প্রতারণার বিয়ের সাথে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়,

নোয়াখালীতে ছাত্র আন্দোলন দমাতে নিষ্ঠুরতার নেতৃত্ব দেয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজিব এখনো দাপটে

Sanchoy Biswas
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৬:৩৪ অপরাহ্ন, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | আপডেট: ৯:৩০ পূর্বাহ্ন, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার আন্দোলন দমনে নোয়াখালীতে নিষ্ঠুরতার সাথে নেতৃত্ব দিয়েছিল  অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিব। তার পুলিশ সুপার ছিল মোঃ আসাদুজ্জামান। তাকে গ্রেফতার করা হলেও অপারেশনের মূল নেতৃত্ব দেওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজিব এখনো দাপটের সাথেই আছে পুলিশে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মামলা হলেও তাকে শুধু নোয়াখালী থেকে খুলনায় বদলি করা হয়েছে। নোয়াখালীতে ছাত্র জনতার উপর বর্বর হামলাকারী এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নাগরিক কমিটি। 

এলাকাবাসীর ভুক্তভোগীদের পক্ষে মন্ত্রণালয় ও পুলিশের উদ্বোধন কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন আবেদন অনুসন্ধানে জানা যায়, মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিবের (বিপি-৮৩১৩১৫৯৩৯৬) ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রথমবাবের মতো বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে পদায়ন হয়। বিএনপি-জামায়েতের মূল ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতনোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ সার্কেলে। ২০১৩ সাল হতে ক্যাডার হিসেবে র‍্যাবে যোগদানের পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্মূল করতে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয় । তিনি শুধু বিরোধীদমনেই ব্যস্ত ছিলেন না, দুহাতে কামিয়েছেন অবৈধ সব অর্থ। আর এসব অর্থ দিয়ে তিনি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে নামে-বেনামে অগাধ সম্পদের মালিক বনে গেছেন বলে পুলিশে ও স্থানীয়  জনশ্রুতি রয়েছে।

আরও পড়ুন: নাসিরনগরে আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত

অভিযোগ আছে, নোয়াখালীতে বিশেষ করে বেগমগঞ্জ, চৌমুহনী, সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, কোম্পানিগঞ্জ, কবিরহাটে যত বিএনপি জামায়েত শিবিরের উপর মামলা, গুম, খুন হয়েছে তার নির্দেশদাতা ছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংকে একসময় কর্মরত ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের ক্যাডার থাকার সুবাদে সাবেক সংসদ সদস্য মোরশেদুল আলম চৌধুরী ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি দমনে সিদ্ধহস্ত হওয়ার পুরস্কার হিসেবে ওবায়দুল কাদের এর নিজ জেলা ও মোরশেদুল আলমের নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী জেলা তথা সেনবাগ থানা, বেগমগঞ্জ সার্কেলে পোস্টিং হয়। 

এখানে তিনি পুলিশের মূল ধারার ক্রাইম জোনের পাশাপাশি ডিবি নোয়াখালী জেলার দায়িত্বও দায়িত্ব পালন করে। নোয়াখালী জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম এবং  গ্রেফতারকৃত এসপি মো. আসাদুজ্জামান দুজন  ২৫ তম ব্যাচের বন্ধুপ্রতীম হওয়ায় তাদের দুজনের খুবই বিশ্বস্ত হাতিয়ার ছিল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিব। এই দুই এসপির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ক্রাইম এবং ডিবির কাজের সুবাদে জড়িয়ে পড়েন অনেক অনৈতিক ও অবৈধ ব্যবসায়। গরু চুরি ধরা না ধরা, মাদক চালান, ইয়াবা কারবার, অস্ত্র চোরাচালান, বিএনপি জামায়াত দলকে হুমকি থ্রেট, মামলা দেয়া, তথাকথিত আয়না ঘরে আটকে রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে বিপুল বাণিজ্য গড়ে তোলেন। তার আবদার না মিটাতে পারলে বিভিন্ন মামলার আসামি হতে হয় নিরীহ অনেককে। 

