বাণিজ্যের সিংহভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল: গভর্নর

Sadek Ali
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশিত: ৮:৫৬ অপরাহ্ন, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৮:৫৬ অপরাহ্ন, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল, ভারী শিল্প, জ্বালানি অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। 

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রেডিসন ব্লুতে ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় গভর্নর এ মন্তব্য করেন।তিনি বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য সিঙ্গাপুর, দুবাই ও হংকংয়ের ন্যায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কানেক্টিভিটি বাড়াতে হবে। চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র।

আরও পড়ুন: বিদেশে পাচার অর্থ উদ্ধারে ৬৬,১৪৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ সংযুক্ত ও অবরুদ্ধ

এ অঞ্চল সমুদ্র, পাহাড় ও সমতলের এক অন্যন্য অঞ্চল। এ সম্ভাবনা পূর্ণ রূপ দিতে আর্থিক খাতের সুদৃঢ় ভূমিকা অপরিহার্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো উৎপাদনমুখী খাতে পর্যাপ্ত ও স্বল্পমূল্যের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা। চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এসএমই ও কৃষি ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে গভর্নর বলেন, এ বিষয়ে ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধানদের আরও আন্তরিক হতে হবে।বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমসমূহের অব্যবহৃত ফান্ড এ অঞ্চলের উপযুক্ত গ্রাহকের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অংশ হিসেবে প্রতিটি ব্যাংককে অন্তত একটি বিদ্যালয়ে আর্থিক সাক্ষরতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল লেনদেন ও ক্যাশলেস লেনদেনের উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আমদানি-রপ্তানি কাজ সহজতর করার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক লেনদেনের জন্য বাংলাদেশে সব পোর্ট ও এয়ারপোর্টে খুব দ্রুতই আরটিজিএস চালু করা হবে।

বাংলাদেশের প্রথম জেলা হিসেবে কক্সবাজার জেলাকে ক্যাশলেস জেলা হিসেবে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যেক নাগরিকের হাতে ছয়-সাত হাজার টাকার মধ্যে স্মার্ট ফোন পৌঁছাতে হবে। প্রান্তিক এলাকায় নারী এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। 

আরও পড়ুন: ছেঁড়া ও পোড়া নোট বদলে টাকা ফেরতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিমালা

বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় গেস্ট অব অনারছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া ও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম অফিসের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আশিকুর রহমান।সভায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয় বিষয়ক কনসেপ্ট পেপার উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল আমিন। 

কনসেপ্ট পেপারে চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক রূপান্তর ও ব্লু-ইকোনমি, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, কর্ণফুলী টানেল, মীরসরাই শিল্পনগর এবং মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা, ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি, সিএমএসএমই, রপ্তানি খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা প্রদান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই আর্থিক ও নীতি সহায়তা চট্টগ্রামের শিল্প, পর্যটন ও সামুদ্রিক সম্পদের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করে জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে তুলে ধরা হয়। 

ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের একদিকে রয়েছে আসিয়ানের সদস্যভুক্ত দেশসমূহের সমৃদ্ধ অর্থনীতি। অন্যদিকে রয়েছে বিশাল বঙ্গোপসাগরের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব। ফলে চট্টগ্রাম নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবিদা মোস্তফা নারীদের জন্য বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম, সফট ঋণের ব্যবস্থা এবং আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তাব দেন। 

সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীর হোসেন সোহেল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ, বিজিএমইএ, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, বিকেএমইএ, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, কমিশনার অব কাস্টমস, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশান, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়াডার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন, এসএমই/কৃষি উদ্যোক্তা/নারী উদ্যোক্তা, বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান চেম্বার, বিভিন্ন ব্যাংকে আঞ্চলিক প্রধান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।