রূপগঞ্জে শিক্ষা দপ্তরে দুর্নীতির অভিযোগ, ঘুষ দাবির কল রেকর্ড ভাইরাল
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে সীমাহীন দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: সিদ্দিক নূরে আলমের বিরুদ্ধে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিওভুক্তকরণ ও ইএফটি (Electronic Fund Transfer) প্রক্রিয়ায় দফায় দফায় ঘুষ দাবি করার অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষক।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: সাইফুল ইসলাম বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র নিলেন রুমিন ফারহানা
অভিযোগে বলা হয়েছে, একজন শিক্ষককে সরকারি বেতন চালু করতে অন্তত দুটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়—এমপিও (MPO) ফাইল প্রক্রিয়া এবং ইএফটি (EFT) ফাইল অনুমোদন। এই দুই ধাপেই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ‘খরচ’ নামের এক প্রকার ঘুষ হিসেবে ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়। ঘুষ না দিলে ফাইল আটকে রেখে মাসের পর মাস শিক্ষককে হয়রানি করা হয়।
স্থানীয় শিক্ষক মহলের ভাষ্য, রূপগঞ্জ উপজেলা যেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. সিদ্দিক নূরে আলমের কাছে সোনার হরিণ। তদন্তে জানা যায়, তিনি ২০০২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত রূপগঞ্জে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে বদলি হলেও ২০১৩ সালের জুলাই মাসে পুনরায় রূপগঞ্জে যোগ দেন। নানা অভিযোগের কারণে ২০১৬ সালে বদলি হলেও সর্বশেষ ২০২৫ সালের ২৫ মে আবারও রূপগঞ্জে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শিক্ষক সমাজে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়।
আরও পড়ুন: বিজিবির ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাস পর ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক টন সরকারি বই চুরির আলামত পাওয়া যায়। ওই সময় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, অফিস সহকারী মেহেরুন্নেসার মাধ্যমে ঘুষ বাণিজ্য পরিচালিত হয়। যদিও মেহেরুন্নেসা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তরিকুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড মনে করেই আমরা শিক্ষকতা পেশায় এসেছি। কিন্তু নতুন স্কুলে যোগদানের পর এমপিও ফাইল উপজেলায় গেলে ১৫–২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। বাধ্য হয়ে ধার-দেনা করে টাকা দিতে হয়েছে। এখন আবার ইএফটি ফাইলের জন্যও টাকা চাইছে। অনেক শিক্ষকের ৪–৫ মাস বেতন বন্ধ রয়েছে।”
আশরাক জুট মিলস আদর্শ জীব বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “ঘুষ না দিলে ফাইল আটকে রাখা হয়। নিয়ম অনুযায়ী কাজ চাইলে বারবার খরচের কথা বলা হয়।”
ভুলতা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মো: আব্দুল মাজীদ বলেন, “এভাবে শিক্ষা প্রশাসনে দুর্নীতি চলতে থাকলে শিক্ষক সমাজের সম্মান নষ্ট হবে।”
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিক নূরে আলম মোবাইল ফোনে বলেন, “আমি এসব অভিযোগ সম্পর্কে অবগত নই। জরুরি প্রয়োজনে কথা বলার সময় অনেক কথা হয়। কে কখন কোন অংশ রেকর্ড করে আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে, তা আমি জানি না। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।”
ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি কাউসার আলী বলেন, “শিক্ষা খাতে দুর্নীতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অভিযোগ সত্য হলে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, “আজ সকালে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পরই পূর্বাচল সার্কেলের সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”