আরও পড়ুন: সাভারে পাচারকালে পিকআপসহ সাড়ে ৬ লাখ টাকার টিসিবি’র পণ্য জব্দ, আটক-১

অনুসন্ধানে জানা যায় ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতার হত্যার প্রতিবাদে নোয়াখালীতে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্ল্যহ বুলু উপস্থিত থাকলেও ডিবির দায়িত্বে থাকা রাজিবের নেতৃত্বে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী ও সদর উপজেলা থেকে বিএনপির ১২ নেতা কর্মীকে  গ্রেফতার করে পুলিশ।   

একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর বেগমগঞ্জ থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্ল্যাহ বুলুর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া  এবং তার স্ত্রী শামীমা বরকত লাকিসহ ৬ জনের উপর হামলায়  প্রতিবাদে নেতাকর্মীরা একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের করলে তাতে বিনা কারণে পেছন থেকে এলোপাথাড়ি পুলিশের লাঠিচার্জ করা হয়, ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে যায়, আহত হন  অনেক নেতাকর্মী, এদের মধ্যে উপজেলা সহ-সভাপতি মফিজুর রহমানও আহত হয়েছেন। ঐ সময়ে রাজিবের নির্দেশে যুবদল ও ছাত্রদলের ৩০ নেতাকর্মীকে আটক করে থানা পুলিশ। 

অন্যদিকে ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে বেগমগঞ্জ উপজেলায় একটি শান্তিপূর্ণ বৈঠক করে জামায়াত। পুলিশ ওই বৈঠক ঘেরাও করে রাজিবের নির্দেশে ৪০ জন নেতাকর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং তাদের নামে নিয়মিত মামলা করে আদালতে পাঠায়।  ১৫ দিন পরে আবারও ৩১ অক্টোবর নোয়াখালীতে বিএনপি জামায়াতের ৩০ নেতা-কর্মী গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও ওই সময় ৩ দিনে বিএনপি জামায়েতসহ সহযোগী সংগঠনের ১৫৩ নেতা-কর্মী গ্রেফতারের করা হয়। ১৯ নভেম্বর নোয়াখালীতে বিএনপির মিছিলে হামলা করা হয়। হামলায় ২০ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। নেতাকর্মীরা বুকে, পিঠে, হাতে গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনাও ঘটান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিব । পরে ২১ নভেম্বর নাশকতার অভিযোগ তুলে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপির আরো ২৫ ও জামায়েতের ২ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার করেন রাজিব। বিরোধীমত দমাতে রাজিবের জন্য এ ছিলো নিত্য দিনের কাহিনী।

২০২৪ এর নির্বাচনের সময়ে বিএনপিরাতম কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা মোকদ্দমা দিয়ে নির্বাচনের পরপরই পুরস্কার হিসেবে রাজিব পিপিএম পদক পান শেখ হাসিনা সরকারের স্নেহেপুষ্টে।

অনুসন্ধানে পাওয়া যায় যে ৩১ তম ব্যাচের আলেপ উদ্দিনের মতো ৩১ তম ব্যাচের রাজিব একটানা দীর্ঘ ৯ বছরের অধিক সময়  আটক গুম,খুনও চাঁদাবাজির কারণে র‍্যাবের মত একটা স্পেশাল ইউনিটে চাকরি করে্ন। তিনি র‌্যাব-১, র‌্যাব-২, ঢাকা এবং র‌্যাব ফোর্সেস হেডকোয়াটার্স ছিলেন। কথিত রয়েছে অদৃশ্য ইশারায় ক্ষমতার প্রভাবে এর বিভিন্ন ইউনিটসহ সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে ইন্টেলিজেন্স উইং, র‌্যাব ফোর্সেস হেডকোয়াটার্স এ আসেন আলোচিত জিয়াউল আহসান ও খায়রুল ইসলামের ছত্রছায়ায় । জানা যায় জিয়াউল আহসান এর ও রাজিবের গ্রামের বাড়ি একই জেলা ঝালকাঠিতে। র‌্যাবে থাকাকালীন আওয়ামী সরকার ও ঊর্ধতনদের আস্থাভাজন হয়ে বিএনপি,জামায়াত-শিবির তথা বিরোধীমত এর উপর দমন নিপীড়ন চালানোয়, গুম, খুন ও হত্যায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয় করেন। বিএনপি, জামায়েত, শিবিরবিরোধী আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়ে তখন বাংলাদেশ পুলিশের সম্মানজনক পিপিএম পদক পান।  র‍্যাবের চাকরির সময় তার আর্থিক অবস্থার অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে।  সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ০০-০১ বর্ষে ভর্তি হয়ে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে থাকতেন।   তৎকালীন জলিল সাহেবের ব্যাংক খ্যাত মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ছাত্রলীগের কোটায় চাকরি পান শুধুমাত্র তার ছাত্ররাজনীতি করার কারণে।তার বয়স যখন ৩২ তখন পুলিশ ক্যাডারে ৩১তম বিসিএস এ চাকরিতে যোগদান করেন ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি।  এ নিয়ে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের সময় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় খবর ও অভিযোগ হলেও ক্ষমতার কারনে অভিযোগ গায়েব হয়, এর বিরুদ্ধে কোন একশন নেওয়া হয়নি। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: গত বছরের ৫ আগস্ট নোয়াখালির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বেগমগঞ্জ সার্কেল অফিস সম্পুর্ন পুড়িয়ে দেওয়া হয়, কারণ সার্কেল কর্মকর্তা ও বেগমগঞ্জ থানার তখনকার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন মিলে বিএনপি জামায়াতের উপর অমানবিক দমন নিপীড়ন চালিয়েছে এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যাহত করা চেষ্টা করেছিল। দুখজনক ও আতংকের যে বর্তমানে রাজিব বিগত দিনের অন্যায় ঢাকতে বিএনপি এর দল্ভূক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। 

