এলজিইডির দুই প্রকল্পের ‘লঞ্চিং কর্মশালা’ অনুষ্ঠিত

এলজিইডি ভবনে কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী মিলনায়তনে দুইটিপ্রল্পের যৌথ আড়ম্বরপূর্ণ লঞ্চিংওয়ার্কশপ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার ওয়ার্কশপের উদ্বোধনীপর্বে প্রধানঅতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্তানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইচিগুচি তমোহিদে, চীফ রিপ্রেজেন্টেটিভ জাইকা বাংলাদেশ অফিস ও ড. মুহাঃ শেরআলী, অতিরিক্ত সচিব(উন্নয়ন) স্থানীয় সরকার বিভাগ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আলী আখতার হোসেন।
আরও পড়ুন: একটি বিশেষ দল গণতান্ত্রিক চর্চাকে ব্যাহত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে : ডা. রফিক
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মুজাক্কা জাহের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন এলজিইডির এসসিআরআইডিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুস সাত্তার ও এলজিইডির আইইউজিআইপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল বারেক। এসময় এলজিইডির কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র ও কর্মকর্তাগণ, মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প এলাকার এলজিইডির কর্মকর্তা ও প্রকল্পের পরামর্শকগন উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্প দুইটিহচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্পএবং নগরপরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়নপ্রকল্প। প্রথম প্রকল্পটি মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী এলাকায় জাপান সরকারের বাংলাদেশকে কেন্দ্রে রেখে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া রউন্নয়নে বিগ-বি উন্নয়ন কৌশলের অর্ন্তভূক্ত। ‘মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগ’ ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎপ্রকল্প, গভীর সমদ্র্র বন্দরসহ প্রায় ৩৫টি প্রকল্পের ব্যপক উন্নয়নের ফলে উক্ত এলাকায় যে বহুল পরিমাণে শ্রমিক সমাগম ঘটবে তাদের বাসস্থান ও নাগরিক সুবিধা প্রানের জন্য প্রাথমিক অবকাঠামো উন্নয়নকরা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এছাড়াপার্শ্ববর্তী দেশ হতে টেকনাফ, উখিয়ায় আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের যে মানবিকবিপর্যয় তৈরি হয়েছে তা মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ ও এ প্রকল্পেঅন্তর্ভুক্ত। এ সকল অবকাঠামো মহেশখালী উপজেলা ও পৌরসভা, চকোরিয়াউপজেলা ও পৌরসভা, টেকনাফ উপজেলা ও পৌরসভা, এবং উখিয়া ও কক্সবাজার সদর উপজেলায় নির্মাণ করা হবে। এরজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৪৪ কোটি টাকা যার ৬৮.৫% জাইকা ওডিএ ঋণ সহায়তা এবং ৩১.৫% বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন হবে। সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট , মার্কেট, পার্ক, সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ, টাউনশিপ উন্নয়ন, পানি সরবরাহের জন্য গভীর নলকুপ স্থাপন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, প্রাইমারিড্রেন ও বন্যানিয়ন্ত্রণ ও সেচসুবিধার জন্য অবকাঠামো নির্মাণে, পৌরসভার ও এলজিইডির দক্ষতা ও উন্নয়নে উক্ত অর্থ ব্যয়করাহবে। প্রকল্পটি মে ২০২৩ তারিখ প্রশাসনিক অনুমোদন লাভ করে এবং ডিসেম্বর ২০২৮ তারিখ সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত। প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়নে ০.৭% সুদ হারে জাইকার ঋণ সুবিধায় ১০ বৎসর গ্রেসপিরিয়ডসহ ৩০ বৎসরে মেয়াদে পরিশোধের শর্তে ঋণ গ্রহণ করা হয়।
আরও পড়ুন: গুমের শিকার ৭ পরিবারের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করল বিএনপি
দ্বিতীয় প্রকল্পটি, নগরপরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। এ প্রকল্পটি এডিবি ও দাতা সংস্থা এএফডির আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পিত, অর্ন্তভুক্তিমূলক, এবং টেকসই নগরায়ন এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এরজন্য সারা দেশের ৬৩ পৌরসভায় 'ফলাফলের ভিত্তিতে ঋণ প্রদান' কৌশলেরমাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিচালন দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়াও ২৫টি পৌরসভার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর জন্য আর্থিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০২মিলিয়ন ইউএস ডলার। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১০০ মিলিয়ন, এডিবি ৩০২ মিলিয়ন, এএফডি ২০০মিলিয়ন আর্থিক ঋণ সহায়তা প্রদান করবে।
প্রকল্পটি ২০ জুন ২০২৩ অনুমোদন লাভ করে এবং ৩০ জুন ২০২৮ সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত। কমপক্ষে ৯০০ কিমি ড্রেন, ১৫০০ কিলোমিটার সড়ক এই প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও নির্মাণ কাজে পৌরসভার ৫০ ভাগ নারীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে দরিদ্রজনবসতিতে উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পটির কাজ ইতমধ্যে এগিয়ে চলছে। মন্ত্রী ও প্রধান প্রকৌশলী এবং দাতা সংস্থার সদস্যরা প্রকল্পটি এগিয়ে চলায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এডিবি, এফডিএর বিশেষ অতিথিগন অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের উপর জোর দেন । আইইউজিআইপি প্রকল্পে দরিদ্রদের জন্য অবকাঠামো নির্মাণের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদেরকে উন্নয়ন সুবিধার বাইরে রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এছাড়া পরিচালনা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জলবায়ু সহনশীল প্রকল্প নির্মাণ টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত বলেও উল্লেখ করেন। জাইকার প্রতিনিধি আয়োজিত অনুষ্ঠানের জন্য এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। তিনি জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা, কাজের উচ্চমান, নিয়মিত মনিটরিং ও সময়মত প্রকল্প শেষ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রধান প্রকৌশলী সকল দাতা সংস্থাকে ধন্যবাদ জানান এবং তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহবান জানান। তিনি জানান এলজিইডি তার সামর্থ্য অনুযায়ী এ প্রকল্প সফলভাবে সমাপ্ত করার বিষয়ে আশাবাদী। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মো. তাজুল ইসলাম বলেন আমরা যে ঋণ গ্রহন করি তা ফেরত দিতে হবে। যদি ঋণের ব্যবহার যথযথ না হয় তবে দেশ ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই কাজের গুণগত মান, সময়মত প্রকল্প সমাপ্তি এবং উৎপাদনমুখী অবকাঠামো নির্মাণ করার বিষয়ে এলজিইডিকে তাগিদ দেন তিনি। পরিশেষে প্রকল্প দুইটির সফলতা কামনা করে শুভ উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।