৫ আগস্ট হঠাৎ কেন ভ্রমণ শোকজ কেন্দ্রের
এনসিপির ৫ শীর্ষ নেতার কক্সবাজার ভ্রমণ ঘিরে নানা রহস্য

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ৫ শীর্ষ নেতার হঠাৎ ও অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে কক্সবাজার ভ্রমণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে। গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির এই দিনে কোনো কর্মসূচি ছাড়াই দল বা সরকারকে না জানিয়ে কেন এই গোপনীয় ভ্রমণ, তা নিয়ে নানা কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তাঁরা রীতিমতো হোটেল কক্ষে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। হোটেলের চারপাশে সাংবাদিক, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় দলীয় কর্মীদের ভিড়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, খালেদ সাইফুল্লাহ এবং তাঁর স্ত্রী ডা. তাসনিম জারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটে কক্সবাজার যান। এরপরই নানা গুঞ্জন শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয় যে তাঁরা বাংলাদেশে কর্মরত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাথে গোপন বৈঠকে বসছেন। যদিও জানা যায়, হাস বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন। নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী ও তাসনিম জারা এই বিষয়টি গুজব বলে উড়িয়ে দেন এবং জানান যে তাঁরা সমুদ্রসৈকত এলাকায় ভ্রমণে গেছেন।
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নিবার্চন: সিইসি
সারাদিন ও রাত পর্যন্ত কৌতূহল এড়াতে তাঁরা হোটেল থেকে বের হননি। তবে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার গভীর রাতে প্রায় দেড়টার দিকে তাঁরা হোটেল থেকে বের হয়ে তিন ভাগে সমুদ্রসৈকতে ঘোরাফেরা করে উপভোগ করেন। রাত ৩টার দিকে তাঁরা আবার হোটেলে ফিরে আসেন। তাঁরা স্থানীয় প্রশাসন বা দলীয় নিরাপত্তা চাননি। এমনকি তাঁদের কর্মসূচির কোনো তথ্যও প্রশাসনকে জানানো হয়নি।
এনসিপির এই পাঁচ শীর্ষ নেতা বুধবার (৬ আগস্ট) বেলা দেড়টার দিকে একটি ভিআইপি সাদা রঙের গাড়িতে করে হোটেল সি-পার্ল ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন: ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন হজযাত্রীরা
সূত্র জানায়, এরপর তাঁরা কক্সবাজারের কলাতলীর শালিক রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খান এবং বিকেল সাড়ে ৩টায় সৈকত সাগর সংলগ্ন হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজে অবস্থান নেন। তবে তাঁরা কখন কক্সবাজার ছেড়ে যাচ্ছেন, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, এনসিপির নেতারা মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার আসেন। এরপর তাঁরা ইনানীর সি-পার্ল বিচ রিসোর্টের (রয়েল টিউলিপ) ৫০০১, ৫০০২ ও ৫০০৩ নম্বর কক্ষে অবস্থান নেন। তিনি আরও জানান, তাঁরা ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার না করে সাধারণ যাত্রীদের গেট দিয়ে বের হয়ে যান। সূত্রটি আরও বলেছে, তাঁদের সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে সারজিস আলমের স্ত্রীও রয়েছেন।
এনসিপি নেতাদের বহনকারী গাড়িচালক নুরুল আমিন জানান, তাঁর গাড়িতে করে হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীসহ দুই নারী (সারজিস আলমের স্ত্রী এবং তাসনিম জারা) হোটেল সি-পার্লে যান। তাঁর গাড়িটি পূর্বনির্ধারিত ভাড়া করা ছিল না; বিমান থেকে নেমেই তাঁরা সরাসরি ওই গাড়িতে করে হোটেলে চলে যান।
এরই মধ্যে, গণ-অভ্যুত্থান দিবসে বিনা নোটিশে কক্সবাজার যাওয়ায় হাসনাত-সারজিসসহ এনসিপির ৫ শীর্ষ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দলের যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এনসিপির ৫ নেতার কাছে পাঠানো এই নোটিশে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেনের কাছে সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।