অভিনব প্রতারণা করে ২য় বিয়ে এবং টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল  

রাজিবের পারিবারিক সূত্র থেকে জানা যায় যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজিব ২০২৩ সালে নিজের স্ত্রী সন্তান থাকা স্বত্বেও তা গোপন করে এক নারী বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাকে ইসলামি শরা শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে করে বিভিন্ন কৌশলে ২য় স্ত্রীকে জানান যে তার পূর্বে একটা বিয়ে ছিল, ওই স্ত্রীর সাথে ২০২২ সালে তার ডিভোর্স হয়েছে । পরে রাজিব ২য় স্ত্রীকে ২৭/০২/২০২৪ তারিখে রেজিস্ট্রি বিয়ে করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজিবের পারিবারিক এক আত্নীয়ের মাধ্যমে পাওয়া তার বিয়ের সময়ের ভিডিও পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় রাজিব তার কোন স্ত্রী বর্তমান নেই, উল্লেখ করে সিগনেচারও করেন, কাজির ভিলিউম বিতে যার প্রমান রয়েছে। রাজিবের বেগমগঞ্জ কোয়ার্টার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আকদের পর থেকে এমনকি কাবিন বিয়ের পরেও নোয়াখালীতে প্রায়ই ২য় স্ত্রী গেলেও রাজিব কারো সাথে তাকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেননি। উলটো শুরু হয় যৌতুকের জন্য মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার। মামলার সূত্রে ও রাজিবের পারিবারিক সূত্রে জানা যায় ২য় স্ত্রী রাজিবকে তার বিভিন্ন বন্ধু বান্ধবের ধার মেটাতে ২১,৪০,০০০/ টাকা দিতে বাধ্য হন,পরে উক্ত টাকা যৌতুকের টাকা বলে রাজিব তা আর ফেরত দিবেন না বলে জানান। উপরন্তু বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে রাজিব যেমন ১ম স্ত্রীর দেনা ১৪ লাখ, বোনের পাওনা ২২ লাখ, শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক, চৌমুহনী শাখায় লোন  ৫ লাখ, জমি কিনতে ১৭ লাখ এভাবে আরো ৫৮ লাখ টাকা এবং ঢাকায় চলাচলের জন্য ১টি প্রাইভেট কার যৌতুক চাইলে ২য় স্ত্রী দিতে সম্পূর্ণ অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে তিনি মারধর করেন, গালচেপে ধরে মারার চেষ্টা করেন, হাতে পায়ে সিগারেটের আগুন দিয়ে সেকা দেন, ঘাড়ে, বুকে ও মুখ মণ্ডলে মারেন, রক্তাক্ত করেন এবং ২ মাসের অনাগত বাচ্চাকে মেরে ফেলার জন্য তলপেটে লাথি মারেন। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় যে রাজিব অফিসিয়ালি সব জায়গায় তার স্ত্রী হিসেবে তার তথাকথিত প্রাক্তন স্ত্রী অর্থাৎ নিগার সুলতানা (শারমিন) এর নাম ব্যবহার করে আসছেন, ২য় বিয়ে করেও কোথাও তিনি তা উল্লেখ করেননি।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স সূত্রে জানা যায় যে রাজিব মিথ্যা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার প্রাক্তন স্ত্রী নিগার সুলতানা (শারমিন) এর নামে এখনো নিয়মিত রেশন উত্তোলন করে আসছেন। অন্যদিকে মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিব ১১/৪/২০২৩ খ্রীঃ তারিখে নোয়াখালী পাসপোর্ট অফিস থেকে অফিসিয়াল পাসপোর্ট  ইস্যু করেন যার পাসপোর্ট নাম্বার– E 00107671, তাতেও তিনি তার স্ত্রী হিসাবে নিগার সুলতানা (শারমিন) এর নাম লিখেন , এছাড়াও নিগার সুলতানা (শারমিন) তিনি এনবিআর থেকে টিআইএন রেজিস্ট্রেশন করেন তারিখ ৩১/০৫/২০২৩ সেখানে তিনিও তার স্বামীর নাম লিখেন জনাব নাজমুল হাসান রাজিব, এমনকি তার পাসপোর্ট যার নম্বর B00014747, এতেও তার স্বামীর নাম রয়েছে  নাজমুল হাসান রাজিব। দুইজন ই দুইজনের অতি গুরুত্বপূর্ণ নথি পত্র এবং দাপ্তরিক ডকুমেন্টে নিজেদেরকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কথিত তালাকপ্রাপ্ত ১ম স্ত্রীর বাসায় ২৪/০২/২৪ তারিখ রাতে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে পারিবারিক আত্নীয় এবং হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।  পুলিশ মহাপরিদর্শক দপ্তরের এক অভিযোগে দেখা যায় যে, ২১/০৩/২০২৪ তারিখে তিনি তার ১ম স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রাম পুলিশ অফিসার্স মেসে ৬০৭ নম্বর রুমে থাকেন। অর্থাৎ শারমিন তার স্ত্রী হিসেবে বিদ্যমান থাকাবস্থায় জনাব নাজমুল হাসান রাজিব প্রতারণামূলকভাবে তার বিয়ে বলবৎ থাকার তথ্য গোপন করে একমাত্র অর্থ সম্পত্তির লোভে অপকৌশল অবলম্বন করে ছল ছাত্রীর আশ্রয় নিয়ে ষড়যন্ত্র করে ২য় স্ত্রীর অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই এই ২য় বিয়ে করেন।  একজন  পদস্থ কর্মকর্তা হয়েও বিভিন্ন নারীদের সাথে তার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। তার মোবাইল ফোনের ফরেন্সিক তদন্ত করলে তার সব রকম অপরাধ ঝুলি থলে থেকে বেরিয়ে আসবে। 

