আপনার মোবাইলই আপনার অফিস: স্মার্টফোন দিয়ে ব্যবসা চালানোর ৭ উপায়

Any Akter
পারভেজ আহমেদ, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তা
প্রকাশিত: ৬:১৩ অপরাহ্ন, ০৯ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ৮:০৯ অপরাহ্ন, ০৯ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

আজকের ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন শুধু কল-মেসেজ কিংবা ভিডিও দেখার যন্ত্র নয়এটি হতে পারে আপনার ব্যবসার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। বাংলাদেশে প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার এমন এক সময় এনে দিয়েছে, যেখানে ছোট-বড় সবাই মোবাইল ফোন দিয়েই কাজ চালাচ্ছে।

আমার নিজের ১২ বছরের ব্যবসা অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যিনি মোবাইলকে সঠিকভাবে কাজে লাগান, তার জন্য সাফল্যের দরজা অনেক দ্রুত খুলে যায়। আর এই কথাটির জীবন্ত প্রমাণ সাদিয়াস কেকারিযার উদ্দোক্তা আমার শ্যালিকা সাদিয়া সারিকা যিনি মাত্র একটি ফোন দিয়ে গড়ে তুলেছেন হোমমেড কেক ব্যবসা যা থেকে তার প্রতি মাসে নেট আয় ৬০,০০০ টাকা।

আরও পড়ুন: গ্রাম থেকে গ্লোবাল-ফ্রিল্যান্সিং শিখে বদলে ফেলুন নিজের ভাগ্য

এবার জেনে নিন, সেই ৭টি উপায় যা সারিকার মতো আপনাকেও বদলে দিতে পারে।

. ইনভয়েস তৈরি আর হিসাব-নিকাশনিজের অর্থনৈতিক টিম

আরও পড়ুন: সাইবার হামলার আশঙ্কা: সতর্কতা জারি করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনেক সময় ছোট ব্যবসায়ীরা হিসাব-নিকাশে ভুল করেন, যা পরে বড় সমস্যা হয়। কিন্তু আজকের দিনে গুগল ডকস বা ফ্রি অ্যাপস দিয়ে মোবাইল থেকেই খুব সহজে ইনভয়েস তৈরি করতে পারেন, বিক্রয়-ক্রয়ের হিসাব রাখতে পারেন। এটা যেন আপনার নিজের আর্থিক টিম। ভুল কমবে, লাভ-ক্ষতি স্পষ্ট হবে, আর ব্যবসায় সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। সারিকা শুরুতে অর্ডারের নোট কাগজে লিখতেন, কিন্তু পরে গুগল শিটস ফ্রি ইনভয়েস অ্যাপ ব্যবহার শুরু করেন। এখন তিনি প্রতিটি বিক্রয়ের রেকর্ড রাখেন, মাসের শেষে নিজের মুনাফা স্পষ্ট দেখতে পান।

. গ্রাহক সম্পর্ক গড়ে তোলাফোনটি শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বন্ধুত্বের সেতু

গ্রাহকের বিশ্বাসই ব্যবসার প্রাণ। ওয়াটসঅ্যাপ কিংবা ফেসবুক মেসেঞ্জারে গ্রাহকের প্রশ্নের দ্রুত আন্তরিক উত্তর দিন। মনে রাখবেন, আপনার দ্রুত আন্তরিক সাড়া তাকে ব্যবসার একজন স্থায়ী অংশীদার বানাতে পারে। সারিকা প্রতিটি অর্ডারের পর গ্রাহককে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানান, মেসেঞ্জারে জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠান। ফলাফল? অনেকেই এখন বারবার তার কাছেই কেক অর্ডার দেন, এমনকি অন্যদেরও সুপারিশ করেন।

. সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের গল্প শেয়ার করামানুষের সাথে সংযোগ

