যানজটমুক্ত মহানগর গড়ার জাতীয় রোডম্যাপ: ঢাকাকে বাঁচাতে এখনই প্রয়োজন সাহসী সিদ্ধান্ত

Any Akter
এম এফ ইসলাম মিলন, কলামিস্ট
প্রকাশিত: ৩:৩১ অপরাহ্ন, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৫:১১ অপরাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব মহানগর আজ যানজটের দুঃসহ পরিস্থিতিতে পর্যুদস্ত। কর্মঘণ্টা নষ্ট, জ্বালানির অপচয়, অর্থনীতির ক্ষতি ও মানসিক অবসাদ- সব মিলিয়ে কোটি মানুষের জীবন আজ স্থবিরতার শৃঙ্খলে বন্দি। ঢাকার যানজট বিশ্বের সবচেয়ে খারাপগুলোর একটি হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে চিহ্নিত। এ অবস্থায় শুধু সড়ক নির্মাণ বা ফ্লাইওভারই সমাধান নয়; প্রয়োজন পরিবহন ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার- একটি আধুনিক, কার্যকর ও পরিকল্পিত রূপান্তর।

ঢাকার প্রধান সমস্যা হলো অসংগঠিত পরিবহন ব্যবস্থা, বিশেষ করে লক্ষাধিক রিকশা, অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও ছোট যানবাহনের বিশৃঙ্খল চলাচল। এখন সময় এসেছে একটি দীর্ঘমেয়াদি, সাহসী ও বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা গ্রহণের। সেই উদ্দেশ্যেই নিচে জাতীয় পর্যায়ের একটি সমন্বিত প্রস্তাবনা তুলে ধরা হলো।

আরও পড়ুন: সত্যিকারের স্বাধীনতা দিবসের সন্ধানে

✔ ঢাকাসহ সারাদেশে যানজট নিরসনে কাঠামোগত সংস্কার প্রস্তাবনা

প্রথম ধাপ: পরিবহন খাতের রূপান্তর

আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টা: জনগণের প্রতি সদয় হোন, অপসারণ করুন অযোগ্যদের

১) ২০২৭ সাল থেকে ঢাকায় সকল প্রকার প্যাডেল রিকশা চলাচল বন্ধ ঘোষণা।

 • নগর পরিবহন আধুনিক করতে এটি হবে টার্নিং পয়েন্ট।

২) রিকশাচালকদের বিকল্প জীবিকায় সুযোগ দিতে ফ্রি মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা।

৩) বিশেষ সরকারি প্রকল্পের আওতায় ৫ লক্ষ রিকশাচালকের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ (ভারী/মাঝারি/হালকা) প্রদান।

৪) প্রশিক্ষিত চালকদের জন্য জামানতবিহীন স্বল্প সুদে ব্যাংক লোনে আধুনিক এসি পাবলিক বাস ও অন্যান্য যানবাহন সরবরাহ।

৫) আয় থেকে লোন পরিশোধ মডেলে যানবাহনের মালিকানা ধীরে ধীরে চালকের কাছে হস্তান্তর।

দ্বিতীয় ধাপ: সড়ক ব্যবস্থাপনার আমূল পরিবর্তন

৬) প্রতিটি এলাকায় নির্দিষ্ট রুটভিত্তিক বাস টার্মিনাল স্থাপন।

 • মেইন রোডে কোনো টার্মিনাল নয়।

 • যত্রতত্র থামা বন্ধ; শুধু নির্দিষ্ট স্টপেজে যাত্রী ওঠানামা।

৭) অলিগলি ও মহল্লার জন্য ১৬ সিটের পরিবেশবান্ধব শাটল বাস বা ব্যাটারি চালিত ভ্যান।

 • এসব পরিবহনও প্রশিক্ষিত ড্রাইভার পরিচালনা করবেন।

৮) সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রীসেবা বাধ্যতামূলক করা।

৯) মেট্রোরেলের মতো স্মার্ট পেমেন্ট সিস্টেম সার্বজনীন করা।

১০) অবৈধ প্রতিযোগিতা বন্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন- লাইসেন্স বাতিলসহ ভারী জরিমানা।

১১) এপস-ভিত্তিক রেন্ট-এ-কার সেবা শক্তিশালী ও সাশ্রয়ী করা।

১২) পর্যায়ক্রমে সারাদেশের অন্যান্য মহানগরেও একই নীতিমালা বাস্তবায়ন।

✔ সুফল আসবে যেভাবে

১) রিকশার পরিবর্তে আধুনিক বাস- নগর পাল্টে যাবে

ঢাকার রাস্তায় রিকশামুক্ত পরিবেশ তৈরি হলে এসি সিটিং সার্ভিস বাস সহজলভ্য হবে। যাতায়াতের মান উন্নত হবে, সময় কম লাগবে, শহরের চেহারা বদলে যাবে।

২) পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক, নির্দিষ্ট রুট, নির্দিষ্ট স্টপেজ- সব মিলিয়ে সড়ক হবে নিরাপদ ও গতিশীল।

৩) ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমবে

সাশ্রয়ী, আরামদায়ক ও সময়মতো চলাচল নিশ্চিত হলে নাগরিকেরা অপ্রয়োজনে প্রাইভেটকার ব্যবহার বন্ধ করবে।

৪) প্রাইভেটকার চালকদেরও নতুন আয়ের সুযোগ

তাঁরাও লোনে গাড়ি নিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে বৈধ আয়ের সুযোগ পাবেন।

৫) জ্বালানি ও অর্থ সাশ্রয়- অর্থনীতি হবে শক্তিশালী

যানজট কমলে জ্বালানি সাশ্রয়, কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা বাড়বে- যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

৬) সারাদেশে সহজ বাস্তবায়ন

ঢাকায় সফল বাস্তবায়ন হলে একই মডেল সারাদেশের নগরীতে প্রয়োগ করা সহজ হবে।

উপসংহার

ঢাকাকে বাঁচাতে হলে এখনই প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, সমন্বিত বাস্তব পরিকল্পনা এবং পরিবহন খাতে বড় ধরনের কাঠামোগত বিপ্লব। রিকশা নির্ভর চলাচল থেকে বের হয়ে আধুনিক, বৈজ্ঞানিক ও শৃঙ্খলাবদ্ধ গণপরিবহন ব্যবস্থা ছাড়া যানজটমুক্ত মহানগর সম্ভব নয়।

এই প্রস্তাবনার মূল লক্ষ্য- মানুষকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়া, উৎপাদনশীল শহর গড়া এবং রিকশাচালকদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ নতুন জীবিকা তৈরি করা। এখন সময় শহরকে আধুনিকতার পথে এগিয়ে নেওয়ার।