পেন্টাগনকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশ দিলেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন থেকে রাশিয়া ও চীনের সমান ভিত্তিতে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরু করবে। বৃহস্পতিবার এশিয়া সফরের শেষ প্রান্তে এসে তিনি এই নির্দেশ দেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সিএনএন।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলের ফের বিমান হামলা, যুদ্ধবিরতি আবারও অনিশ্চিত
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। রাশিয়া দ্বিতীয়, আর চীন অনেক পিছিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে—তবে পাঁচ বছরের মধ্যে তারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।” তিনি আরও জানান, “অন্যান্য দেশের পরীক্ষামূলক কর্মসূচির কারণে আমি যুদ্ধবিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি, তারা যেন সমানভাবে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরু করে। প্রক্রিয়াটি অবিলম্বে শুরু হবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের তিন দশকেরও বেশি সময়ের পারমাণবিক নীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। ১৯৯২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছায় পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও প্রশাসন জানিয়েছিল—এই মুহূর্তে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
আরও পড়ুন: চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সমঝোতায় ট্রাম্প, শুল্ক কমিয়ে ৪৭ শতাংশে
বর্তমানে বিশ্বের তিন প্রধান পারমাণবিক শক্তিধর দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন—কেউই ১৯৯৬ সালের পর থেকে নতুন কোনো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ পরীক্ষা ১৯৯২ সালে, রাশিয়ার ১৯৯০ সালে এবং চীনের ১৯৯৬ সালে। তবে তারা নিয়মিতভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনকারী ক্ষেপণাস্ত্র, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ওয়ারহেড ডেলিভারি সিস্টেমের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে।
ট্রাম্পের ঘোষণার কিছুক্ষণ আগেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেন, রাশিয়া সফলভাবে তাদের পারমাণবিকচালিত ‘বুরেভেসনিক’ ক্রুজ মিসাইল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি ক্রুজ মিসাইল পরীক্ষা চালিয়ে জানিয়েছে, তারা তাদের ‘পারমাণবিক যুদ্ধ প্রস্তুতি’ আরও জোরদার করছে।
মার্কিন নৌবাহিনীও সেপ্টেম্বরে চারটি পারমাণবিক সক্ষম ট্রাইডেন্ট মিসাইল পরীক্ষা চালিয়েছে। এদিকে চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্তত তিনটি নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছে এবং ২০২৪ সালে প্রশান্ত মহাসাগরে একটি আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষা চালিয়েছে।
২০২৩ সালের এক সিএনএন প্রতিবেদনে দেখা যায়—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন তাদের পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে নতুন টানেল ও স্থাপনা নির্মাণ করছে। পরমাণু বিশেষজ্ঞ জেফ্রি লুইস মন্তব্য করেন, “সব ইঙ্গিতই বলছে, রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র খুব শিগগিরই পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করতে পারে।”
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে ট্রাম্পের এই ঘোষণা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বিশ্বে পারমাণবিক প্রতিযোগিতা ও সামরিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি করতে পারে।