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি বা ভিডিও আপলোড করাটা শুধু বিক্রির জন্য নয়, এটা আপনার ব্র্যান্ডের গল্প বলা। যেভাবে আপনার পণ্য তৈরি হয়, পেছনের শ্রম, আপনার প্রেরণাএসব মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিন। ফেসবুকে শুধু কেকের ছবি নয়, সারিকা মাঝে মাঝে নিজের রান্নাঘরের মুহূর্ত, নতুন রেসিপি শেখার গল্পও শেয়ার করেন। মানুষ তার এই মানবিক দিক দেখেই ব্র্যান্ডের প্রতি আরও অনুরাগী হয়েছে। যারা আপনার গল্প জানে, তারাই হয় আসল গ্রাহক।

. অনলাইন পেমেন্টনিরাপদ সহজ লেনদেনের পথ

গ্রাহকদের সুবিধার কথা ভাবুন। বিকাশ, নগদ বা ব্যাংকিংয়ের মোবাইল অ্যাপে দ্রুত এবং নিরাপদে পেমেন্ট নেওয়া যায়। এতে দুই পক্ষই সন্তুষ্ট থাকে, আর আপনিও অগ্রসর হতে পারেন চিন্তামুক্তভাবে। এখন মুহূর্তেই স্মার্টফোন দিয়েই টাকা আদায় করা যায়, যা আগে ছিল স্বপ্ন। শুরুতে সারিকা কেবল ক্যাশ অন ডেলিভারি নিতেন। পরে বিকাশ নগদ পেমেন্ট চালু করেন। এখন গ্রাহকরা আগেই টাকা পাঠিয়ে দেন, আর সারিকাও ডেলিভারি নিয়ে বেশি নিশ্চিন্ত থাকেন।

. দূর থেকে কাজ পরিচালনানিজের সময় শক্তি বাঁচান

আজকের দিনের অন্যতম বড় উপকারিতা হলো যেকোনো জায়গা থেকে কাজ করা যায়। গুগল মিট, জুমের মাধ্যমে দলের সঙ্গে মিটিং করুন, পরিকল্পনা সাজান। সারিকার ডেলিভারি বয়কে নির্দেশনা, কুরিয়ার বুকিং, এমনকি কাঁচামাল অর্ডারসবই তিনি ফোনে করেন। এতে ভ্রমণের সময় আর খরচ কমে, আর শুধু নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য বেশি সময় পান তা নয় বরং নতুন রেসিপি নিয়ে কাজ করার সময় পান।

. ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসে বিক্রিসীমাহীন সম্ভাবনার বাজার

ফ্রিল্যান্সার কিংবা অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন শপিফাই, ফেসবুক মার্কেটপ্লেস বা নিজের ওয়েবসাইট, এসব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আপনার পণ্য বিশ্বজুড়ে পৌঁছান। শুধু ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ না থেকে সারিকা এখন ইনস্টাগ্রাম ফুড ডেলিভারি অ্যাপেও পণ্য বিক্রি শুরু করেছেন। এতে গ্রাহক বেড়েছে দ্বিগুণ, আর ব্র্যান্ডের পরিচিতিও ছড়িয়ে পড়েছে।

. নতুন দক্ষতা অর্জননিজের সেরা সংস্করণ তৈরি করা

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখতে হবে। ইউটিউব, উডেমি, কোরসেরা থেকে মোবাইলে শিখুন ডিজিটাল মার্কেটিং, ফটোগ্রাফি, ভিডিও এডিটিং বা অন্য যে কোনো স্কিল। নিজের দক্ষতা বাড়ানো মানে ব্যবসার ভবিষ্যৎ শক্তিশালী করা। সারিকা ইউটিউব থেকে ফুড ফটোগ্রাফি শিখেছেন। এখন তার কেকের ছবি এত সুন্দর হয় যে অনেক সময় ছবি দেখেই মানুষ অর্ডার করে। নতুন স্কিল তাকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রেখেছে।

শেষ কথা

আপনার হাতের স্মার্টফোনেই লুকিয়ে আছে কোটি কোটি টাকার সুযোগ। আপনার প্রয়োজন শুধু একটু পরিকল্পনা, নিয়মিত শেখা আর ধৈর্য্য। আজ থেকেই আপনার মোবাইলকে অফিস বানিয়ে দিন, আর আপনার ব্যবসার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়িত হতে দেখুন।