সরকারি কর্মচারী  রাজিবের কর্মস্থলে ব্যবসা ও সম্ভাব্য সম্পদ:

বিস্তারিত অনুসন্ধানে জানা যায় মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিবের ১ম শ্বশুর একেএম শফিকুর রহমান এর নামে ৭৮, দক্ষিণ বাসাবো, সবুজবাগ,ঢাকাতে ৫ কাঠা জমি এবং ২ ইউনিটের ৭ তলা ২ টি বাড়ি করেন। এতে খরচ দেখান মাত্র ১,৪৩,৩৩,৫৫০/-। এই বাড়িতে তার ১ম স্ত্রী নিগার সুলতানা (শারমিন) এর নামে আলাদা ২ টি ফ্ল্যাট নেন। অন্যদিকে ৭৮, দক্ষিণ বাসাবো, সবুজবাগ, ঢাকাতে তার ১ম স্ত্রী জনাব নিগার সুলতানা (শারমিন) ২০২৩ সালে তার আয়কর  রিটার্ন খোলেন ক্যাপিটাল জোন হিসেবে খ্যাত কর অঞ্চল:০৫, পিতা কন্যা দুজনের একই ঠিকানা হওয়া স্বত্বেও দুজনে আলাদা জোনে সুযোগ নেন কারণ তারা রাজিবের অবৈধ টাকা বৈধ করার অসাধু পায় অবলম্বন করেন। স্থানীয় সূত্রে ও কেয়ারটেকার রবিউলের কাছ থেকে জানা যায় এই ফ্ল্যাট বাড়ি এখন রাজিবকে তার ১ম স্ত্রী ও শ্বশুর দিচ্ছেনা এ নিয়ে বিরোধ রয়েছে।

সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ এর বিধিঃ ৭, বিধিঃ ১১, বিধিঃ ১৭ ,১৭(৩) এর বিধানমতে “কোন সরকারি কর্মচারী তার নিজ কর্মস্থল বা অন্য কোথাও নিজে কিংবা তার পরিবার কোন লাভজনক পেশা/ব্যবসায় জড়িত হতে পারবেন না।“  কিন্তু রাজিব তার চাকুরির ক্ষমতার অপব্যবহার করে কালো টাকার রং পরিষ্কার করতে তার কর্মস্থল নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানাসহ চৌমুহনী ও মাইজদীতে জমি/প্লট বেচাকেনা ও অন্যান্য ব্যবসায় নিযুক্ত হয়ে একদিকে সরকারি চাকরি আইন ভেঙ্গেছেন অন্যদিকে অসৎভাবে উপার্জিত কালো টাকা সাদা করে চলেছেন।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেগমগঞ্জ সাব-রেজিস্টার অফিস গোপন সূত্রে পাওয়া খবর কর্মস্থল নোয়াখালী জেলার মিয়ার পুলবাজার ও চৌমুহনি মৌজায়, কলেজ রোডের নিকটে এবং নরোত্তমপুর মৌজা, বেগমগঞ্জ উপজেলা, জেলা নোয়াখালী তে তার অন্ততপক্ষে ৮ টি দলিলে ৭ কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর বাড়ি ভিটি জমি রয়েছে, এতে ১৭ টি প্লট রয়েছে বলে জানা গেছে। এ জমির ক্রয়কাল : জানুয়ারী ২০২১ থেকে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ।নাজমুল হাসান রাজিব ২২/০১/২০২২ তারিখে বেগমগঞ্জ সার্কেল, নোয়াখালীতে প্রাইস পোস্টিং হিসেবে পদায়িত হন এবং সু-চতুর রাজিব যখন বুঝতে পারেন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে নিজের নামে ব্যবসা করলে ধরা পড়বে তখন ভূমি ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে তার সহোদর ভাই, মা, বোন, বোনের স্বামীর নামে বেনামে ভূমি ক্রয় বিক্রয় এর মাধ্যমে তার ঘুষ বাণিজ্য, দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করার পথ বেছে নেন। বরিশাল থেকে বরগুনা যাওয়ার বিশ্বরোডের পাশে কাঠের ঘর, শিমুলতলা,নলছিটিতে তিনি তার বাবা মা’র নামে বিল্ডিং করেন। মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিবের রয়েছে পিওএইচএস-৩ এবং পিওএইচএস-২ এ ১০ কাঠা এর ২ টি প্লট, যার মূল্যমান ১,৭৫,০০,০০০/-টাকা।

সুত্র জানায় রাজিব মা এর নামে, ভাইয়ের নামে জমি কিনে তা বিক্রির জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নেন কখনো নিজের নামে কখনো অন্যের নামে। এতে তাকে সহযোগিতা করেন জনাব মো. মোশারেফ হোসেন (রিমন), প্রোপাইটার : মেসার্স চয়নিকা ইলেক্ট্রনিক্স, চৌমুহনী বাজার, উপজেলা বেগমগঞ্জ,জেলা নোয়াখালী । রিমনের ব্যবসায় স্লিপিং পার্টনার হিসেবে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন মিস্টার রাজিব। অন্য আর একজন পার্টনার জনাব তুহিন, তিনি আবুল খায়ের কোম্পানির ডিলারশিপের ব্যবসা করেন।  

রিমনের সাথে রাজিব এর মা মোসা. খালেদা আক্তার (লিলি) স্বামী মো. আব্দুল খালেক ফকির, আইডি নং ৪২২৭৩০৫২৭০২৩৯, সাং বাসা/হোল্ডিং-৯৩, কলাবাড়ী রোড, নলছিটি, ঝালকাঠি ভূমি ক্রয়- বিক্রয়ের ২০ লাখ, ৩০ লাখ, ৪০ লাখ এরকম বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক চুক্তি দেখিয়ে জমি ব্যবসা থেকে শুরু করে আরো অনেক ব্যবসা দেখান যদিও আয় গোপন করতে তার নামে এভাবে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা থাকলেও তিনি কখনোই কোন আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি। মূলত এ সকলই মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিব এর ঘুষ ও অন্যান্য অবৈধ উপার্জনের টাকা।

আরও মূল আশ্চর্যের বিষয় মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিব যার টি আই এন নম্বর ৪৮০৭৩৬৬৫৭০০৪, ১ম টি আই এন খোলেন ২৮/১১/২০১৬ কর অঞ্চল ৪, সার্কেল -৭৬ , পুলিশের চাকরিতে যোগদানের ৫ বছর পর। টি আই এন খোলার পরেও তিনি কোন রিটার্ন দাখিল করেননি। এরপর আরো ৭ বছর পর  অর্থাৎ২০২২-২০২৩ সালে একসাথে ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন তার এক ট্রেনিংমেট এর মাধ্যমে ক্ষমতা খাটিয়ে বিভিন্ন বছরের রিটার্ন রেজিস্টারে এন্ট্রি দেন। তদন্তকালে উক্ত এন্ট্রিসমূহের হাতের লেখা এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রাদি যাচাই করলে এর প্রমাণ মিলবে।

ইমরান হোসেন (ইমু), তিনি ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ক্যামেলিয়া হাউস, ২২, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, ঢাকাতে চাকরি করেন। ৪৮০, মগবাজার, ঢাকাতে ১১০০ বর্গ ফুটের ফ্ল্যাট নিয়ে ২ ছেলেসহ থাকেন যা তার ভাই রাজিব তাকে ক্রয় করে দিয়েছেন। ইমরান হোসেন ইমু এর সহোদর ভাই (মাত্র ১ বছরের ছোট) তিনি  রাজিব এর সাথে মিলে তার অবৈধ অর্থের জোগান নিয়ে শেয়ার বাজার কারসাজির সাথে জড়িত। নামে বেনামে ১০০ টির  বেশি আইপিও শেয়ার আছে,আছে- প্লেসমেন্ট শেয়ার - সেকেন্ডারি শেয়ার - রাইট শেয়ার এর সিন্ডিকেট রয়েছে।

মো. মাহমুদুল হাসান তার ছোট বোনের স্বামীর নিট সম্পত্তির পরিমাণ ৮৯,৫০,৫৬১/- টাকা। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার খেজুরতলা গ্রামে, পিতা জনাব আবুল কাশেম হাওলাদার, মাতা কুলসুম বিবি, ৮ ভাইবোনের পরিবার, আর্থিক অবস্থা নিম্ন বিত্তের, একভাই পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর। রাজিব তার এই বেয়াই এবং বোনের স্বামীর মাধ্যমেও টাকা বৈধ করেন। রাজিব এর ছোট বোন জনাব সানজানা বিনতে খালেক (শুভ্রা) সুপারভাইজার পদে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে যোগদান করে ব্যাংকের গ্রাহকদের লোন দেওয়া, ফিল্ড অডিটে ভালো তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার নামে তিনি ঝালকাঠির নলছিটি শাখা তালতলা শাখা এবং ঝালকাঠি শাখার গ্রাহকদের লোন পাইয়ে দেওয়ার দেন-দরবার করে তাদের নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহণ করেন। এখানে গ্রাহকেরা তাদের সঞ্চিত অর্থ ডিপিএস, এফডিআর নগদায়ন করতে এসে কেহই সানজানার শুভ্রার খারাপ ব্যবহার ও হাতে ঘুষের টাকা গুঁজে না দিয়ে রেহাই পান না। তিনি ঝালকাঠিতে লিফট সম্বলিত আলিসান ৬ তলা বাড়িতে বসবাস করেন। তার দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালান। প্রায় প্রতি সপ্তাহে ঢাকা আসেন। তার মেঝ ভাই রাজিবকে ধার দেয়ার নামে ৪৩ লক্ষ টাকা প্রদান করেন এর মধ্যে ২১,৫০,০০০/ টাকা আয়কর ফাইলে ধার হিসেবে নেন, যা মূলত তার এবং তার ভাইয়ের অবৈধ উপার্জনের টাকা। এসব সম্পদের সুষ্ঠু তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।