হবে। নদীতে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে পারলেই এ জনপদের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হবে।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ে ২০০ বছরের পুরোনো কাইকারটেক হাট
এদিকে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) মানবসৃষ্ট বন্যা রোধে ভুলুয়া নদীসহ লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর সকল খাল থেকে অবৈধ বাঁধ অপসারণ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর ভুলুয়া নদীসহ সকল খাল দখলে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এতে ভুলুয়া নদীতে অবৈধ দখলের ঘটনা তদন্ত ও অবৈধ বাঁধ অপসারণে সময় বেঁধে আদেশ দেওয়া হয়। আদেশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ দখলের ঘটনায় তদন্ত শুরু করতে হবে। তদন্তপূর্বক ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে দখল উচ্ছেদ করে ভুলুয়া নদীর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করে হাইকোর্টকে প্রতিবেদন দিতে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রামগতি উপজেলার আজাদনগর ব্রিজ এলাকায় অবৈধ বাঁধ অপসারণে নদীতে নামে শত শত মানুষ। এরপর তারা চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের কোডেক বাজার এলাকায় বাঁধ অপসারণে কাজ করে। দা-কোদাল ও সাবল দিয়ে যতটুকু সম্ভব হয়েছে স্বেচ্ছায় ততটুকুই কাজ করেছে মানুষজন। পানি থেকে বাঁচতে মাথায় লাল ফিতা বেঁধে একযোগে কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষজন ঐক্যবদ্ধভাবে এ কাজে যোগ দেয়।
চরকাদিরা গ্রামের কৃষক ফয়েজ উল্লাহ বলেন, এমন পানি আর দেখিনি। ভুলুয়া নদীর কারণেই আমাদেরকে পানিবন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে। এ নদীটিতে অবৈধ বাঁধ না থাকলে পানিগুলো আরও আগে শুকিয়ে যেতো। আমাদেরও দূর্ভোগে পড়তে হতো না।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে সেনা-পুলিশের যৌথ অভিযানে গাঁজা ও ইয়ার গানসহ যুবক আটক
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলা ৫০ দিন ধরে জলাবদ্ধতার শিকার। সবাই বন্যা বললেও আমরা বলবো এটি জলাবদ্ধতা। কারণ এখানে কোন বানের পানি আসেনি। দীর্ঘদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ভুলুয়া নদীতে অবৈধ বাঁধ দেওয়ার কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে এ ঘটনাটি ঘটেছে। ভুলুয়া নদীটি লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর ভূখন্ড দিয়ে বয়ে গেছে। এ নদী হয়ে পানি নেমে গিয়ে মেঘনাতে মিশে যায়। কিন্তু নদীটির এখন মূল সমস্যা হচ্ছে অবৈধ দখল। এ বেদখলদারদের হাত থেকে নদীটি মুক্ত করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে আমি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। উচ্চ আদালত ভুলুয়া নদী থেকে অবৈধ বাঁধ অপসারণে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, যতদ্রুত সম্ভব ভুলুয়া নদীকে বড় ধরণের প্রকল্পের মাধ্যমে খননের আওতায় আনতে হবে। এ নদীর আশপাশের খালগুলো দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করলে আর কখনোই জলাবদ্ধতা হবে না।
রামগতি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আবদুল্লাহ বিন শফিক বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ভুলুয়া নদী রক্ষায় আমরা কার্যক্রম নেমেছি। এতে স্থানীয় জনগণ আমাদেরকে সহযোগীতা করছে। ভুলুয়া নদী খননে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। আশা করছি, আগামি কয়েকদিনের মধ্যে ভুলুয়া নদী থেকে অবৈধ দখল মুক্ত করতে পারবো।