ট্রেন ও আসন সংকটে যাত্রী দুর্ভোগ চরমে

Sanchoy Biswas
আশরাফ হোসেন রাজা, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর)
প্রকাশিত: ৫:৫৪ অপরাহ্ন, ২২ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১:৪৯ পূর্বাহ্ন, ২৯ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দেওয়ানগঞ্জ–ঢাকা রেলপথে প্রতিদিন তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নামে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। ট্রেন দুটির মধ্যে ব্রহ্মপুত্র প্রতিদিন ভোর ছয়টা চল্লিশ এবং তিস্তা সোমবার ব্যতীত সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে দুপুর তিনটায় দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সোমবার আন্তঃনগর তিস্তা বন্ধ থাকে। এ দুটি আন্তঃনগর ট্রেনের দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনের জন্য বরাদ্দকৃত আসনের তুলনায় ঢাকা গামী যাত্রী অনেক বেশি। এছাড়াও ব্যক্তি মালিকানার কমিউটার নামে দুটি ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু কমিউটার ট্রেন দুটি যত্রতত্র স্টেশনে দাঁড়ায়। সে কারণে বেশির ভাগ যাত্রী ঢাকা যাতায়াতে আন্তঃনগর ট্রেনের ওপর বেশি নির্ভরশীল।

বরাদ্দকৃত দুটি আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রীর তুলনায় এ স্টেশনের জন্য যথেষ্ট নয়। যাত্রীর চাপ অনুপাতে কমপক্ষে আরও একটি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন এ স্টেশনের জন্য বরাদ্দের প্রয়োজন বলে দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা। তাতে যাত্রী দুর্ভোগ লাঘব হবে। দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন থেকে নতুন ট্রেন চালুসহ ঢাকা চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন দুটির বগি বাড়িয়ে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির দাবিও জানিয়েছেন তারা।

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে আগামীকাল ৮ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে

দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনটি ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের সর্বশেষ স্টেশন। এ অঞ্চল থেকে সড়ক যোগাযোগ সচরাচর নয়। সে কারণে বৃহত্তর এ অঞ্চলের মানুষ ঢাকা যাতায়াতে ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল। এ স্টেশন থেকে দেওয়ানগঞ্জ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বকশীগঞ্জসহ কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর, রৌমারীর অনেক যাত্রী ট্রেন ধরে ঢাকা যাতায়াত করে। ফলে এ স্টেশনে ট্রেন যাত্রীর চাপ প্রতিদিনই থাকে দ্বিগুণ। অনেক যাত্রী স্টেশনে এসে টিকিট না পেয়ে বিকল্প পথে ঢাকা যাতায়াত করছে। এতে তাদের একদিকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ, অন্যদিকে ভাড়াও গুনতে হয় অধিক।

কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুরের ট্রেন যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, আন্তঃনগর তিস্তা ট্রেনের টিকিট অনলাইন থেকে সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ট্রেন ছাড়ার এক ঘণ্টা আগে স্টেশনে এসেছি। স্টেশন কর্তৃপক্ষ টিকিট নেই বলে জানান। বাধ্য হয়ে সিএনজি যোগে জামালপুর যাচ্ছি। সেখান থেকে বাস ধরে ঢাকা যাব। এতে একদিকে সময় ও দুর্ভোগ পোহাতে হবে, অন্যদিকে তেমনি দ্বিগুণ অর্থ গুনতে হবে। তিনি দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন থেকে আরেকটি নতুন ট্রেন চালুর দাবি জানান।

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গুলিতে নিহতের মরদেহ নিয়ে থানা ঘেরাও

স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা চলাচলে এ স্টেশনে বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা ২০৪টি। এর মধ্যে আন্তঃনগর তিস্তায় শোভন চেয়ার ৪৮টি, স্নিগ্ধা এসি চেয়ার ৪৫টি ও এসি ক্যাবিন ৩টি। আন্তঃনগর ব্রহ্মপুত্রে শোভন চেয়ার ৫৮টি ও স্নিগ্ধা এসি চেয়ার ৫০টি। শতভাগ টিকিট অনলাইনে যাওয়াতে অনলাইনে ও স্টেশন কাউন্টার থেকে দ্বৈতভাবে টিকিট সংগ্রহ করা যায় না। শতভাগ টিকিট নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরেই বুকিং হয়। এ কারণে অনেক যাত্রী কাঙ্ক্ষিত সময়ের টিকিট সংগ্রহ করতে পারে না। কেবলমাত্র অনলাইন সার্ভিস সম্পর্কে অধিক জ্ঞানসম্পন্নরাই আগেভাগে টিকিট কেটে রাখেন।

ফারাজীপাড়ার ট্রেন যাত্রী আনিছুর রহমান বলেন, আমি অনলাইন সম্পর্কে বুঝি না। সে কারণে ট্রেনের টিকিট কাটতে পারি না। টিকিট কাটতে আমাকে অন্যের সহায়তা নিতে হয়। তার পরেও কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে ঢাকা যাতায়াতে ট্রেন ভাগ্যে জুটে না। তিনি দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন থেকে একটি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবি জানান।

পোল্যাকান্দি নামাপাড়ার ট্রেন যাত্রী ফেরদৌস হাসান জানান, শেষ স্টেশন হওয়ায় এ স্টেশনে যাত্রীর চাপ থাকে বেশি। স্বল্প সংখ্যক টিকিট এ স্টেশনের জন্য যথেষ্ট নয়। এ স্টেশন থেকে দেওয়ানগঞ্জ ছাড়াও কয়েকটি উপজেলার যাত্রী ট্রেন ধরে ঢাকা যাতায়াত করে। সে কারণে যাত্রী অনুপাতে এ স্টেশন থেকে ঢাকাগামী আরও একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা প্রয়োজন।

কাঠারবিল সাপমারীর ট্রেন যাত্রী নজরুল ইসলামের ভাষ্য, যাত্রার চার দিন পূর্বে ঢাকার টিকিট অনলাইনে কাটতে গিয়ে পাইনি। পরে কাউন্টারে এসে জানতে পারি টিকিট নেই। আমার মতো অনেকেই স্টেশনে টিকিট কাটতে এসে পায়নি। যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে তিনি দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন থেকে ঢাকা চলাচলকারী একটি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবি জানান।

স্টেশন মাস্টার আব্দুল বাতেন বলেন, ট্রেনের টিকিট শতভাগ অনলাইনে চলে যাওয়ায় টিকিট কালোবাজারি নেই। তবে যাত্রীদের চাপ রয়েছে। শতভাগ অনলাইনের যুগে টিকিট বৃদ্ধি করে তেমন সুফল পাওয়া যাবে না। যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনা করে এ স্টেশন থেকে একটি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।