রাজনৈতিক আশ্রয়ে বাংলাদেশে দুর্নীতি ও অপরাধের বৃদ্ধি

স্বাধীনতার বহু বছর পার হলেও বাংলাদেশ আজও এমন এক সংকটের মুখোমুখি, যা শুধু অর্থনৈতিক বা অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ নয়। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সিস্টেম্যাটিক দুর্নীতি এবং প্রকাশ্য অপরাধের জন্য উর্বর মাটিতে পরিণত হয়েছে, যা প্রায়শই রাজনৈতিক আশ্রয়ে ঢেকে রাখা হয়। ফলশ্রুতিতে আইন, জন স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা ক্রমশ ক্ষয় পাচ্ছে, যা দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি।
অপরাধীর জন্য রাজনৈতিক আশ্রয়
আরও পড়ুন: মেটিকুলাস ডিজাইন ও অদৃশ্য শক্তির থাবা : তারেক রহমানের রাজনীতি
আজকের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো রাজনৈতিক পরিচয়কে অপরাধীদের সুরক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা। কুখ্যাত অপরাধী ও চাঁদাবাজরা প্রায়শই প্রধান রাজনৈতিক দলের আশ্রয় দাবি করে, যেমন বিএনপি বা আওয়ামী লীগ। এর ফলে সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠী প্রায় ন্যূনতম শাস্তি ভয় ছাড়াই কাজ চালাতে সক্ষম হচ্ছে। চাঁদাবাজি, অবৈধ জমি দখল, নাগরিক ও ব্যবসায়ীর উপর সহিংস হামলা—সবই একটি প্রমাণিত প্রবণতা যে রাজনৈতিক আশ্রয় মানে প্রায়শই অস্পৃশ্যতা।
সারা দেশের গ্রাম গন্জ্ঞ ও সব শহর এলাকায় সাম্প্রতিক ঘটনা এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। রাজনৈতিক সম্পর্কযুক্ত অপরাধীরা পুনরায় সশস্ত্র হামলা, চাঁদাবাজি এবং অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে, পুলিশের হস্তক্ষেপ ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও। একাধিক মামলা ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তারা এখনও মুক্তভাবে কাজ করছে, যা দায়িত্বহীনতা এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার চরম উদাহরণ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা: অগ্রগতির জন্য মারাত্মক হুমকি
দুর্নীতি: কারণ ও ফলাফল
অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয় কেবল এক সমস্যা নয়; দুর্নীতি সব স্তরে বিস্তৃত। সরকারি অফিসগুলো প্রায়শই নাগরিকদের অধিকার রক্ষার পরিবর্তে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার হচ্ছে। সরকারি প্রকল্প, জমি বরাদ্দ এবং উন্নয়ন তহবিল প্রায়শই রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের জন্য ব্যক্তিগত লাভের উৎসে পরিণত হচ্ছে।
এই অপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের সমন্বয় একটি দুষ্কৃতিক চক্র তৈরি করছে। নাগরিকরা যখন অপরাধ রিপোর্ট করে, তারা হয় ত্রাসের মুখোমুখি হয়, অথবা পুলিশ ও প্রশাসনের দ্বারা চাপের শিকার হয়। এর ফলে এমন পরিবেশ তৈরি হচ্ছে যেখানে অপরাধ লাভজনক এবং প্রায় অনিবার্য।
দুর্নীতি: কারণ ও ফলাফল
অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয় কেবল এক সমস্যা নয়; দুর্নীতি সব স্তরে বিস্তৃত। সরকারি অফিসগুলো প্রায়শই নাগরিকদের অধিকার রক্ষার পরিবর্তে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার হচ্ছে। সরকারি প্রকল্প, জমি বরাদ্দ এবং উন্নয়ন তহবিল প্রায়শই রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের জন্য ব্যক্তিগত লাভের উৎসে পরিণত হচ্ছে।
২০২৫ সালের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ও তার আশেপাশে অনুমোদিত সরকারি নির্মাণ প্রকল্পের অন্তত ৩০%–৪০% কাজে অনিয়ম, খরচ বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া, ব্যাংক ঋণ, জমি বরাদ্দ ও লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ছত্রছায়া কাজে লাগানো হচ্ছে, যা সাধারণ নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এই অপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের সমন্বয় একটি দুষ্কৃতিক চক্র তৈরি করছে। নাগরিকরা যখন অপরাধ রিপোর্ট করে, তারা হয় ত্রাসের মুখোমুখি হয়, অথবা পুলিশ ও প্রশাসনের দ্বারা চাপের শিকার হয়। এর ফলে এমন পরিবেশ তৈরি হচ্ছে যেখানে অপরাধ লাভজনক এবং প্রায় অনিবার্য।
সমাজ ও অর্থনীতিতে প্রভাব
রাজনৈতিক আশ্রয়ে অপরাধী আচরণের প্রভাব ব্যক্তিগত ঘটনার বাইরে বিস্তৃত। ব্যবসায়ীরা “সুরক্ষা ফি” দিতে বাধ্য হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা আইনশৃঙ্খলার অভাবে ভয় পাচ্ছে, এবং সামাজিক সেবা দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রদায় আতঙ্কিত, শহর ও গ্রাম উভয়ই সহিংসতা এবং চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে।
তদুপরি, যুব সমাজ ও শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়ছে, কারণ তারা দেখছে যে ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক সংযোগই গুরুত্বপূর্ণ, আইন, ন্যায় বা যোগ্যতার চেয়ে। ২০২৫ সালের জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৪২% যুবক জনগণ মনে করে রাজনৈতিক সংযোগ না থাকলে তারা কোনো বড় উদ্যোগ বা ব্যবসায়িক উদ্যোগ শুরু করতে পারবে না। এটি সামাজিক সম্প্রীতি ক্ষয় এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
দায়বদ্ধতা ও সংস্কারের আহ্বান
সমাধান শুধুমাত্র বাক্য নয়; তা কার্যকর পদক্ষেপে নিহিত। রাজনৈতিক দলগুলিকে অপরাধীদের আশ্রয় বন্ধ করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাব থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং অপরাধী যে কোনো রাজনৈতিক সংযোগের ভয় ছাড়াই শাস্তির মুখোমুখি হবে।
নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও জনগণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, জনসচেতনতা ও গণমুখী আন্দোলন অনিয়ম উদঘাটন ও সংস্কারের চাপ তৈরি করতে পারে। সরকারী তদারকি ব্যবস্থা শক্তিশালী করা প্রয়োজন, যাতে সরকারি অফিস, প্রকল্প ও আইন প্রয়োগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।
উপসংহার
বাংলাদেশ আজ একটি সংকটময় সময়ে দাঁড়িয়ে। রাজনৈতিক আশ্রয়ে অপরাধ ও দুর্নীতির সংযোগ ছিন্ন না হলে, দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা, নাগরিক আস্থা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আইনপ্রণীত নাগরিকদের সুরক্ষা, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এখনই শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন।