নির্বাচন ঘিরে ইসির নতুন বিধিমালা

Any Akter
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৪:১৩ অপরাহ্ন, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ৪:২৮ অপরাহ্ন, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী ঘনিয়ে আসছে বহুল কাঙ্ক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই ঘোষণা হতে পারে নির্বাচনের তারিখ। এই প্রেক্ষাপটে সংসদীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫’ জারি করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি জানিয়েছে, নতুন এই নীতিমালা শুধুমাত্র দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হলো সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি বা বিচ্যুতি থাকলে তা চিহ্নিত করা, নির্বাচনের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং ভোটারদের আস্থা প্রতিষ্ঠা করা। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নীতিমালাটি জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন: প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা কলি’ যুক্তির ব্যাখ্যা দিল ইসি

নিবন্ধনের যোগ্যতা ও শর্ত

নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব বেসরকারি সংস্থা গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে এবং যাদের নিবন্ধিত গঠনতন্ত্রে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণের অঙ্গীকার রয়েছে, কেবল তারাই পর্যবেক্ষক হিসেবে আবেদন করতে পারবে।

আরও পড়ুন: জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ

নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশন দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ১৫ দিনের সময়সীমা দেবে। আগ্রহী সংস্থাকে নির্ধারিত ফরম (EO-1) ও প্রযোজ্য দলিলাদিসহ আবেদন জমা দিতে হবে।

যেসব সংস্থা নিবন্ধন পাবে না

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ব্যক্তি সংস্থার প্রধান নির্বাহী বা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হলে সংস্থাটি অযোগ্য বলে গণ্য হবে। আবেদনকারী সংস্থাকে হলফনামার মাধ্যমে প্রমাণ দিতে হবে যে তাদের কোনো সদস্য রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত নন।

জাতীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নাম হুবহু বা কাছাকাছি মিল থাকলে, যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে, সেই সংস্থাও অযোগ্য বিবেচিত হবে। তবে আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক সংস্থার ক্ষেত্রে লিখিত অনাপত্তিপত্র জমা দিলে তা বিবেচনা করা যেতে পারে।

আগে যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন দিয়েছে, তারা নিবন্ধনের সুযোগ পাবে না।

নিবন্ধনের মেয়াদ ও দায়িত্ব

প্রতিটি সংস্থার নিবন্ধনের মেয়াদ ৫ (পাঁচ) বছর। মেয়াদ শেষে নির্দিষ্ট শর্তে নবায়ন করা যাবে। নিবন্ধিত সংস্থাকে ৫ বছরের মধ্যে জাতীয় সংসদের অন্তত ১টি সাধারণ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের ৪টি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন ইসি সচিবালয়ে দাখিল করতে হবে। প্রতি ২ বছর অন্তর দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেওয়াও বাধ্যতামূলক।

পর্যবেক্ষকদের যোগ্যতা ও মোতায়েন

একজন পর্যবেক্ষকের যোগ্যতা ও মোতায়েন সংক্রান্ত মূল দিকগুলো হলো, অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বয়স ২১ বছর বা তদূর্ধ্ব হতে হবে। ন্যূনতম এইচএসসি বা সমমানের সনদ থাকতে হবে। কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হওয়া যাবে না। কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর সঙ্গে ব্যক্তিগত স্বার্থ থাকতে পারবে না। রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের কেউ পর্যবেক্ষক হতে পারবেন না। মোতায়েনের একক ইউনিট হবে উপজেলা, মেট্রোপলিটন থানা বা সংসদীয় এলাকা। পর্যবেক্ষক সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা বা ভোটার হতে পারবেন না।

নির্বাচনের আগের দিন, নির্বাচনের দিন ও পরের দিন—মোট ৩ দিনের জন্য পর্যবেক্ষক মোতায়েন করা যাবে। যদি কোনো সংস্থা নীতিমালা লঙ্ঘন করে বা রাষ্ট্রবিরোধী বা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে, তাহলে কমিশন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

প্রথমে ১০ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব চেয়ে নোটিশ পাঠানো হবে। জবাব অসন্তোষজনক হলে বা শুনানিতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করা হবে।

এই ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

নির্বাচন কমিশনের মতে, এই নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও জনগণের আস্থার উপযোগী হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতের অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।