অভিযানে লার্ভা পাওয়ায় এক লক্ষ টাকা জরিমানা

এডিসের লার্ভা পেলে ছাড় দেওয়া হবে না: মেয়র আতিক

Abid Rayhan Jaki
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:০১ অপরাহ্ন, ০৬ মে ২০২৪ | আপডেট: ৬:০৩ পূর্বাহ্ন, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বেশ কিছুদিন ধরে টানা রোদ ছিল এবং এখন আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কাল রাতে বৃষ্টি হয়েছে আবার আজকে রোদ। রোদ ও বৃষ্টি এমন আবহাওয়ায় জমা পানিতে এডিসের লার্ভা জন্মায়। তাই এই সময়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বর্ষা শুরুর আগে থেকেই আমরা একযোগে ৫৪টি ওয়ার্ডে মাসব্যাপী জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান শুরু করেছি। সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে আছে, অভিযান করছে। এডিসের লার্ভা পেলে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।

সোমবার (৬ মে) রাজধানীর কুড়িল প্রগতি সরণিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও মশক নিধন অভিযান শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী প্রধানের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই: আইএসপিআর

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, 'সিটি কর্পোরেশন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছে, লার্ভিসাইডিং ও এডাল্টিসাইডিং করছে। জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি আমরা। এডিসের লার্ভা পেলে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানা করছে। আমাদের উদ্দেশ্য জেল জরিমানা করা না। আমাদের উদ্দেশ্য হল ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। কিন্তু সবাই সচেতন না হলে সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।’

এসময় ডিএনসিসি মেয়র ট্রাকে উঠে এডিস মশার উৎসস্থল-গাড়ীর পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে জনগণকে সচেতন করেন এবং প্রগতি সরণি এলাকায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে জনগণের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন।

আরও পড়ুন: দুর্নীতির তদন্তে সাবেক গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের ব্যাংক হিসাব তলব

ডিএনসিসি মেয়র কয়েকটি বাড়ি পরিদর্শন করেন। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় মেয়রের উপস্থিতিতে একটি বাড়িতে এক লাখ টাকা জরিমানা ও অন্য আরেকটি বাড়িতে নিয়মিত মামলা দায়ের করেন ডিএনসিসির অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল বাসেত।

মেয়র বলেন, 'বিশেষজ্ঞদের মতে খালের ও ড্রেনের ময়লা পানিতে এডিস মশা জন্মায় না। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা জন্মায়।  যেসকল পরিত্যক্ত দ্রব্যাদিতে পানি জমে এডিসের লার্ভা জন্মাতে পারে সেসব দ্রব্যাদি সিটি কর্পোরেশন কিনে নিচ্ছে। ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাপ, দইয়ের কাপ এগুলো যত্রতত্র না ফেলে ডিএনসিসির কাউন্সিলরদের কাছে জাম দিন নগদ টাকা গ্রহণ করুন। পুরোনো টায়ার, কমোড, রঙের কৌটা এগুলো ছাদে বা বারান্দায় না রেখে আমাদের কাউন্সিলরদের কাছে জমা দিয়ে টাকা নিন।'

এসময় ডিএনসিসি মেয়র নগদ অর্থের বিনিময়ে নির্ধারিত মূল্যে এসব পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি কিনে নেন। 

উল্লেখ্য, পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি ও সেগুলো সংগ্রহের জন্য মূল্য তালিকা: চিপসের প্যাকেট বা সমজাতীয় প্যাকেট (প্রতি পিস) ১ টাকা, আইসক্রীম এর কাপ, ডিসপেজেবল গ্লাস ও কাপ (প্রতি পিস) ১ টাকা, ডাবের খোসা (প্রতি পিস) ২ টাকা, কন্ডেন্স মিল্ক এর কৌটা (প্রতি পিস) ২ টাকা, মাটি, পাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন এর (প্রতি পিস) ৩ টাকা, অন্যান্য পরিত্যক্ত পাস্টিকের দ্রব্যাদি (প্রতি কেজি) ১০ টাকা, পরিত্যক্ত টায়ার (প্রতি পিস) ৫০ টাকা, পরিত্যক্ত পলিথিন (প্রতি কেজি) ১০ টাকা, পরিত্যক্ত স্যানিটারী ওয়্যার কমোড, বেসিন ইত্যাদি (প্রতি পিস) ১০০ টাকা।

মেয়র বলেন, ডিএনসিসি'র সকল ওয়ার্ডে একযোগে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রত্যেক কাউন্সিলরকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলররা নিজ নিজ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ, মসজিদের ইমাম, স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে করনীয় বিষয়ে মতবিনিময় সভা ও র্যালি আয়োজন করবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে লিফলেট বিতরণ করবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,  মসজিদ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রচারণার ব্যবস্থা করবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, 'নির্দেশনা অনুযায়ী কাউন্সিলররা জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করবেন। কোন কোন জায়গার স্বচ্ছ পানি জমে এডিস মশার লার্ভা জন্ম নেয় এসব বিষযয়ে তারা জনগণকে সচেতন করবেন। আমাদের চ্যালেঞ্জ কিন্তু অনেক। একদিকে তাপদাহ, অন্যদিকে এডিস মশা, আরেক দিকে সিটি কর্পোরেশনের রোপন করা গাছগুলোকে রক্ষা করা। আমরা মনে করি, কোনো চ্যালেঞ্জই চ্যালেঞ্জ মনে হবে না, যদি জনগণ আমাদের সাথে এগিয়ে আসে। অফিস দোকান ও যার যার বাসাবাড়ি যদি নিজেরা পরিষ্কার করি তাহলে এডিস মশা জন্মাবে না।

কুড়িল এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক র্যালি এবং লিফলেট বিতরণ শেষে কুড়িল ব্রিজের নিচে রিকশাচালকদের মাঝে বিনামূল্যে ছাতা, পানির বোতল ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। 

মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি এলাকার ৩৫ হাজার রিকশা চালকদের বিনামূল্যে ১টি করে ছাতা, ১২ প্যাকেট খাবার স্যালাইন ও একটি হাফ লিটার পানির কন্টেইনার দেওয়া হচ্ছে। তীব্র দাবদাহে রিকশা চালক ভাইদের খুব কষ্ট হয়৷ প্রচন্ড রোদে তারা যদি অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে পুরো পরিবারের জন্য অনেক সমস্যা। রোদের কারণে তারা যদি রিকশা চালাতে না পারে, তারা যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তাদের পরিবার কিন্তু চলতে পারবে না। কারণ অনেক রিকশা চালকের দৈনিক ইনকামের উপরে তাদের পরিবার চলে। তাই তীব্র দাবদাহে তাদের কষ্টের বিষয় চিন্তা করে এই উদ্যোগ নিয়েছি।

এসময় অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য শবনম জাহান শিলা এবং হাছিনা বারী চৌধুরী, ডিএনসিসি'র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনা. ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান, ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ ইসহাক মিয়া, ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ জাকির হোসেন এবং সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর আমেনা বেগম প্রমুখ।