প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে চলছে অরাজকতা, বদলি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ
নানা অনিয়ম ও দুর্নীতে নিমজ্জিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে মহাপরিচালকের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বর্তমানে সেখানে চরম বিশৃঙ্খা বিরাজ করছে। গত বছরের আগষ্ট মাসে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনও সেখানে বহাল রয়েছেন। মহাপরিচালকসহ আওয়ামী দোসরদের নেতৃত্বে এর ভেতরে এখন অসংখ্য অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও লাগামহীন দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানের বর্তমান মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান। যিনি অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদায় প্রেষণে দায়িত্ব নিয়েছেন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এর আগে এখানে তিনি পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মে জড়িয়ে আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের তথ্য ও নথিপত্রে মিলেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।
বদলি বাণিজ্য: অনলাইন শেষে গোপন অফলাইন বদলি: সূত্র জানায়, মহাপরিচালকের দুর্নীতির সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র হচ্ছে বদলি বাণিজ্য। ২০২৫ সালের অনলাইন বদলির পরই ১৫৬৮ জন শিক্ষককে অফলাইন বদলি করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯৭২ জন হিন্দু শিক্ষক রয়েছেন বলে অভিযোগ। এসব বদলি করা হয়েছে অত্যন্ত গোপনে, উপজেলা পর্যায়ে কোনো ঘোষণা ছাড়াই।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি হল পরিদর্শন করেছেন বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা
বদলি নির্দেশিকার ৩.৬ ধারা উপেক্ষা করে শহরের শূন্য পদে নিজ উপজেলার শিক্ষককে না দিয়ে বাইরের উপজেলার শিক্ষক এনে পদ পূরণ করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বদলি নিষিদ্ধ থাকলেও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সেখানেও বদলির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে—বদলি বাণিজ্যে মহাপরিচালকের আত্মীয়–স্বজন যেমন চাচাতো ভাই, বোন, বোন জামাই, শাশুড়ি এবং তার একান্ত সহকারী মো. রায়হান উদ্দীন সরাসরি জড়িত। এদিকে আওয়ামী দোসররা ঢাকাসহ সারাদেশে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এমনকি ওবায়দুল কাদেরের ব্যাক্তিগত সচিব গৌতম পালের স্ত্রী মুক্তি বসাক এখনও বহাল তবিয়ত এ মতিঝিল থানার শিক্ষা অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ ছাত্রদল করা কর্মকর্তাদের বদলিসহ নানাভাবে হয়রানী করছেন তিনি। বিভিন্ন সূত্র মতে তিনি একটি গুপ্ত দলের আদর্শের লোক হলেও অতীতে তিনি আওয়ামী ব্যানারে সুবিধা নিতেন। তাই বিএনপিমনা অফিসারদের দু চোখে দেখতে পারেন না।
অভিযোগে জানা যায়, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের নিজ জেলায় শূন্য পদ থাকলেও ইচ্ছাকৃতভাবে দূরবর্তী এলাকাতে বদলি করে হয়রানি করা হচ্ছে। তবে চাহিদামতো সুবিধা দিলে আদেশ সংশোধন করে কাছাকাছি এলাকায় বদলি করে দেওয়া হয়। একই আদেশ ২–৩ বার পর্যন্ত সংশোধন করার উদাহরণও পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: দাবি আদায়ে শিক্ষকদের আল্টিমেটাম: আজ থেকে লাগাতার কর্মবিরতি
স্কূল ফিডিং প্রোগ্রাম: নিষিদ্ধ নেতাকে কাজ প্রদান: স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি কাজের মধ্যে ৬টি দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত এক নেতাকে।
মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ, গবেষণা, ওরিয়েন্টেশন ও কর্মশালার নামে কোটি কোটি টাকা সম্মানী ও টিএ/ডিএ বিল হিসেবে উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই তারিখে একাধিক টিএ/ডিএ বিল উত্তোলনের নথিও রয়েছে বলে দাবি করেছে সূত্র।
রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণ ও পক্ষপাতের অভিযোগ: বিভিন্ন সূত্র মতে, পূর্ববর্তী সরকারের রাজনৈতিক তদবিরে তিনি অতিরিক্ত সচিব হন এবং পরে বিশেষ তদবিরে মহাপরিচালক পদেও আসেন। তিনি দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তার সুরক্ষা দিচ্ছেন এবং বিপরীতমতাদর্শী বা অপ্রিয় কর্মকর্তাদের হয়রানি করছেন।
ডেমরা থানার নারী কর্মকর্তাকে বিভাগীয় মামলার পরও বহাল রাখা
অভিযোগে আরও বলা হয়, ঢাকা ডেমরা থানার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোছা. নাহিদা খাতুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও মহাপরিচালক তাকে বিশেষ পদ্ধতিতে বহাল রাখছেন। এদিকে নারী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সঙ্গে মহাপরিচালকের বিশেষ কথোপকথনের অডিও–প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও সূত্র দাবি করেছে। নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি: সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে আরও ভয়াবহ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। তারা দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে মহাপরিচালকের সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি ম্যাসেজ দেওয়া হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।





