রাবিতে শিক্ষার্থীদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘ইউএসডিএফ’-এর আত্মপ্রকাশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষার্থীদের অধিকার ও গণতান্ত্রিক চেতনার পক্ষে কাজ করার লক্ষ্যে ‘ইউনাইটেড স্টুডেন্টস ডেমোক্রেটিক ফোরাম’ (USDF) নামে নতুন একটি নন-পার্টিজান প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করেছে। সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটির আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইইআর বিভাগের শিক্ষার্থী তাসিন খান। তিনি বলেন “আজ আমরা একটি নতুন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রস্তাবনা নিয়ে হাজির হয়েছি। ৩৬শে জুলাইয়ের রক্তস্নাত অভ্যুত্থানের পর সাধারণ ছাত্রসমাজের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ক্রমেই ম্লান হয়ে গেছে। বিগত দেড় দশকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিবাদী সংগঠন ছাত্রলীগসহ লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিপীড়ন, আস্ফালন ও অপরাধের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়েও কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি, বরং ‘নতুন মোড়কে পুরোনো পণ্য’র মতো আগের ধাঁচের রাজনীতিই অব্যাহত রয়েছে।”
আরও পড়ুন: রাতের মধ্যে ছাত্রদলের কমিটি স্থগিত না হলে কঠোর পদক্ষেপ: উমামা ফাতেমা
তিনি আরও বলেন, "বুয়েটের আবরার ফাহাদ, যবিপ্রবির রিয়াদ, রাবির রিমু-নোমানীসহ অসংখ্য সাধারণ শিক্ষার্থী এই দ্বান্দ্বিক ও দমনমূলক পার্টিজান ছাত্ররাজনীতির বলি হয়েছেন। বক্তারা অভিযোগ করেন, লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি কেবল পাশবিকতা ও কলুষিত ইতিহাসই উপহার দিয়েছে। যার ফলে অধিকাংশ সাধারণ শিক্ষার্থী এসব সংগঠনের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। তারা কোনো রাজনৈতিক পতাকাতলে আশ্রয় না নিয়েও সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজ অবস্থান থেকে গণতান্ত্রিক চেতনা লালন করতে চায়।"
লিখিত বক্তব্যে ‘ইউনাইটেড স্টুডেন্টস ডেমোক্রেটিক ফোরাম’ (USDF)-এর উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলা হয়, "এটি একটি স্বাধীন ও দলনিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে দলীয় পরিচয়হীন সাধারণ শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরবে। কোনো রাজনৈতিক দলের সহায়ক সংগঠন না হয়ে এটি হবে গণতন্ত্রকামী ছাত্রজনতার আকাঙ্ক্ষার প্রকাশভূমি। USDF-এর প্রধান অস্ত্র হবে মেধা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সক্রিয় সমর্থন, যা অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি নির্ভীক কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করবে।"
আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ‘প্রক্সি’ জালিয়াতি: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আটক ৩
ছাত্র রাজনীতির নতুন সংস্কৃতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তারা বলেন, “ছাত্ররাজনীতি মানে সংঘাত কিংবা দখল নয়; বরং এটি হতে পারে নীতিনির্ধারণমূলক সংলাপ, যুক্তিনির্ভর বিতর্ক এবং কনফারেন্সের মাধ্যমে নেতৃত্ব তৈরির আধুনিক সংস্কৃতি। নন-পার্টিজান ছাত্র জনতার সম্মিলিত শক্তিই পারে শিক্ষাঙ্গনকে নিরাপদ, গণতান্ত্রিক ও মেধাভিত্তিক করে তুলতে, আর USDF সেই ভাবনারই সম্প্রসারণ।"
নব গঠিত এই সংগঠনের রাকসু নির্বাচন কেন্দ্রিক পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত হুসাইন জানান, "রাকসু নিয়ে আপাতত আমাদের কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। আমাদের সংগঠনের মূল লক্ষ্য যাদের কণ্ঠ যুগে যুগে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন কিংবা রাজনৈতিক শক্তির দ্বারা রোধ করা হয়েছে, যারা নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের চেষ্টা করলেই দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন—তাদেরকে একটি সংগঠনের ছায়া দেওয়া, যাতে তারা সংগঠিত হতে পারেন এবং তাদের কথা বলতে পারেন।"
রাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "প্রায় সব সংগঠনই যখন রাকসুতে অংশ নিচ্ছে, তখন আমরাও অংশ নিতে পারি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি পরিস্থিতিনির্ভর।"