এবছর সাতক্ষীরায় আমের বাম্পার ফলন, রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৭০ মেট্রিকটন

সাতক্ষীরা জেলার আম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। সাতক্ষীরার আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রথম এবছর প্রথম সোমবার (৫ মে) থেকে বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস ও দেশীয় বৈশাখী আমসহ স্থানীয় জাতের আম।
গত সোমবার (৫ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের মো. বেলাল হোসেনের গাছের আম পেড়ে সাতক্ষীরা জেলার আম সংগ্রহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক জনাব মো. মোস্তাক আহমেদ । এসময় জেলার অনেক আম চাষি ও ব্যবসায়ী বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে: প্রেস সচিব
এই অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের জন্য সাতক্ষীরার আম দেশের অন্য অঞ্চলের আমের চেয়েও অগ্রিম পরিপক্ব হয়। ফলে আগে বাজারে ওঠার কারণে বেশি দামে বিক্রিও হয় সাতক্ষীরার এই আম।
সাতক্ষীরা জেলার অতি সুস্বাদু গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি জাতের আমের কদর আছে দেশ সহ বিদেশেও। জেলার আবহাওয়া ও মাটি এই অঞ্চলের আমকে করেছে সুস্বাদু, ঘ্রাণযুক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী। যা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। কাজেই সাতক্ষীরায় উৎপাদিত আম শুধু বাংলাদেশের বাজারে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যে কারণে প্রতি মৌসুমে দেশের গোন্ডি পেরিয়ে ২০১৫ সাল থেকেই বিশ্বে বিভিন্ন দেশে নিয়মিত রপ্তানি হয়ে আসতেছে সাতক্ষীরা জেলার সুস্বাদু বিভিন্ন প্রকারে আম। যা জেলার অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাতিলের দাবিতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মানববন্ধন
শ্যামনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জনাব মো. নাজমুল হুদা, উপজেলা কৃষি অফিসার, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫ হাজার আম বাগান রয়েছে। চলতি বছর এখান থেকে সম্ভাব্য ৬২ হাজার ৮০০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা কৃষি বিভাগ।
এছাড়া তিনি আরও বলেন, প্রতিটি জাতের আম পরিপক্ব হওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। আগেভাগে পাড়লে আমের স্বাদ ও গুণগত মান কমে যায়, ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির সুযোগ ক্ষুণ্ন হয়। আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের কারণে এখানকার আম অগ্রিম পরিপক্ব হয়। আগাম বাজারে ওঠার কারণে চাষিরা দামও পান বেশি। সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, গোলাপ খাস, সহ স্থানীয় জাতের আম বাজারজাত ও রপ্তানির জন্য অনুমতি থাকলেও কিছু কিছু আমের জন্য আরও দেরিতে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন যথাক্রমে, হিমসাগর- ২০ই মে, ল্যাংড়া- ২৭ই মে, আম্রপালি- ৫ই জুন। নির্ধারিত এ সময়ের আগে চাষীদের এসকল অপরিপক্ব আম বাজার জাত না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত জেলা প্রশাসক জনাব মোস্তাক আহমেদ সাতক্ষীরা জেলার আমের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে এবং বিশুদ্ধ ও নিরাপদ আম বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে সাতক্ষীরা জেলার আম সংগ্রহের একটি সময়সূচি প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন। যা গত ৩০ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘নিরাপদ আম বাজারজাতকরণ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় আম সংগ্রহের এই সূচি প্রকাশ করেন। সূচি অনুযায়ী ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস ও দেশীয় বৈশাখী আমসহ স্থানীয় জাতের আমপাড়া শুরু হয়েছে। আগামী ২০ মে হিমসাগর, ন্যাংড়া- ২৭ মে এবং আম্রপালি- ৫ জুন থেকে সংগ্রহ ও বাজারজাত করা যাবে। এছাড়া জেলা প্রশাসক জনাব মোস্তাক আহমেদ বলেন, সাতক্ষীরার আমের খ্যাতি শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও। সাতক্ষীরার আমের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে এবং বিশুদ্ধ ও নিরাপদ আম বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে জেলায় আম সংগ্রহের একটি সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়সূচির আগে অপরিপক্ব আম সংগ্রহ, সংরক্ষণ বা বাজারজাতকরণে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
এসময় তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলা থেকে প্রায় ৭০ টন আম বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। রপ্তানিযোগ্য আম নিশ্চিত করতে গুণগতমান রক্ষায় নির্ধারিত সময়ের আগে আম সংগ্রহ বন্ধ রাখা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কৃষি বিভাগের সহায়তায় এ বিষয়ে জেলাব্যাপী কঠোর নজরদারি থাকবে।