দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের সিদ্ধান্ত, উচ্চকক্ষে ১০০ আসন পিআর পদ্ধতিতে মনোনয়ন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশের আইনসভা পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নতুন গঠিত উচ্চকক্ষে থাকবে ১০০টি আসন, যেখানে সদস্যরা প্রতিনিধিত্বমূলক (পিআর) পদ্ধতিতে মনোনীত হবেন। দলগুলোর নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ অনুযায়ী এই মনোনয়ন নির্ধারিত হবে।
বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংলাপের ২৩তম দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় এই সিদ্ধান্ত জানায় কমিশন।
আরও পড়ুন: ইসির প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ এনসিপিসহ ১৬ দল
দীর্ঘ আলোচনার পরও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় উচ্চকক্ষ গঠন ও কাঠামোর দায়িত্ব কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়। কমিশন সদস্যদের আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়।
কমিশনের প্রস্তাবনায় বলা হয়, উচ্চকক্ষের নিজস্ব আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবে না। তবে অর্থবিল ব্যতীত সকল আইনপ্রণয়ন প্রক্রিয়ায় উচ্চকক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
আরও পড়ুন: পলাতক ৪০ পুলিশ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার
নিম্নকক্ষে উত্থাপিত বিল উচ্চকক্ষে আলোচনার জন্য পাঠানো হবে এবং তা এক মাসের মধ্যে অনুমোদন বা সংশোধন করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না দিলে সংশ্লিষ্ট বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদিত বলে গণ্য হবে।
উচ্চকক্ষ যদি কোনো বিল প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে তা সংশোধনের সুপারিশসহ নিম্নকক্ষে পাঠানো হবে। নিম্নকক্ষ এই সংশোধন আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ কিংবা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে। উভয় কক্ষে পাস হওয়া বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
এই প্রস্তাবনার বিরোধিতা করেছে বিএনপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, এনডিএম এবং এলডিপি। তারা প্রস্তাবিত ভোটের শতকরা হারে আসন বণ্টন পদ্ধতির পরিবর্তে, নিম্নকক্ষে দলীয় আসনের ভিত্তিতে আসন বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে। এছাড়া উচ্চকক্ষের এখতিয়ার নিয়েও তারা আপত্তি তোলে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, দেশের বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি পৃথক উচ্চকক্ষ অপ্রয়োজনীয় এবং ব্যয়বহুল।
বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলন, এনসিপি সহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং আইয়ুব মিয়া।